দক্ষিণ এশিয়া

এলটিটিই প্রধান প্রভাকরণের বেঁচে থাকার দাবী নিয়ে যা বলছে শ্রীলঙ্কার সেনা

কলম্বো, ১৬ ফেব্রুয়ারি – এলটিটিই প্রধান ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণ জীবিত বলে যে দাবী সম্প্রতি করেছেন তামিল জাতীয়তাবাদীদের একাংশ, তাকে ভুয়া বলে মন্তব্য করেছে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনী।

বিবিসি তামিল বিভাগকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে শ্রীলঙ্কার সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার রভি হেরাথ জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধের একেবারে শেষ সময়ে প্রভাকরণ মারা গিয়েছিলেন।

তার কথায়, “১৮মে, ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধের শেষদিনে প্রভাকরণ মারা যান। তার মৃত্যুর পরে ডিএনএ টেস্ট করা হয়েছিল। মৃতদেহটি যে প্রভাকরেরই ছিল, তা নিশ্চিত করা গিয়েছিল। এটা নিয়ে কোনও অস্পষ্টতা নেই।“

“যে বিবৃতিতে বলা হচ্ছে যে তিনি জীবিত আছেন, তা নিয়ে আমরা মোটেই চিন্তিত নই, কারণ ওই দাবীটাই ভুল,” জানিয়েছেন মি. হেরাথ।

এলটিটিই বা লিবারেশন টাইগার্স অফ তামিল ইলম শ্রীলঙ্কায় বসবাসরত তামিল জনগোষ্ঠীর জন্য দেশটির উত্তর আর পূর্বাঞ্চল নিয়ে একটি পৃথক দেশ গঠনের উদ্দেশ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল ৫ মে, ১৯৭৬ সালে। মি. প্রভাকরণই সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তবে তারা শ্রীলঙ্কার সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ পুরোদমে শুরু করে ১৯৮৩-র মাঝামাঝি এসে।

প্রভাকরণের জীবিত থাকার দাবী
তামিল নেতা ও লেখক পাঝা নেহুমারানের নেতৃত্বে তামিল জাতীয়তাবাদীদের একটি গোষ্ঠি সোমবার দাবী করেন যে প্রভাকরণ জীবিত আছেন।

শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ নিয়ে একটি স্মারক উন্মোচনের সময়ে ওই গোষ্ঠীটি সংবাদমাধ্যমের সামনে প্রভাকরণের বেঁচে থাকার দাবী উত্থাপন করেছিল।

বলা হয়েছিল প্রভাকরণ এবং তার পরিবার সুরক্ষিত আছেন।

“আমরা এই সুসংবাদটা দিতে চাই যে তামিল ইলম আন্দোলনের নেতা প্রভাকরণ জীবিত আছেন, তিনি সুরক্ষিত আছেন। তার সম্বন্ধে যে গুজব ছড়ানো হয়ে এসেছে, তা এবার শেষ হবে,” জানানো হয় ওই বিবৃতিতে।

লেখক নেহুমারানের নেতৃত্বাধীন গোষ্ঠীটি আরও বলে, “প্রভাকরণ খুব তাড়াতাড়ি তামিল মানুষের মুক্তির জন্য তার পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন। আমরা চাই সারা দুনিয়ার তামিল জনগন তার পরিকল্পনার সমর্থনে এগিয়ে আসুন।“

তামিলনাডুর মানুষ এবং সেখানকার সব রাজনৈতিক দলগুলোকেও প্রভাকরণের সমর্থনের জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

এই দাবীও করেন মি. নেহুমারান যে তিনি প্রভাকরণের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেন এবং তাদের সম্মতি পাওয়ার পরেই প্রভাকরণের জীবিত থাকার কথা প্রকাশ্যে আনছেন।

এলটিটিই বহু দেশেই সন্ত্রাসী হিসাবে নিষিদ্ধ ছিল
দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কার্যকলাপের ওপরে নজর রাখে এমন একটি সংগঠন সাউথ এশিয়া টেররিজম পোর্টাল বা এসএটিপি লিখেছে, “এলটিটিইকে যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, যুক্তরাজ্য সহ বিভিন্ন দেশ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে আখ্যায়িত করে নিষিদ্ধ করেছে।

“যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এফবিআই ২০০৮ সালে তাদের এক রিপোর্টে এলটিটিই কে বিশ্বের সবথেকে বিপজ্জনক ও মারাত্মক উগ্রপন্থী সংগঠন বলে ব্যাখ্যা করেছিল,” লিখেছে এসএটিপি।

তারা আরও জানিয়েছে যে এলটিটিই একমাত্র সংগঠন যাদের সামরিক বাহিনীর তিনটি বিভাগই ছিল – স্থলসেনা বা টাইগার, সি টাইগার বা নৌসেনা আর বিমানবাহিনী। তারা বাহিনীতে নারী ও শিশুদেরও নিয়োগ করত বলে জানিয়েছে এসএটিপি। ইউনিসেফ ও হিউমান রাইটস ওয়াচ বারে বারে এলটিটিইর বিরুদ্ধে শিশুদের বলপূর্বক নিয়োগের অভিযোগ তুলে ধরেছে।

পোর্টালটি শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন সেনা প্রধান লেফটেনান্ট জেনারেল সারাথ ফনসেকাকে উদ্ধৃত করে লিখেছে যে ২০০৮ সালে এলটিটিইতে ১৮ হাজারেরও বেশি ক্যাডার ছিল।

তিন দশকের গৃহযুদ্ধে নিহত এক লাখেরও বেশি
কিছুদিন ধরেই তামিল ইলমের সমর্থকরা প্রভাকরণের জীবিত থাকার কথা বলে আসছেন।

এলটিটিই অবশ্য ২০০৯ সালেই প্রভাকরনের মৃত্যু এবং গৃহযুদ্ধে নিজেদের পরাজয় স্বীকার করে নেয়।

তবে প্রায় তিন দশক ধরে চলতে থাকা গৃহযুদ্ধে দেশের প্রেসিডেন্ট, প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতের প্রাক্তণ প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী, মন্ত্রী, মেয়র, সংসদ সদস্য সহ একশোরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে হত্যা করেছে।

বিবিসি তার একটি রিপোর্টে জাতিসংঘ, নিজস্ব সংবাদদাতাদের বর্ণনা, এবং সরকারী কর্মকর্তা সহ বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে বলেছিল যে গৃহযুদ্ধে এক লক্ষেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন।

জাতিসংঘ ওই গৃহযুদ্ধের চূড়ান্ত পর্যায়ে নজরদারি চালিয়েছিল এবং তাদের পর্যবেক্ষণ ছিল শুধু শেষ পর্যায়তেই প্রায় ৪০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছিলেন।

নিহতদের মধ্যে টাইগার এবং শ্রীলঙ্কার সেনা সদস্যরা যেমন আছেন, তেমনই রয়েছেন বহু রাজনৈতিক নেতা এবং সাধারন মানুষ।

সূত্র: বিবিসি নিউজ বাংলা
আইএ/ ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Back to top button