১ হাজার ১০০ বিমান কিনে বিপুল সম্প্রসারণে যাচ্ছে ভারতের আকাশ পরিবহন
নয়াদিল্লি, ১৬ ফেব্রুয়ারি – ভারতের বিভিন্ন বিমান পরিবহন কোম্পানি ১ হাজার ১০০–এর বেশি উড়োজাহাজ কেনার আদেশ দিয়েছে, ফলে আগামী কিছুদিনের মধ্যেই দেশটির এয়ারলাইনশিল্প ব্যাপকভাবে সম্প্রসারিত হতে চলেছে।
১৭ বছরেরও বেশি সময় পর এয়ার ইন্ডিয়া আবারও টাটা গ্রুপের মালিকানায় ফিরে এসেছে। আর বেশ দ্রুতই এয়ার ইন্ডিয়া সব মিলিয়ে ৪৭০টি উড়োজাহাজ কেনার জন্য চুক্তি করেছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই বিমান প্রস্তুতকারী কোম্পানি এয়ারবাস এবং বোয়িংয়ের সঙ্গে।
ইকোনমিক টাইমস জানাচ্ছে, এয়ার ইন্ডিয়া চওড়া এবং সরু এই দুই আকারের বিমানই কিনছে। আর এই বিশাল সংখ্যার ক্রয়াদেশ শুধু ভারতীয় কোনো বিমান সংস্থার জন্য সবচেয়ে বড় কেনাকাটা তাই–ই নয়, এটি বিশ্বের বড় একক ক্রয়াদেশগুলোর মধ্যেও অন্যতম।
ভারতের সবচেয়ে বড় এয়ারলাইন ইন্ডিগো। তাদের ৫০০ উড়োজাহাজের ক্রয়াদেশ দেওয়া রয়েছে। আকাশা এয়ার কিনছে বোয়িংয়ের ৭২টি সরু আকারের বিমান, যার মধ্যে ১৬টি এরই মধ্যে সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে আকাশা এয়ার আরও ৫৬টি বিমান পাবে।
গো ফার্স্ট, যার আগের নাম ছিল গো এয়ার, ক্রয়াদেশ দিয়েছে ৭২টি উড়োজাহাজের জন্য। ভিসতারা কিনবে আরও ১৭টি বোয়িং।
সব মিলিয়ে এসব বিমান পরিবহন কোম্পানি ১ হাজার ১১৫টি উড়োজাহাজের ক্রয়াদেশ দিয়েছে। বর্তমানে দেশটিতে কমবেশি ৭০০টি বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ রয়েছে, যেগুলোর বেশির ভাগই সরু আকারের এক আলবিশিষ্ট। এয়ারবাসের ৪৭০টি এবং বোয়িংয়ের ১৫৯টি উড়োজাহাজ এখন ভারতে বাণিজ্যিকভাবে চলাচল করে।
বিশ্বের যেসব দেশে বিমান পরিবহন ব্যবসা খুব দ্রুত বাড়ছে, ভারত তাদের অন্যতম। মঙ্গলবারে বোয়িং জানিয়েছে, তাদের ধারণা আগামী দুই দশকে ভারতে আরও ২ হাজার ২১০টি উড়োজাহাজের প্রয়োজন হবে। আগামী ২০৪১ সাল পর্যন্ত দেশটির অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বছরে ৭ শতাংশ হারে বাড়বে বলেও মনে করে বিশ্বের অন্যতম বড় এই বিমান তৈরির প্রতিষ্ঠান।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন যে দেশটিতে আগামী ১৫ বছরে দুই হাজারের বেশি উড়োজাহাজের প্রয়োজন হবে। এভিয়েশন কনসালট্যান্ট সিএপিএ গত সপ্তাহে বলেছে, আগামী এক কিংবা দুই বছরে ভারতে বিমান চলাচল কোম্পানিগুলো দেড় হাজার থেকে দুই হাজার উড়োজাহাজ কেনার আদেশ দেবে।
