দক্ষিণ এশিয়া

এবার আদানির বিরুদ্ধে তথ্য জালিয়াতির অভিযোগ উইকিপিডিয়ার

নয়াদিল্লি, ২২ ফেব্রুয়ারি – নতুন বিতর্কে জড়ালো ভারতের বৃহত্তম শিল্পগোষ্ঠী আদানি গ্রুপ। মার্কিন লগ্নি-ভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিডেনবার্গের প্রতিবেদনের কয়েক সপ্তাহ যেতে না যেতেই আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ তুলল ইন্টারনেটের সর্ববৃহৎ এবং সর্বাধিক জনপ্রিয় সাধারণ তথ্যসূত্রের ওয়েবসাইট উইকিপিডিয়া। গৌতম আদানি তার পরিবার ও আদানিগোষ্ঠীর কর্মীসহ প্রায় ৪০ ব্যক্তির তথ্য বদলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ উইকিপিডিয়ার। তবে এ নিয়ে মন্তব্য করেনি আদানি গোষ্ঠী।

উইকিপিডিয়ার দাবি, ২০০৭ সালে নিয়ম অনুযায়ী আদানি গোষ্ঠী এবং তার কর্তাদের নিয়ে লেখালিখি শুরু হয়েছিল তাদের সাইটে। কিন্তু ২০১২ সালে তিন জন ব্যক্তি ধরা পড়েন, যারা ভুয়া নামে আদানি, তার স্ত্রী প্রীতি, ছেলে করণ, ভাইয়ের পুত্র প্রণব ও তাদের বিভিন্ন সংস্থার তথ্য পাল্টেছেন।

তাদের সমাজকল্যাণ, স্বার্থের সংঘাত, করবিষয়ক সতর্কতা সংক্রান্ত তথ্য মুছে ফেলা হয়েছে বলে উইকিপিডিয়ার অভিযোগ। এমনকি একজন সম্পাদক নতুন করে আদানি গোষ্ঠী সম্পর্কে নিবন্ধ লিখেছেন। কোনো ক্ষেত্রে এক ব্যক্তিই একাধিক নিবন্ধে সায় দিয়েছেন। কেউ উইকিপিডিয়াকে এড়ানোর উপায় বার করেছেন।

উল্লেখ্য, উইকিপিডিয়ায় যে কেউ যে কোনও বিষয়ে তথ্যে বদল করতে পারেন। আর টাকা দিয়ে সেই সুযোগই নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে সংস্থটি।

উইকিপিডিয়া পরিচালিত সাইন পোস্টে লিখিত এক নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, আদানি গোষ্ঠী ও তার পরিবারসম্পর্কিত ৯টি নিবন্ধ সম্পাদনা করেছেন ৪০ জন বেতনধারী ব্যক্তি (সক পাপেট), যাদের পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময় উইকিপিডিয়ায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এদের অনেকেই একাধিক নিবন্ধ সম্পাদনা করেছেন।

উইকিপিডিয়ার প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, আদানি গোষ্ঠীর নিয়োগ করা ব্যক্তিরা ও তার পরিবার সম্পর্কে পক্ষপাতমূলক তথ্য দিয়েছেন। এমনকি কোম্পানির আইপি ঠিকানা ব্যবহার করে আদানি গোষ্ঠীসংক্রান্ত নিবন্ধ পুরোপুরি পুনর্লিখন করেছেন তাদের একজন বেতনভুক্ত সম্পাদক।

আর ২৫টি ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে গৌতম আদানিসংক্রান্ত উইকিপিডিয়ার নিবন্ধ সম্পাদনা করা হয়েছে। আদানি গোষ্ঠীসংক্রান্ত নিবন্ধ সম্পাদনা করা হয়েছে ২২টি ভুয়া অ্যাকাউন্ট থেকে।

গত ২৪ জানুয়ারি ভারতের বৃহৎতম শিল্পগোষ্ঠী আদানির বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ করে যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণাকারী সংস্থা হিনডেনবার্গ। সংস্থটির অভিযোগ, কৃত্রিম ভাবে শেয়ারের দর কয়েক গুণ বাড়িয়ে আদানিরা বিশাল সম্পদ তৈরি করেছেন। কারচুপি করেই গত ৩ বছরে আদানির শেয়ার সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে ৮০০ শতাংশের বেশি।

হিনডেনবার্গের এই রিপোর্টের জেরে আদানিদের শেয়ারের দাম মুখ থুবড়ে পড়ছে। রিপোর্ট প্রকাশের পর থেকেই শেয়ার বাজারে হু হু করে কমতে থাকে আদানিদের শেয়ারের দাম। গত কয়েক দিনে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এই সংস্থা।

বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ১০০ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে বিশ্বের র্শীষ ধনীদের তালিকায় গৌতম আদানি তিন থেকে ২৬ তম স্থানে নেমে এসেছেন। ফোর্বসের বিলিনিয়ার ইনডেক্সে অনুসারে, বুধবার গৌতম আদানি সম্পদের পরিমাণ ছিল ৪৩.৫ বিলিয়ন ডলার।

এদিকে বিশেষজ্ঞদের মতে, ইতিমধ্যেই শেয়ারদরে কারচুপি নিয়ে হিনডেনবার্গের রিপোর্ট ঘিরে চাপে রয়েছে আদানিরা। এই অভিযোগ তাদের আরও অস্বস্তিতে ফেলবে।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Back to top button