জাতীয়

রাজউক চেরাগে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের বাড়ি গাড়ি প্লট দোকান

অমিতোষ পাল

ঢাকা, ১৪ ফেব্রুয়ারি – কেউ উচ্চমান সহকারী, কেউ নিম্নমান সহকারী, কেউ বা বেঞ্চ সহকারী। তবে এক জায়গায় নিখুঁত মিল! সবাই কোটিপতি। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেণির ২০-৩০ হাজার টাকা মাসিক বেতনের কর্মচারী হলেও অনেকের রাজধানীতে রয়েছে এক বা একাধিক বহুতল বাড়ি, আধুনিক গাড়ি। অনেকের আছে প্লট, ফ্ল্যাট, দোকানপাট।

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে রাজউকের কয়েকজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা আছে। তবে তদন্তের গতি ধীর। অধিকাংশকে আইন স্পর্শ করছে না।
রাজউকের অফিস সহকারী বেলাল হোসেন চৌধুরী রিপনের অনিয়ম-দুর্নীতির মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক রতন কুমার দাস বলেন, ‘তদন্ত শেষ হওয়ার আগে এ নিয়ে কথা বললে নানা রকম চাপ আসে; তদন্তে বিঘ্ন ঘটে। তাই এ নিয়ে কথা বলা ঠিক হবে না।’

প্রতিষ্ঠান হিসেবে রাজউকের এই চিত্র সম্পর্কে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বিভিন্ন গবেষণায়ও রাজউকের অনিয়ম-দুর্নীতির নানা চিত্র উঠে আসে। এখানে চাকরি করে দুর্নীতির মাধ্যমে বাড়ি-গাড়ির মালিক হওয়াটা একেবারেই স্বাভাবিক। তবে কেউ এককভাবে দুর্নীতি করেন না। তাঁদের সহযোগিতা করেন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। অফিস সহকারীরা ওই সিন্ডিকেটের সামনের সারির লোক। পুরো সিন্ডিকেটই চিহ্নিত করতে হবে। তাদের জবাবদিহির আওতায় আনতে না পারলে দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। পেছনের সুরক্ষাকারীদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।’

কয়েকটি দৃষ্টান্ত :১. বিএনপিকে অর্থায়নের অভিযোগে গত ১৯ জানুয়ারি রাজউকের অফিস সহকারী জাফর সাদিককে রাজউক ভবন থেকে ধরে নিয়ে যায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। জিজ্ঞাসাবাদে জাফর সাদিক রাজধানীর আফতাবনগরের ডি ব্লকের ৫ নম্বর রোডে ২৯ নম্বর হোল্ডিংয়ে সাড়ে তিন কাঠা জমিতে ‘নূর আহমেদ ভিলা’ নামে আটতলা এবং ৩৩ শান্তিনগরে একটি ফ্ল্যাট থাকার কথা জানিয়েছেন। চাকরির পাশাপাশি রাজউকের প্লট বেচাকেনার মধ্যস্থতা, নকশা পাস করিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে পাওয়া ঘুষের টাকায় এসব সম্পদ গড়েছেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানান তিনি। পরে মূল অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ায় পরদিনই জাফর সাদিককে ছেড়ে দেয় পুলিশ।
অনুসন্ধানে জাফর সাদিকের মতো আরও ১৪ কর্মচারীর খোঁজ মিলেছে, যাঁদের বিত্তবৈভব কোনো অংশে কম নয়।

২. এম এ বায়েজিদ খান রাজউকের উত্তরা জোনের তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে আছেন টানা ১১ বছর। উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১৬ নম্বর সড়কের তিন কাঠার ৫ নম্বর প্লটটি তাঁর, সেখানে উঠেছে ছয়তলা বাড়ি। তৃতীয় তলায় পরিবার নিয়ে থাকেন তিনি। বর্তমানে এটির বাজারমূল্য অন্তত ১০ কোটি টাকা। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী ইসহাক মিয়া বলেন, ‘বছর দশেক হলো বাড়িটি স্যার বানিয়েছেন। তবে শুনেছি, জায়গাটি ছিল স্যারের শাশুড়ির।’
বায়েজিদ খান বাড়িতে আছেন কিনা জানতে চাইলে জানা যায়, নিজের গাড়িতে করে সকালেই অফিসে চলে গেছেন।

উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ১২ নম্বর রোডের ২০ ও ২২ নম্বর প্লট দুটিও বায়েজিদের। সেখানে দেখা যায়, পাশাপাশি দুটি প্লট এক করে ৯ তলা ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। নির্মাণকাজ তদারককারী বাবুল বলেন, ‘প্রতি তলায় হবে চারটি ফ্ল্যাট। স্যার হজে যাওয়ার আগে পাঁচটা কলাম তৈরি হয়েছিল। এখন পুরোদমে চলছে কাজ।’ কোনো ফ্ল্যাট বিক্রি হবে কিনা জানতে চাইলে বাবুল বলেন, ‘বিক্রি হবে না, ভাড়া হবে।’

স্থানীয়রা জানান, ১২ নম্বর রোডের তিন কাঠা আয়তনের একেকটি প্লটের দাম অন্তত ছয় কোটি টাকা। ১২ কোটি টাকার দুটি প্লটে ৯ তলা ভবন তুলতে খরচ আনুমানিক আরও ১২ কোটি টাকা।

অঢেল সম্পত্তির ব্যাপারে বায়েজিদ খান বলেন, ‘যেটাতে থাকি, সেই প্লট শ্বশুরবাড়ি থেকে পেয়েছিলাম। আর আমি একটি প্লট রাজউক থেকে পেয়েছি। সেটাতে বাড়ি করার জন্য হাউস বিল্ডিং থেকে লোন নিয়েছি।’
৩. ডাটা এন্ট্রি অপারেটর আবদুল মোমিনের মুগদায় রয়েছে প্রায় পাঁচ কাঠা জমির ওপর সাততলা বাড়ি। দক্ষিণ মান্ডার ৭১ নম্বর ওয়ার্ডের ৭ নম্বর বাড়িটির নাম ‘শান্তির নীড় সুলতানা মহল’। স্থানীয়রা জানান, এই বাড়ির বর্তমান দাম প্রায় ১০ কোটি টাকা। এ বাড়িতে একটি ছাড়া সব ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া। ভাড়া তোলেন মোমিনের ছোট ভাই সোহাগ। তিনি জানান, মতিঝিলের জসীম উদ্‌দীন রোডে তাঁর ভাইয়ের দুটি ফ্ল্যাট আছে। মোমিন সেখানে থাকেন। তবে ওই দুটি ফ্ল্যাটের হোল্ডিং নম্বর জানাতে অস্বীকৃতি জানান সোহাগ।

জসীম উদ্‌দীন রোডে স্থানীয় কয়েকজনের কাছে রাজউকের আবদুল মোমিনের বাড়ি কোথায়- জানতে চাইলে তাঁরা দেখিয়ে দেন। কয়েকজন জানান, মোমিন সাহেব অনেক ক্ষমতাশালী। বুকে সব সময় নৌকার ছবি লাগিয়ে চলাফেরা করেন। তাঁর ফ্ল্যাট নম্বর বি-৬, ১০ কবি জসীম উদ্‌দীন রোড, কমলাপুর, ঢাকা-১২১৭। ‘নক্সী কাঁথার মাঠ’ নামে ৯ তলা ভবনে এই ফ্ল্যাট ১ হাজার ৭২৫ বর্গফুটের, যার বাজারমূল্য ২ কোটি টাকার মতো।
ভবনের অন্য ফ্ল্যাটের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘মোমিন সাহেবের ফ্ল্যাটটি রাজকীয়ভাবে সাজানো। এখানে সাধারণ একটি ফ্ল্যাটের মাসিক ভাড়া প্রায় ৫০ হাজার টাকা।’

সাভারের ভাদাইল পুরোনো ইপিজেডসংলগ্ন হোসেন প্লাজার পাশে দুই বিঘা জমি কিনে টিনশেড তুলে পোশাককর্মীদের ভাড়া দিয়েছেন মোমিন। ওই জমির বর্তমান বাজারদর অন্তত ৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া পূর্বাচলে স্ত্রীর নামে একটি প্লট আছে বলেও জানান তাঁর ঘনিষ্ঠরা।

