শরীর চর্চা

প্রাণায়ামেই লুকিয়ে প্রাণের বীজ!

যত দিন যাচ্ছে তত যেন নানাবিধ জটিল রোগ আমাদের চারিপাশ থেকে ঘিরে ধরছে। আর আমরা, বাস্তবিকই ডিফেন্সলেস হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি। ভরসা বলতে বেসরকারি হসপাতালের দামী বেড। আর যাদের সেই ক্ষমতা নেই।

তাদের সরকারি হাসপাতালের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে শেষ দিনের অপেক্ষা করা ছাড়া কোনও উপায়ই নেই। কি তাই না? এমন পরিস্থিতিতে সেভিংস অ্যাকুউন্টে রাখা সামান্য পুঁজির উপর ভরসা না রেখেও কিন্তু সুস্থভাবে বেঁচে থাকা সম্ভব? কীভাবে? এক্ষেত্রে কয়েক হাজার বছর পিছনে ফিরে যেতে হবে। যখন আয়ুর্বেদ শাস্ত্র অতটা জোরদার হয়ে ওঠেনি তখন যোগাসনই ছিল সুস্থতার একমাত্র চাবিকাঠি। আর আজ যেখানে আমাদের হাতে চিকিৎসার এত অপশান, সেখানেও কিন্তু যোগাসই সেই অস্ত্র হয়ে উঠতে পারে, যা এই কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের বাঁচিয়ে রাখতে পারে।

তাহলে এখন প্রশ্ন হল, সুস্থ থাকতে কী কী ব্য়য়াম করতে হবে? উত্তরটা শুনে চমকে যাবেন না তো? এক্ষেত্রে ঠিক একটা যোগাসন করতে হবে। তাহলেই চলবে। মানে! বহু শতাব্দী আগে আমাদের দেশে প্রাণায়ম নামে যে সহজ ব্যায়ামটির উদ্ভাবন হয়েছিল, সেটি শরীরের প্রতিটি কণাকে রোগ মুক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই তো প্রতিদিন সকালে কিছুটা সময় প্রাণায়মের পিছেন ব্যয় করার পরামর্শ দিয়ে যোগ বিশেষজ্ঞরা। আর এমনটা দি করতে পারেন তাহলে কোনও দিন যে চিকিৎসকের দরবারে গিয়ে অসহায়ের মতো দাড়িয়ে থাকতে হবে না, সে কথা হলফ করে বলতে পারি ।

আসলে প্রাণায়ম করার সময় আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষ এনার্জিতে ভরে যায়। ফলে সার্বিকভাবে শরীরের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। সেই কারণেইই তো এই ব্যায়ামটিকে সংস্কিৃতে “প্রাণয়ম” নামে ডাকা হয়ে থাকে, যার সহজ অর্থে মানে হল, “এমন ক্ষমতা, যা শরীরের প্রকৃত চালিকা শক্তি।” প্রাণায়ম করার সময় আমাদের শরীরের প্রতিটি অঙ্গে বিশুদ্ধ অক্সিজেনের সরবরাহ বেড়ে যায়। ফলে রোগেভোগের আশঙ্কা এমনিতেই কমে যেতে শুরু করে। তবে এখানেই শেষ নয়, প্রাণায়মের আরও বেশ কিছু উপকারিতা আছে। যেমন…

১। শরীরকে বিশুদ্ধ করে তোলে: প্রাণায়ম করার সময় আমাদের শরীরের কম-বেশি প্রায় ৮০,০০০ নার্ভের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সেই সঙ্গে শরীরের অন্দরে এনার্জির ভারসাম্য ঠিক হতে শুরু করে। ফলে ছোট থেকে ছোট রোগও আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।

২। শরীরের সচলতা বৃদ্ধি পায়: অনেকেই মনে করেন প্রাণয়ম কেবলমাত্র মনোযোগ বৃদ্ধি করে। একথা কিন্তু একেবারেই ঠিক নয়। কারণ এই যোগাসনটি নিয়মিত করলে কনসেনট্রেশনের উন্নতি তো ঘটেই, সেই সঙ্গে শরীরে প্রতিটি অংশে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের পৌঁছে যাওয়ার কারণ একাধিক রোগের প্রকোপও হ্রাস পেতে শুরু করে। বিশেষত হজমের সমস্যা দূর করতে এই ব্যায়ামটির কোনও বিকল্প হয় না বললেই চলে।

৩। মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: একাধিক গবেষণার পর একথা ইতিমধ্যেই প্রমাণ হয়ে গেছে যে নিয়মিত প্রাণায়াম করার অভ্যাস করলে ধীরে ধীরে ব্রেণ পাওয়ার বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটার পাশাপাশি বুদ্ধির জোরও বাড়ে। শুধু তাই নয়, স্ট্রেস কমাতেও এই যোগাসনটি দারুনভাবে সাহায্য় করে থাকে। প্রসঙ্গত, বর্তমান সময়ে যেসব জটিল রোগে সিংহভাগ মানুষই আক্রান্ত হয়ে থাকেন, সেগুলির সঙ্গে স্ট্রেস বা মানসিক চাপের সরাসরি যোগ রয়েছে। তাই তো একবার স্ট্রেস লেভেলকে কমিয়ে ফেলতে পারলে জীবনের পরিধিও বাড়তে শুরু করে।

৪। উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের প্রকোপ কমায়: এই দুই মারণ রোগে যারা ভুগছেন তারা প্রতিদিন প্রাণায়ামের অভ্যাস করুন। দেখবেন উপকার পাবেন। আসলে এই ব্যায়ামটি করার সময় শরীরে বিশেষ কিছু হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়, যা রক্ত প্রবাহকে স্বাভাবিক করে তোলার পাশাপাশি রক্তে যাতে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি না পায়, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে দুটি রোগই নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

৫। আয়ু বৃদ্ধি পায়: যোগ বিদ্যা অনুসারে একজন মানুষ কতদিন সুস্থ ভাবে বাঁচবেন, তা অনেকাংশেই তার শ্বাস-প্রশ্বাসের ধরনের উপর নির্ভর করে। যে যত সঠিকভাবে শ্বাস নেবেন, সে তত বেশি দিন বাঁচবেন। আর একথা তো কারওরই আজনা নেই যে প্রাণায়ম হল এমন একটি শরীরচর্চা, যা শ্বাস-প্রশ্বাসকে স্বাভাবিক করার মধ্যে দিয়ে শরীরের উন্নতি ঘঠায়। তাই দীর্ঘ জীবন পতে প্রাণায়মের যে কোনও বিকল্প নেই, তা বলাই বাহুল্য!

৬। ওজন হ্রাসে সাহায্য করে: প্রাণায়ম করা শুরু করলে আমাদের শরীরে একাধিক প্রয়োজনীয় উপাদানের ভারসাম্য স্বাভাবিক হতে শুরু করে। ফলে জাঙ্ক ফুড খাওার ইচ্ছা যেমন কমে, তেমনি হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটার কারণে শরীরে মেদ জমারও সুযোগই পায় না। ফলে দ্রিত ওজন কমতে শুরু করে।

আডি/ ০২ ডিসেম্বর

Back to top button