দক্ষিণ এশিয়া

কাশ্মীর ইস্যুতে আবারও উত্তপ্ত ভারত-পাকিস্তান

কাশ্মীর, ০২ ডিসেম্বর- কাশ্মীর ইস্যুতে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থায় (ওআইসি) সর্বসম্মতভাবে পাস হওয়া প্রস্তাবনা ঘিরে তুমুল বিতর্কে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। প্রস্তাবনায় গেলো আগস্টে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করায় নয়াদিল্লির তীব্র সমালোচনা করা হয়।

ওআইসি’র পাস করা প্রস্তাবনার একটা কপি পাওয়ার দাবি করেছে কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা। প্রস্তবনায় কাশ্মীর ইস্যুতে ভারতের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি অবৈধ পদক্ষেপ প্র্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

নাইজেরিয়ার রাজধানী নিয়ামে চলতি সপ্তাহে ওআইসি’র পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে কাশ্মীর ইস্যুতে প্রস্তাবনা পাস করে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম জোট ওআইসি। বলা হয়, ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারতের দখলে থাকা জম্মু-কাশ্মীরের আন্তর্জাতিক স্বীকৃত মর্যাদা বাতিলে নয়াদিল্লির নেয়া একতরফা এবং অবৈধ পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান এবং অবৈধ পদক্ষেপ বাতিলের দাবি জানাচ্ছে ওআইসি।

গেলো আগস্টে জম্মু এবং কাশ্মীরের সীমিত স্বায়াত্বশাসন বাতিল করে মোদি সরকার। অঞ্চলটিকে দু’ভাগে ভাগ করে সরাসরি কেন্দ্রের শাসন জারি করা হয়। এরপর থেকে অসংখ্য আইন এবং সংশোধনী পাস করে নয়াদিল্লি। কাশ্মীরীদের আশঙ্কা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্যের জনমিতি পাল্টে দেয়ার জন্য এমন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকার।

কাশ্মীরকে নিজেদের বলে দাবি করে ভারত ও পাকিস্তান। বিতর্কিত অঞ্চলের দুটি অংশ শাসন করে উভয় দেশ। সেখানে ভারতবিরোধিতা এখন চরমে।

কাশ্মীর ইস্যুতে ওআইসির দেশগুলো বরাবরই ঐক্যবদ্ধ

কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনীর ৫ লাখের বেশি সদস্য মোতায়েন রেখেছে ভারত। যেখানকার জনসংখ্যা ১ কোটি ২০। অঞ্চলটিকে বিশ্বের অন্যতম সামরিকীকরণ এলাকা বানিয়েছে নয়াদিল্লি। ভারতের দাবি, ১৯৮৯ সালে শুরু হওয়া সশস্ত্রবিদ্রোহীদের দমনে কাশ্মীরে সেনা মোতায়েন রাখা হয়েছে।

কাশ্মীরের সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির আইনের অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক শেখ শওকত বলেন, কয়েকটি গণমাধ্যমের দাবি অনুযায়ী ওআইসির প্রস্তাবনায় ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে, মুসলমানদের সর্ববৃহত এ জোট কাশ্মীরের মৌলিক বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।

বলেন, সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে ভারত ভালো সম্পর্ক তৈরি করলেও ওআইসির অধিকাংশ দেশই কাশ্মীর ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ এবং পূর্বের অবস্থানে অনড়।

৫৭টি মুসলিম দেশের জোট ওআইসির প্রস্তাবনা রোববার প্রত্যাখ্যান করেছে ভারত। বলেছে, ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলার কোনো অধিকার নেই ওআইসির।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, প্রস্তাবনায় ভারতকে নিয়ে যে অযৌক্তিক, ভিত্তিহীন, অসত্য দাবি করা হয়েছে তা কঠোর এবং অব্যাহতভাবে প্র্রত্যাখান করছে নয়াদিল্লি।

