জাতীয়

সদিচ্ছার অভাবেই তদন্তে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে, অভিযোগ পরিবারের

ঢাকা, ১১ ফেব্রুয়ারি – দীর্ঘ ১১ বছর পেরিয়ে গেলেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও আদালতে ৯৫ বারের মতো প্রতিবেদন দেওয়ার সময় পেছানোর ঘটনায় হতাশ সাগর-রুনির পরিবার। মানবাধিকার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তদন্তকারী সংস্থা হিসেবে বিভিন্ন ঘটনার তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করেছে র‌্যাব। কিন্তু দীর্ঘ ১১ বছরেও সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের কূলকিনারায় পৌঁছাতে না পারা সংস্থাটির ব্যর্থতাকে জানান দেয়। যদিও তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাবের দাবি, গুরুত্ব দিয়ে সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত চলছে।

২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙ্গার বার্তা সম্পাদক সাগর সারোয়ার এবং এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরুন রুনি। তাদের ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় মেহেরুন রুনির ভাই বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় গ্রেফতার করা হয় রুনির কথিত বন্ধু তানভীর রহমানসহ আট জনকে। বাকিরা হলেন—রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মিন্টু ওরফে বারগিরা মিন্টু ওরফে মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান অরুণ, পলাশ রুদ্র পাল, আবু সাঈদ ও বাড়ির নিরাপত্তারক্ষী এনাম আহমেদ ওরফে হুমায়ুন কবির। ঘটনার পর গোয়েন্দা পুলিশ থেকে তদন্তের দায়িত্ব পায় র‌্যাব। দুমাস পর কবর থেকে লাশ উঠানো আর কয়েকজনকে গ্রেফতার ছাড়া আর কোনও অগ্রগতি দেখাতে পারেনি র‌্যাবের তদন্তকারী কর্মকর্তারা।

সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। সেই ৪৮ ঘণ্টা বেঁধে দেওয়া সময় ৪৮ দিন, ৪৮ মাস পেরিয়ে ১১ বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের কোনও অগ্রগতি দেখাতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব।

সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের বিচার হোক সেটি সরকার চায় না বলেই সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে এমন অভিযোগ করেছেন মেহেরুন রুনির ভাই নওশের আলম।

তিনি বলেন, ‘অনেক বছর ধরেই র‌্যাব তদন্ত করছে, কোনও অগ্রগতি নেই। এমনকি তদন্তকারী সংস্থা কিংবা তদন্তকারী কর্মকর্তা কেউই আর আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন না। এত বছরেও যেহেতু কোনও অগ্রগতি দেখাতে পারেনি, মামলাটির কোনও কূলকিনারায় যেতে পারেনি, তাহলে আমি বলতে চাই এটি তদন্তকারী সংস্থার সদিচ্ছার অভাব।’

আইন ও শালিস কেন্দ্র (আসক) এর নির্বাহী পরিচালক মো. নূর খান বলেন, ‘সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের পরপরই পুলিশ এবং র‌্যাব যারাই তদন্ত সংশ্লিষ্ট ছিলেন, তারা এমন সব কথা তখন বলেছিলেন তাতে মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, তারা যথেষ্ট তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তারা এটা খুব জোরের সঙ্গে বলেছিলেন অনতিবিলম্বে অপরাধীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন। দুর্ভাগ্যজনক হলেও ঘটনার ১১ বছর পার হলেও আজ পর্যন্ত তারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারেননি। অসংখ্যবার তারিখ পরিবর্তিত হয়েছে। এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয় এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সেই ঘটনার উদঘাটন না করতে পারার ব্যর্থতা আমাদের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর বর্তায়। এত বছর পরও তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে না পারা দক্ষতা এবং পেশাদারিত্বের এক ধরনের দুর্বলতায় প্রকাশ পায়।’

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। ৯৫ বারের মতো তারিখ পরিবর্তন হয়েছে তার মধ্যেও প্রতিবেদন দিতে পারছে না তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব। এটি বর্তমানে বিচারাধীন বিষয়, এ বিষয়ে বেশি কিছু বলা সম্ভব নয়। তবে তদন্তের ক্ষেত্রে র‌্যাবের এত দীর্ঘ সময় নেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। অবশ্যই এ ঘটনার তদন্তের অগ্রগতি কী রয়েছে সে বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিয়ে ঘটনার প্রকৃত বিষয় জানানো উচিত।’

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখা জানায়, এখন পর্যন্ত ১৬০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নেওয়া হয়েছে। ৮ আসামিকে বিভিন্ন সময় রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কেউ ঘটনার দায় স্বীকার করেনি। তদন্ত করতে গিয়ে আরও তথ্যপ্রমাণ যাচাইয়ের জন্য কিছু ডিএনএ স্যাম্পল সংগ্রহ করা হয়েছিল। সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছিল। ডিএনএ রিপোর্টগুলো হাতে এসেছে। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।’

তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈনের দাবি, ‘সাংবাদিক দম্পতি হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি কতটুকু হয়েছে আমরা টাইম টু টাইম সেসব বিষয় আদালতকে অবহিত করেছি।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
আইএ/ ১১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Back to top button