২৮ হাজার টাকা মাসিক বেতন পেয়ে এত কিছু কীভাবে করলেন- জানতে চাইলে মোমিন কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। পরে তাঁর দু’জন সহকর্মী ও রিহ্যাবের এক শীর্ষ নেতার মাধ্যমে এ প্রতিবেদককে একদিন ‘বসা’র প্রস্তাব দেন।
৪. রেখাকার থেকে পদোন্নতি পেয়ে সম্প্রতি নকশাকার হয়েছেন এমদাদ আলী। বাড্ডা পুনর্বাসন প্রকল্পে তাঁর পাঁচ কাঠার ওপর ছয়তলা বাড়ি। বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী মাহফুজ জানান, ‘স্যার তিনতলায় একটি ফ্লোর নিয়ে থাকেন। অন্যগুলো ভাড়া।’
সরেজমিনে দেখা যায়, বাড়ির ফটকে পাথরে খোদাই করে লেখা- ‘চাঁদপুর হাউস, বাড়ি নং-৫৩, রোড নং-১৩, দক্ষিণ বারিধারা ডিআইটি প্রজেক্ট, মেরুল বাড্ডা, ঢাকা-১২১২’। পাশের এক ভবনমালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আমি এমদাদ আলীকে রাজউকের বড় প্রকৌশলী হিসেবে চিনি। সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লার ডেমরার বাড়ির সামনে এমদাদ সাহেবের আরও দুটি সাত কাঠার প্লট আছে।’

মাসিক ২৪ হাজার টাকা বেতন পেয়ে এত সম্পত্তি কীভাবে করলেন- প্রশ্ন করলে এমদাদ আলী বলেন, ‘আমার আব্বাও রাজউকে ক্লারিক্যাল পোস্টে চাকরি করতেন। সে সুবাদেই বাড্ডায় আব্বা প্লটটি পেয়েছিলেন। সেখানেই বাড়িটি করা হয়েছে। অন্য যা আছে, তা আহামারি কিছু না।’

৫. ইমারত পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামানের চাকরির বয়স চার বছর পেরোয়নি। সম্প্রতি ২২০/৩/সি দক্ষিণ পীরেরবাগের আমতলা টাওয়ারের ই-৬ নম্বর ফ্ল্যাটটি কিনেছেন। ১ হাজার ৬৩০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটির দাম ২ কোটি টাকা। কিনেছেন জি প্রিমিও ব্র্যান্ডের গাড়িও (ঢাকা মেট্রো-গ ৩৬-৩৩০৪)। আমতলা টাওয়ারের কেয়ারটেকার আতাউর বলেন, ‘স্যার গুলশানে থাকেন। এই ফ্ল্যাট ভাড়া দেবেন। ভাড়া ২৫ হাজার টাকা।’
ফ্ল্যাটের মালিক কী করেন- জানতে চাইলে আতাউর জানান, ‘রাজউকে চাকরি করেন। আমাকে ভাড়া দেওয়ার সব দায়িত্ব দিয়ে গেছেন।’

মনিরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, কেউ ভবন করতে গেলেই তাঁদের নানা রকম ত্রুটি ধরে কাজ বন্ধ করে দেন তিনি। টাকা দিলে আবার কাজ শুরু হয়। একাধিক বাড়ির মালিক ও ডেভেলপার নাম প্রকাশ না করে বলেন, মনিরুজ্জামানের কাছে তাঁরা জিম্মি।
ফোন করে জানতে চাইলে মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমি বাইরে আছি। এখন এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারব না।’

৬. রাজউক কর্মচারী শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও রাজউকের অফিস সহকারী-কাম-কম্পিউটার অপারেটর নাসির উদ্দিন চৌধুরীর রাকিন সিটির ৫ নম্বর ভবনে রয়েছে দেড় কোটি টাকা দামের ফ্ল্যাট। ওই ফ্ল্যাট তিনি ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। থাকেন গোপীবাগে নিজস্ব ফ্ল্যাটে। নাসিরের রয়েছে বিলাসবহুল গাড়িও (ঢাকা মেট্রো-গ ৩৭-৯২০৫)।

