শ্রীলঙ্কার বিদ্যুতের খরচ বাড়ল ২৭৫%, আইএমএফের শর্ত মেনেই এই পদক্ষেপ
কলম্বো, ১৬ ফেব্রুয়ারি – অর্থনীতি এখনও ধুঁকছে শ্রীলঙ্কায়। এর মধ্যেই সে দেশে বিদ্যুতের খরচ বাড়ল ২৭৫ শতাংশ, যা কয়েক মাসের ব্যাবধানে মাথায় দ্বিতীয় বার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত পূরণে এই পদক্ষেপ নিয়েছে প্রেসিডেন্ট রনিল বিক্রমাসিংহের সরকার।
ভারত মহাসাগরের দ্বীপ দেশটিকে ২.৯ বিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে আইএমএফ। তবে ঋণ পাওয়ার পূর্বশর্ত হিসাবে ঋণের স্থায়িত্ব অর্জন করতে হবে। আইএমএফ থেকে ঋণ নেয়া সকল দেশকে তাদের শর্তগুলো পূরণ করতে হয়।
আইএমএফের শ্রীলঙ্কাকে দেয়া শর্তগুলো হলো, দেশটির সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী থেকে লোক ছাঁটাই, কর বৃদ্ধি, জ্বালানি খাতে ভতুর্কি বাতিল এবং লোকসানে থাকা রাষ্ট্রীয় উদ্যোগগুলোকে বিক্রি করতে বলা হয়েছে।
লঙ্কান বিদ্যুৎমন্ত্রী কাঞ্চনা বিজেশেখরা বলেন, আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, কোষাগার থেকে টাকা তোলা যাবে না। সে কারণে বিদ্যুতের বিল বাড়াতে আমরা বাধ্য হয়েছি। ঋণ পেতে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো ছাড়া আমাদের সামনে অন্য কোনও পথ নেই।
তিনি আরও জানিয়েছেন, বিদ্যুতের বিল বাড়ানো হলে আর লোডশেডিং হবে না। কারণ বর্ধিত রাজস্বের টাকা দিয়ে বিদেশ থেকে জ্বালানি কিনতে পারবে শ্রীলঙ্কার।
ফলস্বরূপ এখন থেকে শ্রীলঙ্কায় প্রতি পরিবারকে ঘণ্টা পিছু প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ খরচের জন্য ৩০ টাকা করে দিতে হবে। ছয়মাস আগেই সে দেশে বিদ্যুতের খরচ ২৬৪ শতাংশ বাড়িয়েছিল সরকার। এর পর আবার বাড়ানো হল। তার মধ্যেও দিনে ১২ থেকে ১৩ ঘণ্টা লোডশেডিং।
এদিকে রাজস্ব বাড়ানোর জন্য নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই ব্যক্তিগত আয়কর এবং কর্পোরেট কর দ্বিগুণ করা হয়েছে। এছাড়াও আগস্টে ৭৫ শতাংশ শুল্ক বৃদ্ধির পরে বিদ্যুতের দাম ৬৫ শতাংশ বেড়েছে ৷
স্বাধীনতা লাভের পর সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। করোনা মহামারির কারণে পর্যটন ব্যবসায় ধস, জাতীয় অর্থনীতি পরিচালনায় সরকারের অদক্ষতা, বিশ্বজুড়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি এবং রাষ্ট্রীয় কোষাগারে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শূন্যে নেমে যাওয়ায় শ্রীলঙ্কায় বিপর্যয়র পরিস্থিতি তৈরি হয়। যার ফলে খাদ্য, জ্বালানি এবং ওষুধের মতো জরুরি পণ্য আমদানি করতে পারছে না দেশটি। খাবার, জ্বালানির অভাবে ভুগছেন ২ কোটি ২০ লাখ বাসিন্দা।
এই পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক সংকটের পাশাপাশি রাজনৈতিক সংকটও দেখা দেয় শ্রীলঙ্কায়। ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে প্রথমে দেশটির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পরে প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। দেশটির সংকটময় পরিস্থিতিতে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন রনিল বিক্রমাসিংহে।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
এম ইউ/১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