জাতীয়

বিএসজেএ অ্যাওয়ার্ড নাইটে তারার মেলা

ঢাকা, ১২ ফেব্রুয়ারি – তারকার হাট বসেছিল শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামে। শনিবার সন্ধ্যা নামতেই শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাবেক-বর্তমান ক্রীড়াবিদদের পাশাপাশি সংগঠক, স্পন্সর প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের কর্তাব্যক্তিরা বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসজেএ) অ্যাওয়ার্ড নাইট অনুষ্ঠান আলোকিত করেন।

সন্ধ্যা ছয়টা থেকে ইনডোর স্টেডিয়ামের প্রাঙ্গণ ক্রীড়াবিদ, ক্রিকেটার, ফুটবলার, সংগঠক, পৃষ্ঠপোষক ও সাংবাদিকদের মিলন মেলায় রূপ নেয়। প্রধান অতিথি হিসেবে ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল উপস্থিত থেকে গত দশ বছরের ৪৬টি অ্যাওয়ার্ড প্রধান করেন।

অনুষ্ঠানের মধ্যমনি হয়ে ছিলেন বিশ্বসেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা নড়াইলে রাজনৈতিক কাজ শেষ করে আটটা নাগাদ অনুষ্ঠানস্থলে যোগ দেন। অনুষ্ঠানের সবচেয়ে আকর্ষণীয় অংশ ছিল সাকিবের হাতে মাশরাফির পুরষ্কার তুলে দেওয়া। ছেলের অসুস্থতার কারণে মুশফিক আসতে না পারায় পঞ্চপাণ্ডবকে এক মঞ্চে তোলা সম্ভব হয়নি। তামিম-মাহমুদ উল্লাহদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটারদের ছাড়াও লিটন-মিরাজ-আকবরদের মতো তরুণ ক্রিকেটাররা আলো ছড়িয়েছেন বিএসজেএ অ্যাওয়ার্ড নাইটে।

ক্রিকেটের বাইরে নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সালমা খাতুন, গলফার সিদ্দিকুর রহমান, আর্চার রোমান সানা, ফেন্সার ফাতেমা মুজিব, ভারোত্তোলক মাবিয়া আক্তার সীমান্ত অনুষ্ঠান আলোকিত করেছেন। বিএসজেএ অ্যাওয়ার্ড নাইটের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ছিল রেড কার্পেট। আরিফুল ইসলাম রনির উপস্থাপনায় পুরস্কারপ্রাপ্ত ক্রীড়াবিদরা অনুষ্ঠান স্থলে এসে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করেছেন।

৪৬টি অ্যাওয়ার্ডের মধ্যে ২০২০ সালের অ্যাওয়ার্ডটি বেশ আকর্ষণীয়। করোনার মহামারির সময়টাতে প্রথম দুই বছর কঠিন সময়ে পার করেছে দেশের মানুষ। বিশেষ করে ২০২০ সাল ছিল সংকটময়। সবার জন্য বেঁচে থাকাটাই যেন মুখ্য। করোনাকালীন ওই সময়টাতে কিছু মানুষের সাহসী ভূমিকা বেশ আলোচিত হয়েছিল। এমন ৩ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করেছে বিএসজেএ। তারা হচ্ছেন তামিম ইকবাল, আরিফা জাহান বিথী, সংগঠক আব্দুল গাফফার, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। এছাড়া বৈশ্বিক কোনও টুর্নামেন্টে প্রথম শিরোপা জেতা বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলকে ওই বছর প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রধান করে বিএসজেএ।

২০১৩ সালে বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচন হন গলফার সিদ্দিকুর রহমান। ২০১৪ সালে শ্যুটার আব্দুল্লাহেল বাকি, ২০১৫ সালে ক্রিকেটার মোস্তাফিজুর রহমান ও ২০১৬ সালে সাঁতারু মাহফুজা খাতুন শিলা বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন। ২০১৭ সালে বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান। এর বাইরেও সাকিব ২০২১ সালে প্রথম রানারআপের পুরষ্কারও জিতেছেন। ২০১৮ সালে বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন ক্রিকেটার মুশফিকুর রহিম। এছাড়া ২০১৪ সালে দ্বিতীয় রানারআপ এবং ২০১৭ সালে প্রথম রানারআপের পুরষ্কারও জেতেন মুশফিকুর রহিম। ২০১৯ সালে আর্চার রোমান সানা, ২০২১ সালে আর্চার দিয়া সিদ্দিকী এবং ২০২২ সালে ক্রিকেটার লিটন দাস বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন।

এর বাইরে বিএসজেএ বিশেষ অবদানের জন্য প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ডের প্রবর্তন করে। ২০১৩ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্য বিসিবি এবং ২০১৫ সালে ওয়ানডে দলকে ভালো একটি অবস্থানে পৌঁছে দেওয়ার স্বীকৃতি স্বরূপ সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন। ২০১৮ সালে এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে বাংলাদেশের মেয়েরা। পুরো দল প্রেসিডেন্ট’স অ্যাওয়ার্ড জেতে। ২০১৯ সালে ফুটবল রেফারি জয়া চাকমাকে প্রেসিডেন্ট’স অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়। ২০২২ সালে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে প্রেসিডেন্ট’স অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।

বর্ষসেরা কোচ হিসেবে ২০১৬ সালের পুরস্কার জেতেন ফুটবল কোচ গোলাম রব্বানি। ২০২১ সালে আর্চারি কোচ মার্টিন ফ্রেডেরিক এই পুরস্কার জেতেন। এছাড়া বর্ষসেরা সংগঠক হিসেবে পুরস্কার জেতেন ফুটবল সংগঠক মাহফুজা আক্তার কিরণ। বর্ষসেরা অ্যাসোসিয়েশন হিসেবে পুরস্কার জেতে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন। এছাড়া পৃষ্ঠপোষক হিসেবে পুরস্কার জেতে সিটি গ্রুপ ও সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেড।

২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড জেতা মাশরাফি বিন মর্তুজা বলেছেন, ‘বিএসজেএকে ধন্যবাদ জানাই আমাকে পুরস্কৃত করার জন্য। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের যারা এখানে আছেন প্রবীণ, নবীন, তরুণ উদীয়মান যারা আছেন সবাইকে ধন্যবাদ। আমি আশা করছি তরুণদের হাত ধরে ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশ সামনে এগিয়ে যাবে। শুধু ক্রিকেট নয়, সব খেলার জন্য আমার শুভ কামনা।’

২০১৭ সালে বিএসজেএ স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার সাকিব আল হাসান বলেন, ‘ধন্যবাদ সবাইকে। দোয়া করবেন, আমরা সবাই যেন আরও বেশি বেশি পুরস্কার পাই।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
আইএ/ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Back to top button