পশ্চিমবঙ্গ

পূর্ণতা পেল প্রেমের সম্পর্ক, সাতপাকে বাঁধা পড়লেন এইচআইভি পজিটিভ দুজন

কলকাতা, ১৪ ফেব্রুয়ারি – রাত পোহালেই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তার আগে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন দুই যুগল। লাজে রাঙা উঠেছিল নববধূর মুখ। রঙিন আলোয়, অতিথি সমাগমে, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, বৈদিক মন্ত্র পাঠ ও পুষ্পবৃষ্টির মধ্যে দিয়ে চার হাত এক হলো। সব রীতি ও প্রথা মেনে বিয়ে হলেও, বিয়ের পাত্র-পাত্রীর জীবন চলছে না নিয়ম মেনে। কারণ দুজনই এইচআইভি এইডসে আক্রান্ত। তবুও জীবনযুদ্ধের এই লড়াইয়ে সুনীতা যাদব ও সৌমিত্র গায়েন একে অপরকে সঙ্গী বেছে নিয়েছেন। তাদের বিয়ে দিলেন ‘শুভমস্তু’র নারী পুরোহিতরা। তবে দু’জনের কেউই ভাবেননি তাদের স্বপ্নপূরণ হবে।

জানা গেছে, তাদের প্রতি মাসে অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি চলে। এ জন্য কলকাতা মেডিকেল কলেজে আসতে হয় দুজনকেই। সেখানেই প্রথম দেখা ও আলাপ। আর আলাপ-পরিচয় থেকে সম্পর্কটা গড়ায় প্রেমে। অবশেষে সেই প্রেম পূর্ণতা পেল। কলকাতা সংলগ্ন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সোনারপুরে এইচআইভি রোগীদের নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করে আসছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘আপনজন’। সংগঠনটি ধুমধাম করে সুনীতা-সৌমিত্রের বিয়ের আয়োজন করে।

সুনীতার বাবা-মাও এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপরে তার ঠাঁই হয় এই হোমে। মেদিনীপুর থেকে তিন বছর বয়সে তাকে সোনারপুরের ‘আপনজন’ হোমে নিয়ে আসে হোম কর্তৃপক্ষ। নিজেও এইচআইভি আক্রান্ত সুনীতা। বর্তমানে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে সুনীতা ভারতের একমাত্র এইচআইভি আক্রান্তদের দ্বারা পরিচালিত ‘ক্যাফে পজিটিভ’ নামে একটি কফি শপের ফ্লোর ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অন্যদিকে সৌমিত্র ছোটবেলায় ডিপথেরিয়ার ইনজেকশন নেন। কিন্তু সিরিঞ্জটি এইচআইভির জীবাণুতে আক্রান্ত ছিল। যা তার শরীরে প্রবেশ করে এবং আক্রান্ত হন এইচআইভি জীবাণুর। যদিও ব্যবসা করে স্বাবলম্বী সৌমিত্র।

রোববার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বিয়ের আয়োজন করা হয় সোনারপুরের গোবিন্দপুরে আপনজন হোমে। বিয়ে উপলক্ষে সকাল থেকেই সেজে উঠেছিল আপনজন। অতিথিরাও আসতে শুরু করেছিল বিকেল থেকেই। সমগ্র বিয়ের মন্ত্রোচ্চারণ থেকে শুরু করে অগ্নিসাক্ষী হল অন্য ধাঁচে। কন্যাদান নয়, শুভমস্তু রীতিতে হল বিয়ের অনুষ্ঠান। বিয়েতে চার নারী পুরোহিত বৈদিক মন্ত্র পাঠ করেন এবং সেই মন্ত্রের ব্যাখ্যা করেন। পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে গোটা বিয়ের মঞ্চে একটা আলাদা আবেশ তৈরি করেছিলেন। অগ্নিসাক্ষী রেখে মালা বদল করে সাত পাকে বাঁধা পড়েন এইচআইভি পজিটিভ এই তারা।

বিয়ের কার্ড ছাপানো থেকে অতিথি আপ্যায়ন সবই করেছেন পল্লবীর হোমের কর্তারা। জানা যায়, বিয়ের অনুষ্ঠানে পাত্রপক্ষের আংটি থেকে খাওয়ার ব্যবস্থা সবই করেছেন সমাজের বেশ কিছু সহৃদয় ব্যক্তি।

সোনারপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষে মৃণাল বিশ্বাস বলেন, এইচআইভি পজিটিভ মা-বাবার থেকেও সুস্থ সন্তান পাওয়া সম্ভব। আমরা চাই সমাজের প্রত্যেক মানুষ এগিয়ে এসে এইচআইভি পজিটিভ শিশুদের দায়িত্ব গ্রহণ করুক। এইচআইভি আক্রান্তদের সমাজ যাতে বাঁকা চোখে না দেখে তাদের পাশে দাঁড়ায়, তাদের সুস্থ সমাজ উপহার দেয় সেই কারণেই এই উদ্যোগ।

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Back to top button