অপরাধ

হাজার কোটি টাকার ঋণখেলাপি শাহীন-সাখী দম্পতি কানাডায়

আলাউদ্দিন আরিফ

চট্টগ্রামে জাহাজ ভাঙার আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান মিশম্যাক গ্রুপের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে মালিকরা লাপাত্তা। এই প্রতিষ্ঠানের মালিক তিন ভাই মিজানুর রহমান শাহীন, মুজিবুর রহমান মিলন ও হুমায়ুন কবির। ৯টি ব্যাংকে তাদের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ১০০০ কোটি টাকা বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গত বছরের অক্টোবরে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের কর্মকর্তার যোগসাজশে ১৪১ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মামলা করেছে। এছাড়া চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে চেক জালিয়াতির মামলায় (এনআইঅ্যাক্ট) চার কোটি টাকা জরিমানা করেছে শাহীনের। এছাড়া শাহীনের ভাই মিলনের বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে মামলার অনুমোদন চেয়ে দুদকে অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা হয়েছে। কমিশনের অনুমোদন হলেই মামলা হবে। এছাড়া শাহীনের স্ত্রী কামরুন নাহার সাখীর বিরুদ্ধে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের শেয়ার জালিয়াতির অভিযোগ রয়েছে। তিনি এনআরবি ব্যাংকের সাবেক পরিচালক। ইতিমধ্যে তার প্রায় ১৪ কোটি টাকার শেয়ার জব্দ বা ক্রোক করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাচার করা অর্থ দিয়ে স্ত্রীকে ব্যাংকের পরিচালক করেছিলেন শাহীন।

দুদক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে শাহীন-সাখী দম্পতি কানাডার টরন্টোতে থাকেন। তার ভাই মিলন আছেন সিঙ্গাপুরে। সেখান থেকে পুরনো জাহাজ কিনে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করেন এবং দেশের ব্যবসা দেখাশোনা করেন।

সীতাকুণ্ডের কুমিরা এলাকার কাজীপাড়ায় ছিল মিশম্যাক গ্রুপের বিশাল শিপইয়ার্ড। সরেজমিন সেখানে গিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে এইচএম স্টিল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড নামে একটি প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হয়। যার মালিক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মঞ্জুরুল আলম। স্থানীয়রা জানান, সীতাকুণ্ডের বড় শিপ ইয়ার্ডগুলোর একটি এটা। মুজিবুর রহমান মিলন আত্মগোপন করার পর সাবেক মেয়র মঞ্জুরুল আলম সেটি নিয়ন্ত্রণে নেন। শিপইয়ার্ড দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘আমি বছর চারেক আগে মাসে দেড় লাখ টাকায় মিশম্যাকের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছি। আমি অবৈধ কিছু করিনি। মিশম্যাক গ্রুপের ব্যবস্থাপক আমার কাছ থেকে নিয়মিত ভাড়া নেয়। সেটা ব্যাংকে বন্ধক রাখা কিনা সেটা আমি বলতে পারব না।’

আরও পড়ুন : ৯৯০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে মোর্শেদ-মাহজাবিন দম্পতির কানাডায় চম্পট

দুদকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীর চকবাজার এলাকার মৃত বজলুর রহমানের ছেলে মিজানুর রহমান শাহীন। তিনি ২০০৯-১০ সালের দিকে ইস্পাত, শিপ ব্রেকিং ও আবাসন ব্যবসার নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তারা তিন ভাই মিশম্যাক গ্রুপের মালিক। তারা বিভিন্ন ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেন। সেটা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ২০১২ সালের পর অর্থঋণ আদালতে মামলা শুরু করে বিভিন্ন ব্যাংক। প্রথম দিকে তারা ঋণগুলো পুনঃতফসিল করে আরও ঋণ নেন। ওইসব টাকা কানাডা, দুবাই ও সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করে তারা বিদেশে আত্মগোপন করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি শাহীন ও মিলনের আটটি প্রতিষ্ঠানকে খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে। প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে-মিশম্যাক শিপ ব্রেকিং, ফয়জুন শিপ ব্রেকিং, বিআর স্টিল মিলস, মুহিব স্টিল অ্যান্ড শিপ রি-সাইক্লিং, এমআরএম এন্টারপ্রাইজ, এমআর শিপিং লাইনস, আহমেদ মোস্তফা স্টিল ইন্ডাস্ট্রি ও সানমার হোটেলস লিমিটেড। এসব কোম্পানি সিলভিয়া গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। তাদের সবচেয়ে বেশি ২৯৮ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক দিয়েছে ২২৩ কোটি ২০ লাখ, ব্যাংক এশিয়া ১৫১ কোটি ৩৭ লাখ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ৮৫ কোটি ৫৭ লাখ, ইস্টার্ন ব্যাংক ৪৮ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ৪৭ কোটি ৭ লাখ, ঢাকা ব্যাংক ২৩ কোটি ৪৫ লাখ, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক ৭ কোটি ২০ লাখ ও যমুনা ব্যাংক দিয়েছে ৫ কোটি ১১ লাখ টাকা। ঋণের বেশিরভাগই দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন আমদানি দায়ের বিপরীতে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, মিজানুর রহমান শাহিন মিশম্যাক শিপ ব্রেকিংয়ের নামে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ১৭২ কোটি, ব্যাংক এশিয়ার সিডিএ এভিনিউ শাখা থেকে ৯ কোটি ৫৫ লাখ এবং অগ্রণী ব্যাংকের লালদীঘি ইস্ট শাখা থেকে ৩১ কোটি ২৭ লাখ টাকা ঋণ নেয়। তার প্রতিষ্ঠান ফয়জুন শিপ ব্রেকিং স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের জুবিলী রোড শাখা থেকে নিয়েছে ৩৭ কোটি ১৯ লাখ ও যমুনা ব্যাংকের কদমতলী শাখা থেকে ৫ কোটি ১১ লাখ টাকা ঋণ নেয়। একই মালিকের প্রতিষ্ঠান বিআর স্টিল মিলস ঢাকা ব্যাংকের আইবিবি মুরাদপুর শাখা থেকে নিয়েছে ২৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা।

