জাতীয়

১৬ বছরেও স্থানান্তর হয়নি কারওয়ান বাজার এবার হবে?

শাহজাহান মোল্লা

ঢাকা, ২৮ ফেব্রুয়ারি – কারওয়ানবাজারের কাঁচাবাজার রাজধানীর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার প্রকল্প হাতে নেওয়া হয় ২০০৬ সালে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ঢাকার প্রবেশদ্বারে তিনটি কাঁচাবাজারও নির্মাণ করা হয়। কিন্তু ১৬ বছর পার হলেও একটি দোকানও স্থানান্তর হয়নি। এ দফায় স্থানান্তর হবে কিনা, তা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তবে সিটি করপোরেশনের দাবি- এবার আর কোনোভাবেই সময় পার করা যাবে না। প্রয়োজনে কারওয়ানবাজারে পরিবহন ঢুকতে দেওয়া হবে না।

রাজধানীর কারওয়ানবাজারে দোকান আছে ১ হাজার ৮০৪টি। এর মধ্যে ৮৯৫ দোকান যাবে যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারে। গাবতলীতে যাবে ৩৬০। বাকি ৫৪৯টি দোকান যাবে আমিনবাজারে। ইতোমধ্যে আমিনবাজার প্রস্তুত করা হয়েছে। যাত্রাবাড়ীর কাঁচাবাজারটির মেরামতকাজের ৭৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দাবি- আগামী এপ্রিলের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন হবে। তখন কারওয়ানবাজারের দোকানগুলো স্থানান্তর করা যাবে।

স্থানান্তরের পর কারওয়ানবাজারে একটি বাণিজ্যিক কেন্দ্র নির্মাণ করবে সরকার। মতিঝিলের মতো কারওয়ানবাজার হবে বাণিজ্যিক কেন্দ্র। সেখানে ব্যাংক-বীমাসহ বড় বড় করপোরেট অফিস বানানো হবে। আগে থেকেই বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশন (টিসিবি), কুটিরশিল্পসহ বেশ কিছু সরকারি দপ্তরের প্রধান কার্যালয় কারওয়ানবাজারে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরও অনেক দিন

কারওয়ানবাজার স্থানান্তরের কার্যক্রম ঝুলে আছে। তবে এবার জট খুলে সক্রিয় হয়েছে সেই কার্যক্রম। গত ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে একটি সভা হয়।

জানা গেছে, সরকারের উচ্চমহলের নির্দেশ রয়েছে- ঢিলেমি না করে দ্রুত কারওয়ানবাজার স্থানান্তর করতে হবে। প্রয়োজনে কারওয়ানবাজারের ব্যবসায়ীদের গ্যাস-বিদ্যুতের মতো সব সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিতে হবে। মূলত এমন নির্দেশনার পর সিটি করপোরেশন আদাজল খেয়ে নেমেছে।

ডিএসসিসি জানিয়েছে, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার মেরামতের কাজ শেষ। এখন ফিনিশিংয়ের কাজ চলছে। কারওয়ানবাজার থেকে কোনো দোকান মালিক চাইলে এ মুহূর্তে স্থানান্তর করা সম্ভব। তবে পুরোপুরি কাজ শেষ হবে ঈদুল ফিতরের পর।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (সিটি করপোরেশন-১) মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম বলেন, ‘কারওয়ানবাজার স্থানান্তরের বিষয়ে সিটি করপোরেশনগুলো কাজ করছে। ত্বরিতগতিতে কাজ চলছে।’

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার সম্পর্কে ডিএসসিসির প্রধান প্রকৌশলী সালেহ আহম্মেদ বলেন, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার মেরামতের কাজ প্রায় শেষ। খুব শিগগির এটি হস্তান্তর করা যাবে।

এ বিষয়ে ডিএনসিসির (অঞ্চল-৫ কারওয়ানবাজার) নির্বাহী কর্মকর্তা (উপসচিব) মোতাকাব্বীর আহমেদ বলেন, সরকারের উচ্চমহলের নির্দেশ আছে- কারওয়ানবাজার স্থানান্তর করতে হবে। যেসব মার্কেটে স্থানান্তর করা হবে, সেগুলো প্রায় প্রস্তুত। যাত্রাবাড়ীতে ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হয়ে গেছে। খুব শিগগির স্থানান্তর হবে।

কারওয়ানবাজার স্থানান্তরের বিষয়টি মূলত আটকে ছিল যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজার নির্মাণের ওপর। কারণ কারওয়ানবাজারের প্রায় অর্ধেক দোকান সেখানেই নেওয়া হবে। যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারটি যেহেতু ডিএসসিসির অধীন, তাই তাদের সিদ্ধান্তের বাইরে কাজ করতে গিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়। জটিলতা দূর করতে স্থানীয় সরকার বিভাগের সাবেক সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ২০২১ সালের ২২ জুন দুই সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই বৈঠকে জটিলতার বিষয়টি বেরিয়ে আসে। তখন ডিএসসিসির পক্ষ থেকে তৎকালীন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহম্মদ জানান, যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের সম্পূর্ণ নির্মাণ ও মেরামত করতে সিটি করপোরেশনের প্রায় ৪০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তবে এই ব্যয় বহন করতে রাজি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন।

এ বিষয়ে ঢাকা ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি অনিষ্পন্ন রয়েছে। যাত্রাবাড়ী পাইকারি কাঁচাবাজার নির্মাণকাজে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের নিজস্ব তহবিল থেকে ৭ কোটি ৫৪ লাখ ব্যয় হয়। এ অর্থ উত্তর সিটি করপোরেশনের অনুকূলে পরিশোধ সাপেক্ষে মার্কেটটি হস্তান্তরের জন্য ডিএনসিসির অবস্থান ছিল। বর্তমানে ডিএসসিসির পক্ষ থেকে এ অর্থ পরিশোধ করা সম্ভব না হলেও আবশ্যিকভাবে কাঁচাবাজারটিতে কারওয়ানবাজারের ৮৯৫ দোকান স্থানান্তর হতে হবে।

যানজট কমাতে এবং বর্ধিত জনসংখ্যার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৬ সালের জুলাইয়ে ‘ঢাকা শহরে তিনটি কাঁচাবাজার নির্মাণ প্রকল্প’ গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১০ সালের জুনে। প্রথমে প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ২০৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। সময়ের সঙ্গে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়েছে। প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩১ কোটি টাকায়। সঙ্গে বাড়ে সময়। এখন প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩৫০ কোটি টাকা।

সূত্র: আমাদের সময়
আইএ/ ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Back to top button