জাতীয়

অর্থনৈতিক সংকটে পদ্মা সেতুর বর্ণিল আলোকসজ্জা পরিকল্পনা স্থগিত

শামীম রাহমান

ঢাকা, ২৩ ফেব্রুয়ারি – পদ্মা সেতুর নির্মাণ প্রকল্পে অন্যতম অনুষঙ্গ ‘আর্কিটেকচারাল লাইট’ স্থাপন। দুবাইয়ের আকাশচুম্বী ভবন বুর্জ খলিফাকে যেভাবে নান্দনিক লাইট দিয়ে আলোকিত করা হয়, অনেকটা সে রকম আলোকসজ্জা করার পরিকল্পনা ছিল পদ্মা সেতুতে। জাতীয় দিবস বা উৎসব উপলক্ষে এ সেতুতে বর্ণিল আলোকসজ্জায় এসব লাইট ব্যবহারের পরিকল্পনা করা হয়। তবে ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটে’ আর্কিটেকচারাল লাইট স্থাপনের এ পরিকল্পনা স্থগিত করেছে সরকার। পদ্মা সেতু প্রকল্পের একটি সূত্র জানিয়েছে, আর্কিটেকচারাল লাইট স্থাপনের কাজটি আপাতত হচ্ছে না।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সেতুর পিয়ারের পাটাতনসহ পিয়ার, রেলপথ ও সড়কপথ এবং সেই সঙ্গে সেতুর চারপাশের পানিকে কেন্দ্র করে দুবাইয়ের বুর্জ আল খলিফার মতো আর্কিটেকচারাল লাইট স্থাপনের পরিকল্পনা করা হয়। পদ্মা সেতু তৈরি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং গ্রুপ লিমিটেড (এমবিইসি)। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের সঙ্গে করা নির্মাণ চুক্তি অনুযায়ী, লাইট স্থাপনের কাজ তাদেরই করতে হবে। মূল সেতু ও সেতুর সংযোগ ফ্লাইওভারসহ সব মিলিয়ে ৮ দশমিক ৭ কিলোমিটার এলাকায় স্থাপন করা হবে এসব আর্কিটেকচারাল লাইট। চুক্তি অনুযায়ী, ২০১৮ সালের ১৩ ডিসেম্বর আর্কিটেকচারাল লাইট স্থাপনের জন্য একটি দরপত্র আহ্বান করে এমবিইসির পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প কার্যালয়। এতে লাইট স্থাপনে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে প্রস্তাব আহ্বান করা হয়।

আলোকসজ্জার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, তারাও বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, দেখা যাক কী হয়। অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে আমাদের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। পদ্মা সেতুর কোনো ব্যয় সংকোচন করতে আমাদের বলা হয়নি।
—শফিকুল ইসলাম প্রকল্প পরিচালক
পদ্মা বহুমুখী সেতু

দরপত্রে বলা হয়, দেশে পদ্মা সেতুর গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতে সরকার এতে আর্কিটেকচারাল লাইট স্থাপনের প্রস্তাব করেছে। লাইটগুলো সেতু ও সেতুর পুরো সংযোগ ফ্লাইওভারজুড়ে থাকবে। এ লাইটের মাধ্যমে সেতু এলাকায় তৈরি হবে অনন্য এক পরিবেশ। নান্দনিক এসব লাইট ব্যবহার করে আলোকসজ্জার মাধ্যমে সেতু এলাকা ও সংলগ্ন ‘রিভার করিডোর’ আন্তর্জাতিকভাবে পদ্মা সেতুকে একটি ‘আইকনিক স্ট্রাকচার’-এ পরিণত করবে।

প্রকল্প কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দরপত্র আহ্বানের পর বাংলাদেশ ও বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত একাধিক জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠান আগ্রহী হয়ে তাদের প্রস্তাব জমা দেয়। এর মধ্যে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান এনার্জিপ্যাক আর্কিটেকচারাল লাইট স্থাপনের জন্য ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের একটি প্রস্তাব দেয়। আরএফএল প্রস্তাব করে ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের এবং এডেক্স নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান লাইট স্থাপন কাজের জন্য ৩ কোটি ডলারের প্রস্তাব দেয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পদ্মা সেতু প্রকল্পের একজন প্রকৌশলী বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দর প্রস্তাবগুলো যাচাই-বাছাই করে এডেক্সের প্রস্তাবটি পছন্দ করে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। এডেক্স প্রস্তাবটি দিয়েছিল অক্সফাম নামের একটি বিদেশী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জয়েন্ট ভেঞ্চারে। পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে একাধিক সভাও করা হয়।’ বিষয়গুলো যখন প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে আসে, তখনই আর্কিটেকচারাল লাইট স্থাপনের পরিকল্পনা স্থগিত করে দেয়া হয় বলে জানান এ প্রকৌশলী।

স্থগিতের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে আর্কিটেকচারাল লাইট স্থাপনের যে পরিকল্পনা করা হয়েছিল, তা আপাতত হচ্ছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকট মোকাবেলায় সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির জন্য বর্ণিল আলোকসজ্জার ওই কাজ স্থগিত করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২৫ জুন পদ্মা সেতু উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিনই যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। বর্তমানে সেতুর ওপর রেলপথ স্থাপনের কাজ চলছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, আর্কিটেকচারাল লাইটগুলো রেলপথ স্থাপনের কাজ শেষ করার পর শুরু করার কথা ছিল। তবে অর্থনৈতিক সংকটের কারণে এ পরিকল্পনা আপাতত স্থগিত করা হয়েছে।

যদিও পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম বলছেন ভিন্ন কথা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দুবাইয়ের বুর্জ খলিফা এক হাজার ফুট উঁচু। এর চেয়েও আমাদের কাজটা বড়। আমাদের প্রায় ৯ কিলোমিটার এলাকায় কাজ করতে হবে। এত বড় কাজ পৃথিবীতেই কখনো হয়নি। লাইট স্থাপনের বিষয়ে প্রস্তাব আহ্বান করেছিল আমাদের ঠিকাদার। কাজটা তো ঠিকাদারের। তবে আলোকসজ্জার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কাজটি জটিল। আমাদের যারা বিশেষজ্ঞ আছেন, তারাও বিষয়টি নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারছেন না। এটা কী হবে, আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, দেখা যাক কী হয়।’

‘আর্কিটেকচারাল লাইট স্থাপনে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাব আমাদের কাছে আছে। যারা মূল্যায়ন করেছেন, তাদের মতামত হলো এসব লাইট প্রতিদিনই রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে। রক্ষণাবেক্ষণ প্রক্রিয়াটাও জটিল। এছাড়া আরো কিছু জটিলতা আছে, যেগুলোর সমাধান হয়নি’, বলেন এ প্রকল্প পরিচালক।

অর্থনৈতিক সংকটে ব্যয় সংকোচনের কারণে আর্কিটেকচারাল লাইট স্থাপনের পরিকল্পনা স্থগিত করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে আমাদের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। পদ্মা সেতুর কোনো ব্যয় সংকোচন করতে আমাদের বলা হয়নি।’

সূত্র: বণিক বার্তা
এম ইউ/২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Back to top button