পশ্চিমবঙ্গ

প্রশান্ত কিশোর খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়েছেন তৃণমূলকে! সিঁদুরে মেঘ দেখছেন মমতা

সঞ্জয় ঘোষাল

কলকাতা, ০১ ডিসেম্বর- প্রশান্ত কিশোর বাংলায় কৌশল তৈরি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি কৌশলী হয়েও কৌশল পরিকল্পনায় মন না দিয়ে সংগঠন নিয়ে পড়েছেন। তা তৃণমূলকে খাদের কিনারায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। পরিস্থিতি যা তৃণমূলে বিদ্রোহের আগুন ছড়িয়ে পড়ছে হু হু করে। সেই আগুন নেভানোর মতে সদর্থক ভূমিকা কাউকেই নিতে দেখা যাচ্ছে না।

পিকের কলকাঠি নাড়া মানতে পারছেন না অনেকে
প্রশান্ত কিশোরের সংগঠনে নাক গলানো মেনে নিতে পারেননি তৃণমূল কংগ্রেসের বহু সিনিয়র নেতা। তাঁদের পিছনে ছড়ি ঘোরানো শুরু করতেই তৃণমূলের আদি নেতারা অনেকেই সরব হয়েছেন। তাঁরা প্রশান্ত কিশোরের কলকাঠি নাড়া মানতে পারছেন না। ফলে ভোট কৌশলী প্রশান্ত কিশোর এবং তাঁর টিম আই-প্যাকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ভাঙনের সুর তুলে দিয়েছেন অনেকে।

‘দিদিকে বলো’তে চূড়ান্ত সাফল্য আসেনি, ব্যর্থ পিকে
প্রশান্ত কিশোর দলের দায়িত্ব নিয়েই ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি নিয়েছিলেন। প্রাথমিকভাবে তা সফলও হয়েছিল। কিন্তু অনেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে না পেরে মনোক্ষুণ্ণ হয়েছেন। ‘দিদিকে বলো’তে অভিযোগ রেকর্ড করা হলেও তাতে অনেক মানুষের সন্তুষ্টি হয়নি। সমস্যা রয়েই গিয়েছে।

‘বাংলার গর্ব মমতা’ও সফল নয় করোনার আবহে
‘দিদিকে বলো’র পর ‘বাংলার গর্ব মমতা’ শুরু করেছিলেন প্রশান্ত কিশোর। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে ‘বাংলার গর্ব মমতা’ও মুখ থুবড়ে পড়েছিল। কারণ এই আদি-নব্যের দ্বন্দ মেটাতে নেওয়া হলেও, তা শেষ করা যায়নি। শুরু হতে না হতেই করোনার দাপট ম্লান করে দিয়েছিল ‘বাংলার গর্ব মমতা’কে। সে অর্থে ফলপ্রসূ হয়নি এই অভিযান।

পিকের লোক কলকাঠি নাড়ছেন, তৃণমূলীরা বিদ্রোহী
এরপরই পিকে-কে সংগঠনের কাজে ব্যবহার করতে শুরু করে তৃণমূল। পিকের লোক তৃণমূল নেতাদের উপর কলকাঠি নাড়া শুরু করতেই বেঁকে বসেন অনেক হেভিওয়েট। প্রশান্ত কিশোরের বিরুদ্ধে সরব হন তৃণমূলের একাধিক বিধায়ক। দিন দিন সেই তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে শুরু করেছে।

পিকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের তালিকায় হেভিওয়েট যাঁরা
একুশের আগে যখন সংঘবদ্ধ হয়ে দলের হয়ে ময়দানে নামা জরুরি, তখন তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী বিদ্রোহ ঘোষণা করে দল ছেড়ে বিজেপিতেও যোগ দিয়েছেন। তারপর শুভেন্দু অধিকারী, শীলভদ্র দত্ত, কৃষ্ণপদ সাঁতরা থেকে শুরু করে হালে জটু লাহিড়ী-সহ আরও অনেক বিধায়ক রয়েছেন পিকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের তালিকায়।

পিকেকে নিয়োগ একুশের অশনি সংকেত তৃণমূলের
বিদ্রোহীদের প্রায় প্রত্যেকেরই অভিযোগ, প্রশান্ত কিশোরকে ভোট কৌশলী হিসেবে পার্টিতে নিয়োগ করার পরই চারদিক থেকে ক্ষয়ক্ষতি শুরু হয়েছে দলে। জটু লাহিড়ী তো ফলাও করে বলেছেন, আমি কেবল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কারণে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলাম। তাই আমি মনে করি এই পার্টির রাশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে থাকাই উচিত।

প্রশান্ত কিশোর সংগঠনে, শুভেন্দুর বিদ্রোহের অন্যতম কারণ
এই প্রশান্ত কিশোর ইস্যুতেই দলে ক্ষুব্ধ হয়ে শুভেন্দু অধিকারী মতো জনপ্রিয় নেতা দল থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারী গত সপ্তাহে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভা থেকেও পদত্যাগ করেছেন। এখন তাঁর দলবদল নিয়ে চর্চা চলছে। তিনি নিত্যদিনই নতুন জল্পনার বাতাবরণ তৈরি করছেন।

২০২১ নির্বাচনে বুমেরাং হতে পারে পিকের ভোট-স্ট্র্যাটেজি
শুভেন্দু অধিকারীর পদত্যাগ তৃণমূলকে আড়াআড়ি দু-ভাগ করে দিয়েছে, তা বলাই বাহুল্য। তিনি বিধানসভা নির্বাচনের আগে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসনের উপরে নিজের প্রভাব বজায় রেখেছেন। এহেন পরিস্থিতি একুশের নির্বাচনের আগে বুমেরাং হতে পারে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তৃণমূলের বিদ্রোহী বিধায়করা।

বাংলায় সফল হওয়া কঠিন পিকের, মত তৃণমূলের একাংশের
তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতাদের বিশ্বাস, প্রশান্ত কিশোর ও তাঁর টিমের বাংলায় সফল হওয়া কঠিন। পিকে এবং আই প্যাক বেশিরভাগ কাজ করেছে উত্তর ভারত কেন্দ্রীভূত রাজ্যে। বাংলায় তাঁর সাম্প্রতিক উদ্যোগ ‘দিদিকে বলো’ বা ‘বাংলার গর্ব মমতা’ আপাত সাফল্য পেলেও, তাঁর উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়েছে। তৃণমূলের মধ্যেই অন্তর্কলহের সৃষ্টি করেছে সেই উদ্যোগ।

সূত্র: ওয়ান ইন্ডিয়া

আডি/ ০১ ডিসেম্বর

Back to top button