আরও পড়ুন : গরীব সরকারী কর্মকর্তা বিডি মিত্র মাত্র ৫০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন

মুজিবুর রহমান মিলন এমআর শিপিং লাইনসের নামে ব্যাংক এশিয়ার সিডিএ এভিনিউ শাখা থেকে নিয়েছেন ১৪২ কোটি টাকা। মুহিব স্টিল অ্যান্ড শিপ রি-সাইক্লিংয়ের নামে প্রিমিয়ার ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ৪৬ কোটি ৭ লাখ, অগ্রণী ব্যাংকের লালদীঘি ইস্ট শাখা থেকে ৯১ কোটি ৯৩ লাখ ও মার্কেন্টাইলের আগ্রাবাদ শাখা থেকে নিয়েছেন ২০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এমআরএম এন্টারপ্রাইজের নামে শাহ্জালাল ব্যাংক থেকে ৭ কোটি ২০ লাখ এবং ইস্টার্ন ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা থেকে আহমেদ মোস্তফা স্টিল ইন্ডাস্ট্রির নামে ৪৮ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন মিলন। এ ছাড়া শাহীন ও মিলনের যৌথ মালিকানার সানমার হোটেলস লিমিটেড প্রতিষ্ঠার জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংকের আগ্রাবাদ শাখা ১০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ঋণ দিয়েছিল। সেই হোটেল আজও হয়নি এবং টাকাও আদায় করতে পারেনি ব্যাংক।

আরও পড়ুন : কানাডায় টাকা পাচারে সরকারি প্রকৌশলীরা শীর্ষে

গত অক্টোবর মাসে দুদকের প্রধান কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী বাদী হয়ে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এ মিজানুর রহমান শাহীনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, শাহীন জাহাজভাঙা শিল্পের জন্য মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ১৪১ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ ও বিদেশে পাচার করে। পর্যাপ্ত জামানত ছাড়া বেআইনিভাবে ঋণ দিয়ে সহায়তার অভিযোগে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক নন্দ দুলাল ভট্টাচার্যকেও মামলায় আসামি করা হয়। শাহীন ও নন্দ দুলাল ভট্টাচার্য পরস্পর যোগসাজশে নিজেরা লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে প্রতারণা, জালিয়াতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও বিশ্বাসভঙ্গের মাধ্যমে ঋণের অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন। ঋণ আত্মসাতের প্রক্রিয়ায় নন্দ দুলাল ভট্টাচার্য গ্রাহককে প্রয়োজনীয় জামানত ছাড়া অনুমোদনের পূর্বে ঋণপত্র খুলে ও জামানতকৃত সম্পত্তির অতিরিক্ত মূল্যায়ন দেখিয়ে ঋণ দেন। ওই ঋণ জ্ঞাতসারে অবহেলা ও পর্যবেক্ষণ ও ঋণ মঞ্জুরিপত্রের শর্ত সঠিকভাবে পরিপালন না করে ব্যাংক তথা রাষ্ট্রের ক্ষতি করেন নন্দ দুলাল। ঋণের ওই অর্থ স্থানান্তর ও লেয়ারিংয়ের মাধ্যমে অর্জিত অপরাধলব্ধ অর্থের অবস্থান, মালিকানা, নিয়ন্ত্রণ গোপন ও ছন্দাবৃত্ত করতে সহায়তা করেন। এছাড়া দুদকের উপসহকারী পরিচালক মুহাম্মদ শিহাব আলম আরেকটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন মুজিবুর রহমান মিলনের বিরুদ্ধে। যা অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে।