জালিয়াতির মাধ্যমে পূর্বাচল প্রকল্পের লেআউট বদল, ঘুষ নেওয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ১৬ অক্টোবর দুদক নাসিরউদ্দিন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করে। এ ব্যাপারে নাসির উদ্দিন বলেন, ‘রাজউকে চাকরি করার পাশাপাশি আমি ঠিকাদারিও করি। আমার কী কী সম্পত্তি আছে, তা আয়কর নথিতে উল্লেখ আছে। রাকিনের ফ্ল্যাটও নথিতে লিপিবদ্ধ আছে।’

৭. সহকারী অথরাইজড অফিসার আওরঙ্গজেব সিদ্দিকী নান্নুর ইব্রাহীমপুরে তিনটি বাড়ি। কাফরুলের ২৫১/১ নম্বর ইব্রাহীমপুরে রয়েছে চার কাঠা জমির ওপর ছয়তলা বাড়ি, নিচতলায় মার্কেট। ওপরের তলাগুলো ভাড়া। নান্নু থাকেন ১৭৯ ইব্রাহীমপুরে ‘হক হেরিটেজ’ নামে তাঁর আরেকটি ৯ তলা বাড়ির দোতলায়। ওই ভবনের অন্য তলাগুলো ভাড়া। ছয় কাঠা জমির ওপর নির্মিত এ ভবনের বাজারদর অন্তত ২০ কোটি টাকা। এ ছাড়া ১১২/১ ইব্রাহীমপুরে আছে ‘ইবিএল বলাকা’ নামে ৯ তলা আরেকটি বাড়ি। গুলশান এলাকার ইন্সপেক্টর থাকার সময় নকশা অমান্য করে অতিরিক্ত তলা বাড়ানোর সুযোগ করে দিয়ে ভবনমালিকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে নান্নুর বিরুদ্ধে। বনানীতে এফআর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের পর একই অভিযোগে তিনি আটক হন। ১৬ তলা নকশার অনুমতি নিয়ে এফআর টাওয়ারকে ২৫ তলা করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন নান্নু। এফআর টাওয়ার মামলায় বর্তমানে তিনি জামিনে।

এ ছাড়া ১৬ তলার নকশা অনুমোদন নিয়ে বনানীর স্যারিনা হোটেলকে ২২ তলা করার সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে দুদকে চলা মামলায় হোটেল মালিক বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে নান্নুও আসামি।

এ ব্যাপারে কথা বলতে নান্নুর অফিস ও বাসায় গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। সহকর্মীরা জানান, তিনি ঠিকমতো অফিস করেন না। ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করলে নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়। নান্নুর এক প্রতিবেশী বলেন, ‘দুদকের লোকেরা হ্যারে খালি খুঁজে। হ্যায় দৌড়ের ওপর আছে।’

৮. রাজউক শ্রমিক দলের সভাপতি ও রাজউকের সার্ভেয়ার মাসুম বিল্লাহর উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর রোডের ২৪ নম্বর হোল্ডিংয়ে রয়েছে সাততলা বাড়ি। বাড়িটির বর্তমান বাজারদর অন্তত ১০ কোটি টাকা। অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে এক মাসের বেশি সময় দুদকের মামলায় কারাবন্দি তিনি। তবে রাজউক তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

৯. সুপারভাইজার খালেদ মোশাররফ তালুকদার রুবেলের বগুড়ার শেরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে রয়েছে সাতকাঠা জমির ওপর পাঁচতলা বিলাসবহুল বাড়ি। সাততলার নকশা করে ২০১৯ সালে পাঁচতলা পর্যন্ত কাজ শেষ করেন। প্রতি কক্ষে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র লাগানো। দোতলায় থাকেন তাঁর মা-বাবা। রুবেল মাঝেমধ্যে সেখানে যান। আর ঢাকায় মাদারটেকে থাকেন নিজের ফ্ল্যাটে। ব্যবহার করেন করোলা ফিল্ডার গাড়ি। রুবেলের পৈতৃক বাড়ি সিরাজগঞ্জের কাজীপুরেও বানিয়েছেন মার্কেট। তাঁর বাবা আবু হুরাইয়ারা তালুকদার একজন সাধারণ কৃষক।

