রংপুর ২৬ ফেব্রুয়ারি – শিক্ষক নিয়োগসংক্রান্ত বিধি ভেঙে দুই শিক্ষক নেতাকে সহযোগী অধ্যাপক (গ্রেড-৪) বানাতে নানা আয়োজন করছে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) কর্তৃপক্ষ। শিক্ষকরা হলেন লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের প্রচার, প্রকাশনা ও দপ্তর সম্পাদক সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বেরোবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ম-ল আসাদ।
তারা দুজনই আবার নিয়োগসংক্রান্ত প্ল্যানিং কমিটির সদস্য। তারা নিজেরাই নিজেদের যোগ্য ঘোষণা করেছেন। আগামীকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বাছাই বোর্ডের দিন ধার্য করা হয়েছে।
গতকাল রাতে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হাসিবুর রশীদ কথা বলতে রাজি হননি। জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক মোহাম্মদ আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করার কথা বলেন তিনি। জনসংযোগ উপপরিচালক বলেন, ‘বিধি ভেঙে প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য ডাকা হয়েছে কিনা, আমার জানা নেই। প্ল্যানিং কমিটির সদস্যরা ভালো বলতে পারবেন।’
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের ২৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি বিভাগে অধ্যাপক ও সহযোগী অধ্যাপকের শূন্যপদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে একজন অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপক, লোকপ্রশাসন বিভাগে দুজন সহযোগী অধ্যাপক ও ইংরেজি বিভাগে একজন সহযোগী অধ্যাপকের পদ রয়েছে। গত বছরের ২২ নভেম্বর এসব পদে আবেদনের শেষ সময় ছিল।
সহযোগী অধ্যাপক পদে আবেদনের যোগ্যতা চাওয়া হয় সংশ্লিষ্ট বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) ও অন্যূন দ্বিতীয় শ্রেণির স্নাতকোত্তর ডিগ্রিসহ পিএইচডি এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে চার বছরসহ কমপক্ষে সাত বছরের সক্রিয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা। এমফিল ডিগ্রিধারীদের ক্ষেত্রে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পাঁচ বছরসহ মোট ১০ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তবে অভ্যন্তরীণ প্রার্থীদের ক্ষেত্রে একটি শর্ত শিথিলযোগ্য।
জানা গেছে, লোকপ্রশাসন বিভাগের দুটি সহযোগী অধ্যাপকের শূন্যপদে চারজন প্রার্থী আবেদন করেছেন। তাদের তিনজন একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। তারা হলেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মো. জুবায়ের ইবনে তাহের, মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদ এবং সাব্বীর আহমেদ চৌধুরী। বেরোবির শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা অনুযায়ী তাদের কেউই সহযোগী অধ্যাপকের শূন্যপদে আবেদনের যোগ্য নন। তবে অভ্যন্তরীণ শিক্ষক পদ আপগ্রেডেশন নীতিমালা অনুযায়ী শুধু জুবায়ের ইবনে তাহের সহযোগী অধ্যাপক পদে আবেদন করার যোগ্যতা অর্জন করেছেন।
আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদের সর্বসাকল্যে শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা আট বছর এক মাস নয় দিন এবং সাব্বীর আহমেদ চৌধুরীর মোট চাকরিকাল আট বছর এক মাস আট দিন। তাদের কারোরই পিএইচডি বা এমফিল ডিগ্রি না থাকায় বর্তমান অভিজ্ঞতায় তারা সহযোগী অধ্যাপক পদে আবেদনের যোগ্য হননি। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী শূন্যপদে আবেদন করা অপর প্রার্থী ড. মো. রুহুল আমিন। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে তার সক্রিয় শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা ১২ বছরের বেশি। ২০টি গবেষণা প্রবন্ধ রয়েছে তার। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্থাপন শাখা থেকে জানা গেছে, প্রার্থীদের মধ্যে যে তিনজন বেরোবির তারা প্ল্যানিং কমিটিরও সদস্য। তারা আবেদনকারী চার প্রার্থীকেই সহযোগী অধ্যাপকের শূন্যপদে যোগ্য মনোনীত করেছেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টায় বাছাই বোর্ডের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। বোর্ডের সদস্যদের কাছে প্রার্থীদের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট পাঠানো হয়েছে।
যোগ্যতা না থাকার পরও কীভাবে প্রার্থী হিসেবে সুপারিশ করা হলো জানতে লোকপ্রশাসন বিভাগের প্রধান ও প্ল্যানিং কমিটির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান মন্ডল আসাদকে গতকাল রাতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, শর্ত শিথিল করে সহযোগী অধ্যাপক পদে নিয়োগের ব্যাপারটি জানেন ভিসি অধ্যাপক ড. হাসিবুর রশীদ। নিয়োগ নির্বিঘ্ন করতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বিতর্কিত শিক্ষককে বোর্ডের বিশেষজ্ঞ-সদস্য হিসেবে মনোনয়নও দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে তদন্ত করে তার গবেষণা প্রবন্ধে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের প্রমাণ পেয়েছে বিশ^বিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)। তিনি আবার আসাদুজ্জামান মন্ডল ও সাব্বীর আহমেদ চৌধুরীর এমফিল প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে তাদের প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন।
বেরোবির একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, যোগ্যতা অর্জনের আগেই বিধি ভেঙে দুজন জুনিয়র শিক্ষককে সহযোগী অধ্যাপক করা হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক তাদের জ্যেষ্ঠতা হারাবেন। একাডেমিক ডিগ্রি শিথিল করে শিক্ষক নিয়োগের নজির বাংলাদেশের কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই।
সূত্র: দেশ রূপান্তর
এম ইউ/ ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