এয়ার ইন্ডিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্যাম্পবেল উইলসনের মতে, ৪৭০টি উড়োজাহাজ কেনার জন্য যে চুক্তি করা হয়েছে, তার বাইরে কোম্পানিটি আরও বিকল্প ভাবছে, যার মধ্যে আরও নতুন বিমান কেনার মতো বিষয়ও রয়েছে।
মঙ্গলবারে বিমান কেনার চুক্তির পর তিনি কর্মীদের কাছে পাঠানো এক বার্তায় বলেন, ‘এটা বর্তমান সুবিধা এবং দামে আমাদের আরও উড়োজাহাজ কেনার বিকল্প দিয়েছে। তবে এটা কোনো বাধ্যবাধকতা নয়।’ এয়ার ইন্ডিয়া ৪০টি এ–৩৫০টিসহ ২৫০টি বিমান কিনবে এয়ারবাস থেকে। আর বোয়িংয়ের কাছ থেকে কিনবে ২২০টি।
৩ ফেব্রুয়ারি ইন্ডিগো জানিয়েছে যে তারা ২০২২ সালের শেষ প্রান্তিকে তাদের বহরে ২২টি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ যোগ করেছে। ‘এটা আমাদের যাত্রায় একটি বড় মাইলফলক। আমরা ৫০০ বিমানের জন্য যেসব ক্রয়াদেশ দিয়েছি, সেখান থেকে আমরা উড়োজাহাজের সরবরাহ নেওয়া অব্যাহত রাখব।’ বলেছে ইন্ডিগো।
এয়ার ইন্ডিয়া সম্প্রতি যেসব বিমান কেনার চুক্তি করেছে, সেটি তাদের জন্য গত ১৭ বছরে প্রথম, আর মহামারির পর যেকোনো ভারতীয় বিমান সংস্থার জন্য দ্বিতীয় ক্রয়াদেশ। ২০০৫ সালে সরকারি মালিকানায় থাকার সময় তারা সর্বশেষবার বিমান কেনার আদেশ দিয়েছিল—৬৮টি বোয়িং এবং ৪৩টি এয়ারবাস।
আকাশা এয়ার তাদের বিমানসেবা শুরু করে গত বছরের আগস্টে। তাদের রয়েছে ৭২টি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স কেনার আদেশ।
তবে ভারতের ইতিহাসে এর আগে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি বিমান কেনার আদেশ দিয়েছিল ইন্ডিগো। ২০০৫ সালে তারা এয়ারবাসের ১০০টি ছোট আকারের উড়োজাহাজ কেনার আদেশ দেয়। এরপর ২০১১ সালে ১৮০টি এয়ারবাস বিমান, ২০১৫ সালে ২৫০টি এয়ারবাস এবং ২০১৯ সালে আরও ৩০০টি এয়ারবাস উড়োজাহাজের জন্য ক্রয়াদেশ দেয়।
তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী স্পাইসজেট ২০১৭ সালে ২০৫টি উড়োজাহাজ কেনার ঘোষণা দেয়, যার মধ্যে ছিল ১৫৫টি বোয়িং ম্যাক্স।
ওয়াদিয়া গ্রুপের মালিকানাধীন গো ফার্স্ট ২০১১ ও ২০১৬ সালে ১৪৪টি এয়ারবাস–৩২০ উড়োজাহাজ কেনার চুক্তি করেছিল।
তবে এসব উড়োজাহাজের মধ্যে ঠিক কতগুলো এখন পর্যন্ত সরবরাহ করা হয়েছে, তা জানা সম্ভব হয়নি।
এভিয়েশন কনসালট্যান্ট সিএপিএ তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ভারতের ৭০০ বিমানের বহর অবশ্য বিশ্বের অনেক একক বিমান পরিবহন সংস্থার বহরের তুলনায় ছোট। তাই সম্ভাবনা যেহেতু অনেক, দেশটির সে কারণে আরও অনেক বেশি সংখ্যায় বিমান কেনা প্রয়োজন।
সূত্র: প্রথম আলো
আইএ/ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