জাতীয়

কৃষিতে ভর্তুকি চলবে

ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি – কৃষিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, কৃষি খাতে চলমান ভর্তুকি অব্যাহত থাকবে। বন্ধ করা হবে না। আন্তর্জাতিক বাজারের সারসহ সব কৃষি পণ্যের দাম ব্যাপক বৃদ্ধি পেলেও সরকার ভর্তুকি দেওয়ায় সারের দাম এক টাকাও বাড়েনি।

তিনি আরও বলেন, নিম্নমানের বীজের বিষয়ে এখনো অনেক অভিযোগ আসে। মাঠ থেকে খবর পাই যে, চারা অর্ধেক গজায়নি। এখনো কিছু কোম্পানির প্রতারণা করার প্রবণতা আছে। অনেক সময় কৃষকেরা নিম্নমানের বীজ কিনে প্রতারিত হন। এতে একদিকে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, অন্যদিকে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

শনিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ সিড কংগ্রেসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

কৃষি মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশন এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই কংগ্রেস চলবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তার, গেস্ট অব অনার হিসেবে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জ্যান বেলি, এফএওর বাংলাদেশ প্রতিনিধি রবার্ট সিম্পসন, এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক সিড অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট মনিশ প্যাটেল, ইন্টারন্যাশনাল সিড ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি মাইকেল কেলার বক্তব্য দেন। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম আনিস উদ দৌলা।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সাত্তার মণ্ডল। তিনি বলেন, ভালো মানের বীজ দেওয়ার ফলে ইতোমধ্যে শতকরা ৮-১০ ভাগ ফলন বেড়েছে। আরও ভালো বীজ দিতে পারলে বছরে ধানের উৎপাদন ২১ লাখ টন বাড়ানো সম্ভব হবে।

বীজ কোম্পানিগুলোকে সততার সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, বীজের মানের বিষয়ে কৃষকের শতভাগ আস্থা অর্জন করতে হবে। কৃষি উৎপাদনের মূল উপকরণ হলো বীজ। ভালো ফলন ও উৎপাদনশীলতার জন্য মানসম্পন্ন বীজ অপরিহার্য। কাজেই বীজের মানের বিষয়ে কোনো রকম ছাড় দেওয়া হবে না। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদেরকে মানসম্পন্ন বীজ নিশ্চিত করতে কঠোরভাবে মনিটরিং করার নির্দেশ দেন তিনি।

কর্মকর্তাদেরকে আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করতে নির্দেশ দিয়ে মন্ত্রী আরও বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার সার, বীজসহ কৃষি উপকরণে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। বিগত ১৪ বছরে সার-বীজের কোনো সংকট হয়নি। বিশ্বব্যাপী সারের দাম চারগুণ বৃদ্ধি পেলেও সরকার দেশে সারের দাম বাড়ায়নি; বরং আগের চেয়ে চারগুণের বেশি ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছে। বীজের দামও বাড়ায়নি। কৃষি উৎপাদন বজায় রাখতে আগামীতেও সার-বীজের দাম বাড়াবে না।

কৃষি খাতে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বিষয়ে রাজ্জাক বলেন, সরকার বেসরকারি খাতকে উৎসাহ দিচ্ছে। ফলে ইতোমধ্যেই বীজ উৎপাদন, কৃষি যান্ত্রিকীকরণসহ কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্পে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ বেড়েছে। সরকার বেসরকারি খাতের বিকাশে পরিবেশ সৃষ্টির কাজ করছে। তবে বীজের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ব্যাপক ফারাক আছে। এই ফারাক কমিয়ে আনতে হবে।

বিদেশ থেকে যেসব নতুন ফসলের বীজ দেশে আসছে সে বিষয়ে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এসব জাত দেশের জন্য কতটুকু উপযোগী, কোনো রোগব্যাধি, নতুন পোকা বা জীবাণু আছে কিনা, কৃষককে ক্ষতিগ্রস্ত করবে কিনা- এসব বিষয়ে শক্তভাবে খতিয়ে দেখতে হবে।

কৃষি সচিব বলেন, এ ধরনের কংগ্রেস জ্ঞান ও প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং যোগাযোগ উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। বঙ্গবন্ধু ক্ষুধা ও দারিদ্র্য মুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছেন। তিনি কাজও শুরু করেছিলেন। এখন তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশের কৃষি এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের অর্থনীতির ভিত হিসেবে কাজ করছে কৃষি খাত। তবে এখনো মানসম্পন্ন বীজ এবং দক্ষ শ্রমিকের অভাব রয়েছে।

সূত্র: যুগান্তর
এম ইউ/১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Back to top button