১০. রাজউক শ্রমিক লীগের সভাপতি বেঞ্চ সহকারী বাশার শরীফকে নথি গায়েব করে বাণিজ্য করার দায়ে গত ২৫ আগস্ট চাকরিচ্যুত করে রাজউক। মানিকনগর পুকুরপাড়ে তাঁর রয়েছে ২ হাজার ৬০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট। রয়েছে আধুনিক টয়োটা নোয়া গাড়ি (নম্বর ঢাকা মেট্রো-ছ ১৯-০৪১৪)। গত ১৬ অক্টোবর দুদক বাশার শরীফের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণ, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতিসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে।
১১. রাজউক শ্রমিক লীগের সিনিয়র সহসভাপতি ও রাজউকের নিম্নমান সহকারী-কাম-মুদ্রাক্ষরিক ইউসুফ মিয়া ঢাকায় বাড়ি না করলেও গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ের মিঠানগর ইউনিয়নের মলিহাস গ্রামে করেছেন তিনতলা বড় বাড়ি। করেছেন শ’খানেক গরুর দুটি খামার।

১২. রাজউকের এমআইএস শাখার অফিস সহকারী বেলাল হোসেন চৌধুরী রিপনের পল্টনের ৬৬ শান্তিনগর হোল্ডিংয়ে রয়েছে সি-৫ নামে একটি আলিশান ফ্ল্যাট। প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার পর ওই স্ত্রীর দেওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে রিপনের অবৈধ সম্পদের তদন্ত করছে দুদক।

অন্যান্য :নকশাকার শহীদউল্লাহ বাবুর মিরপুরের পীরেরবাগে রয়েছে একটি বাড়ি। চালান একটি গাড়িও।
কনিষ্ঠ হিসাব সহকারী মোহাম্মদ হাসানের বাড্ডায় রয়েছে একটি ছয়তলা বাড়ি ও আফতাবনগরে প্লট।

আরেক নকশাকার শেখ ফরিদ। অনিয়ম-দুর্নীতির নকশায়ও তাঁর জুড়ি মেলা ভার। প্লটের জাল-জালিয়াতি ও ঘুষ নেওয়া, ক্ষমতার অপব্যবহার, এস্টেট শাখার কয়েকজন চিহ্নিত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও দালালের যোগসাজশে শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে তাঁর নামেও দুদকে মামলা চলছে।

উত্তরা মডেল টাউনের ১২ নম্বর সেক্টরে রেকর্ডকিপার মো. ফিরোজের রয়েছে ছয়তলা বাড়ি। কনিষ্ঠ হিসাব সহকারী মোহাম্মদ হাসানেরও আফতাবনগরে আছে ছয়তলা বাড়ি, যার দাম অন্তত ৫ কোটি টাকা।

চেয়ারম্যানের কথা :স্বল্প বেতনের চাকরি করেও এই কর্মচারীরা কীভাবে বিত্তবৈভবের মালিক হলেন- সে প্রসঙ্গে রাজউক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা বলেন, ‘সচিব পদমর্যাদায় চাকরি করলেও আমার রাজধানীতে ফ্ল্যাট বা বাড়ি নেই। তবে হ্যাঁ, সরকার যেসব সুযোগ-সুবিধা দিয়েছে, তাতে একজন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী লোন নিয়ে বড়জোর একটা ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারেন। সৎপথে থেকে এর বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। ওরা কীভাবে এসব করল, সেটা আমারও প্রশ্ন। রাজউকের অবস্থা এমন মনে হয়, পাবনা গিয়ে মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে। আগামী ৩১ মার্চ পর্যন্ত আমার চাকরি আছি। এ কয়টা দিন যেন ভালোভাবে কাটাতে পারি- সবার কাছে সেই দোয়া চাই।’

সূত্র: সমকাল
এম ইউ/১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Back to top button