আরও পড়ুন : সাবেক প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দিন আহমেদ মাত্র ৩০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন

মিশম্যাকের ঋণ জালিয়াতি ও খেলাপি ঋণ আদায়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে আগ্রাবাদ শাখায় গিয়ে জানতে চাইলে শাখা ব্যবস্থাপক অপারেশন দেবব্রত বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা কোনো তথ্য জানি না। সব নথিপত্র প্রধান কার্যালয়ের আইন শাখায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ প্রধান কার্যালয়ের আইন শাখায় গত রবিবার গেলে দায়িত্বপ্রাপ্ত এসভিপি মোসাদ্দেক মিটিংয়ের ব্যস্ততার কথা বলে তার জুনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। ওই জুনিয়র কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা পাওনা আদায়ের জন্য বিধি অনুযায়ী অর্থঋণ আদালতে মামলা করেছি। এর বাইরে আমাদের কিছু করার সুযোগ নেই।’

এদিকে শাহীনের স্ত্রীর এনআরবিসি ব্যাংকের ১৪ কোটি টাকার শেয়ার ২০১৭ সালে জব্দের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। শাহীনের পাচার করা টাকায় শেয়ার কেনার অভিযোগে দুদকের আবেদনের প্রেক্ষিতে মহানগর দায়রা জজ আদালত এসব শেয়ার হস্তান্তর, বিক্রয় বা মালিকানা স্বত্ব বদলের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। আদালতে দুদকের আবেদনে বলা হয়, মিশম্যাক শিপ ব্রেকিং ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক শাহীন স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি ব্যবসার আড়ালে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের অর্থ আত্মসাৎ করে দেশের বাইরে পাচার করেন। পরবর্তী সময়ে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাচার অর্থের একটি অংশ তার স্ত্রী কামরুন নাহার সাখীর নামে বাংলাদেশে পাঠিয়ে এনআরবিসি ব্যাংকের শেয়ার কিনেছেন। এসব শেয়ার ক্রোকের জন্য ব্যাংকটির এমডিকে নির্দেশ দিতে আদালতে আরজি জানানো হয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের বিভিন্ন পরিদর্শনে ব্যাংকটিতে ৬৩ কোটি ৭১ লাখ টাকার বেনামি শেয়ার ও ৭৫০ কোটি টাকার ঋণে গুরুতর অনিয়মের তথ্য মেলে। শাহীন তার স্ত্রীর নামে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকে ১ কোটি ৩৩ লাখ ৪ হাজার ৮০০টি শেয়ার কেনেন। এসব অর্থ আসে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে। দেশটির ট্যুর কেয়ার কার্গো থেকে ৪ লাখ ৯৯ হাজার ডলার, এজিএম জেনারেল ট্রেডিং থেকে ৮৯ হাজার ডলার ও মিজানুর রহমান শাহীনের কাছ থেকে সরাসরি আসে ১০ লাখ ৪৯ হাজার ডলার। মার্কেন্টাইল ব্যাংকের গুলশান শাখায় সাথীর নামে খোলা একটি বৈদেশিক হিসাব থেকে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের নামে হস্তান্তরের মাধ্যমে এসব শেয়ার কেনা হয়।

আরও পড়ুন : চোখের পলকে সাবেক সিনিয়র সচিব আবু আলম কানাডা চলে আসেন

এদিকে চেক জালিয়াতির মামলায় চট্টগ্রামের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ২০১৫ সালের অক্টোবর মাসে মিজানুর রহমান শাহীনের ৪ কোটি ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে। জরিমানার ওই রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে পলাতক ছিলেন। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিলের জন্য চট্টগ্রামের মেট্রোপলিটন কমিশনারকে নির্দেশ দিয়েছে।

মিশম্যাক গ্রুপের কানাডায় অর্থ পাচারের বিষয়ে জানতে চাইলে দুদকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পরিচালক এ প্রতিবেদককে বলেন, অর্থ পাচার আইনের বিদেশে অর্থ পাচারের তদন্ত দুদকের তফসিলভুক্ত নয় বরং এটা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ করবে। দুদক তফসিলভুক্ত অপরাধের তদন্ত হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে বেশকিছু আইনি পদক্ষেপ নিয়েছে। ওই পরিচালক আরও বলেন, সম্প্রতি দুদক চেয়ারম্যান নিজেই বলেছেন যারা অর্থপাচার করে বিদেশে পালিয়ে গেছেন তাদেরকে ইন্টারপোলের মাধ্যমে দেশে ফিরিয়ে এনে আইনের মুখোমুখি করা হবে।

Back to top button