উইগুর বুদ্ধিজীবীকে মিথ্যা অভিযোগে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে চীন
বেইজিং, ১০ অক্টোবর- চীনে আরও একজন উইগুর বুদ্ধিজীবীকে মিথ্যা অভিযোগে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে বলে জানাতে পেরেছে ক্যাম্পেইন ফর উইগুর। এবারের ভিকটিম ৫০ বছর বয়সী হুরসান হাসান; ভাষাতত্ত্ব নিয়ে অধ্যয়ন সম্পন্ন করে যিনি একাধারে অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক ও একটি প্রযোজনা সংস্থার মালিক।
২০১৮ সালের অক্টোবরে চীন ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশন এবং চীন ফেডারেশন অব লিটারারি অ্যান্ড আর্ট সার্কেল আয়োজিত একটি কোর্সেও অংশ নিয়েছিলেন হুরসান হাসান। এত কিছুর পরেও তাকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে আটক করা হয়। প্রতিভাবান এই ব্যক্তি আটকের সামান্য কয়েকদিন পরই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে কারাগারেই তাকে জরুরি চিকিৎসা দেওয়া হয়। তার পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন আটকের আগে হুরসান হাসান পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন।
ডিটেনশন সেন্টারে আটক থাকার ২০ মাসেরও বেশি সময় পর ২০২০ সালের ৪ সেপ্টেম্বর তাকে ১৫ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। হুরসান হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বিচ্ছিন্নতাবাদী; এই একই অভিযোগ পুরো উইগুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর আরোপ করে আসছে শি জিনপিংয়ের প্রশাসন।
আরও পড়ুন: সীমান্তে ৬০ হাজারের বেশি সৈন্য মোতায়েন চীনের
হুরসান হাসানের ঘটনা চীনা সরকারের আরেকটি মিথ্যাচারকে উন্মোচন করেছে। জিনজিয়াং অঞ্চলে উইগুর ও অন্যান্য মুসলিম সংখ্যালঘুদের জন্য নির্মিত ডিটেনশন সেন্টারগুলোকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি পুনঃশিক্ষাকেন্দ্র বা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নামে পরিচালনা করছে। কিন্তু হুরসান হাসান সুশিক্ষিত, সম্মানিত, চাকরির প্রশিক্ষণের প্রয়োজন নেই এমন একজন বুদ্ধিমান ব্যক্তি। তাকে কথিত শিক্ষা কেন আটকে রাখা চীন সরকারের মিথ্যাচারের আরেক উদাহরণ।
গত ২২ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত আদর্শিক বিরোধের ঊর্ধ্বে উঠে আসা। যদিও এটি (উইগুরদের সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়ন) কোনো ‘মতাদর্শগত বিরোধ’ নয়, যার ঊর্ধ্বে ওঠা উচিত।
শি জিনপিং তার বক্তব্যে আরও বলেন, ‘আমাদের একটি দেশের উন্নয়নের পথ এবং মডেলের স্বাধীন পছন্দকে সম্মান করা উচিত। প্রকৃতি বৈচিত্র্যময় এবং আমাদের এই বৈচিত্র্যকে মানুষের অগ্রগতিতে চালিত করার অনুপ্রেরণার উৎসে পরিণত করা উচিত। এটি নিশ্চিত করবে যে, মানব সভ্যতা বর্ণিল ও বৈচিত্র্যময় থাকবে। ’
কিন্তু ‘ক্যাম্পেইন ফর উইগুর’-এর জিজ্ঞাসা— কে কীভাবে সভ্যতার সংজ্ঞা দেয়? শি জিনপিংয়ের কর্তৃত্ববাদী শাসনব্যবস্থা সভ্যতাকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করেছে, চীন বর্তমানে যেমন রয়েছে তাই যদি হয় সভ্যতা তবে বিশ্বের উচিত সেই সভ্যতার অংশ না হওয়া। চীনা কমিউনিস্ট পার্টি চীনকে বিশ্বের সবচেয়ে কম সভ্য জায়গায় পরিণত করেছে।
উইগুরদের গণআটক রাখা এবং হুরসান হাসানের মতো ব্যক্তিদের কারাদণ্ডের ঘটনা কখনোই কোনো ‘সভ্য’ জাতির করা উচিত নয়। ক্যাম্পেইন ফর উইগুর অবিলম্বে হুরসান হাসানের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানিয়েছে। উইগুর আন্দোলনের সংস্থাটি বলেছে, চীনের বর্তমান শাসন ব্যবস্থা বর্বর, অশুভ এবং বিশ্বের অন্যান্য জাতির তা আর সহ্য করা উচিত নয়।
সূত্র : বাংলানিউজ
এন এইচ, ১০ অক্টোবর