বলা হয়, জম্মু এবং কাশ্মীর ভারতের অভ্যন্তরীণ এবং অবিচ্ছেদ্য অংশ। এছাড়াও ভারতের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়ে কথা বলার অধিকার ওআইসির নেই।

সোমবার রাতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দিয়ে প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বলা হয়, জাতিসংঘের পর দ্বিতীয় বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সংস্থা ওআইসি।

বিবৃতিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট মন্ত্রণালয় জানায়, ওআইসির প্রস্তাবনাসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠাকে উপেক্ষা না করে ভারতের উচিৎ অবৈধভাবে দখল করে থাকা জম্মু ও কাশ্মীরে চালানো রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধে মনোযোগ দেয়া।

বলা হয়, ওআইসি’র প্রস্তাবনা আবারও প্রমাণ করে ভারত কখনোই কাশ্মীরীদের বিরুদ্ধে চালানো ভয়াবহ এবং পদ্ধতিগত মানবাধিকার লঙ্ঘন লুকাতে পারে না। তাদের আত্মপরিচয়ের প্রশ্নাতীত অধিকার হরণ করে পার পাবে না। কাশ্মীরে যে নির্মম আচরণ চলছে তা থেকে বিশ্বকে ধোঁকা দিতে পারে না মোদি সরকার।

ওআইসির প্রস্তাবনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়নি

যদিও পাস হওয়া প্রস্তাবনা এখানো ওয়েব সাইট কিংবা টুইটার হ্যান্ডেলে প্রকাশ করেনি ওআইসি। যে সুত্র থেকে আল জাজিরা প্রস্তাবনার কপি পেয়েছে তিনি জানান, শিগগিরই আনুষ্ঠানিকভাবে তা প্রকাশ করা হবে। তার নির্দিষ্ট সময় জানা যায়নি।

প্রস্তাবনায় বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে তাজা গুলি এবং ছররা গুলি চালানোয় ভারতের নিন্দা জানানো হয়েছে। নয়াদিল্লি তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। নাম উল্লেখ না করে পশ্চিমের প্রতিবেশি ইসলামবাদের সমালোচনা করে মোদি প্রশাসন।

বলা হয়, ওআইসি সুনির্দিষ্ট একটি দেশকে নিজেকে ব্যবহারের জন্য দিচ্ছে এটা খুবই দু:খজনক। যে দেশের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, উগ্রবাদী এবং সংখ্যালঘুদের নির্যাতন এবং ভারতবিরোধী মিথ্যাচারের জঘন্য রেকর্ড রয়েছে।

ওআইসি সর্বপরি নিন্দিত সংস্থা এবং বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে তার কোনো কার্যকরিতা নেই বলে দাবি করেছেন ভারতের সাবেক কূটনৈতিক তালমিজ আহমদ।

বলেন, গেলো ৩০ বছরে বিভিন্ন বিষয়ে ওআইসির এমন কোনো সম্মেলন বাদ যায়নি যেখানে এরকম বিবৃতি দেয়া হয়নি। ফলাফল কিছুই হয়নি। এতে প্রমাণ হয় ওআইসির কার্যক্রমের সঙ্গে মুসলিম সম্প্রদায় এবং জোটের সদস্য রাষ্ট্রগুলোর কোনো সম্পর্ক নেই। সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব এবং ওমানে ভারতের রাষ্ট্রদূত হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তালমিজ আহমদ।

ইসলামাবাদের অভিযোগ, পাকিস্তানে হামলার পরিকল্পনা করছে ভারত। নয়াদিল্লির অভিযোগ, ভারতে হামলার পরিকল্পনা করছে পাকিস্তান। উভয় দেশ গেলো সপ্তাহে সন্ত্রাসী হামলার অভিযোগ এনে জাতিসংঘে তথ্য প্রমাণ জমা দিয়েছে।

সূত্রঃ সময় নিউজ
আডি/ ০২ ডিসেম্বর

Back to top button