ফেনী

কৃষি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কৃষকের টাকা তুলে নেওয়ার অভিযোগ

ফেনী, ৩০ নভেম্বর- নাম একজনের আর স্বাক্ষর আরেকজনের। এভাবে স্বাক্ষর জাল করে বরাদ্দকৃত টাকাসহ সরকারের বিভিন্ন কৃষিপণ্য কৃষকের নামে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ফেনীর ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। কৃষকরা বলছেন, যে স্বাক্ষরে টাকা তোলা হয়েছে, তা তাদের নয়। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন কৃষি কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম।

শহীদুল, মহি উদ্দিন ও জামাল উদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের অভিযোগে জানা গেছে, ফুলগাজী উপজেলায় কৃষি উন্নয়ন এবং লেবুজাতীয় ফল চাষের দুটি বিশেষ প্রকল্পের অধীনে ৪৬০ জন কৃষক রয়েছেন। এর অনুকূলে চলতি অর্থবছরে (২০২০-২১) কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগী কৃষক হিসেবে প্রায় সাড়ে ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। ৯০টি লেবুজাতীয় ফল বাগানের জন্য সাইট্রাস প্রকল্পে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এই টাকায় বিভিন্ন ধরনের সার ও বীজ দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখন পর্যন্ত চাষিরা পাননি। এরপর তারা দেখতে পান প্রকল্পের সুবিধাভোগীর তালিকায় কৃষকদের নামের পাশে স্বাক্ষর দেওয়া রয়েছে। অথচ সেই স্বাক্ষর তাদের নয়। যা দেখে তারা হতবাক হয়েছেন।

রহম মিঞা নামে এক কৃষক বলেন, ‘আমি ও অপর একজন কৃষকের নামের পাশে যে স্বাক্ষর দেখেছি, তা আমাদের নয়; জাল। আমরা দেখেছি, স্বাক্ষর শিটে যত সুন্দর করে আমদের অনেকের স্বাক্ষর দেওয়া আছে, তা আমরা দিইনি। এত সুন্দর করে আমরা লিখতে পারি না। এই প্রকল্পের আওতায় গাছ ছাড়া আর কোনোরকম সুবিধা আমাদের দেওয়া হয়নি।’

কাগজে-কলমে সুবিধা পাওয়া মাল্টা চাষি নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘মাল্টা গাছের প্রতিটির জন্য ৬০ টাকা বরাদ্দ হলেও কৃষকদের ১০-১৫ টাকার নিম্নমানের চারা সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে এর বেশিরভাগ গাছ মরে যাচ্ছে; যেগুলো বড় হচ্ছে সেগুলোরও ফলন নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন কৃষকরা।’

কৃষক আবুল কালাম বলেন, ‘এর আগে “সাইট্রাস প্রকল্পের সুবিধাভোগী ৯০ জন কৃষককে প্রায় সোয়া ৫ লাখ টাকার চুন, সার আর পরিবহন বিলসহ সরঞ্জামাদি দেওয়াই হয়নি।’

এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ফুলগাজী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘অফিসিয়াল কাগজের শিটে চাষিরা স্বাক্ষর দিয়েছেন। এখন আরও কয়েকটি উপকরণ যোগ করে বিল করে ওই টাকা তোলা হবে। এরপর তাদের মধ্যে ওই টাকা বিতরণ করা হবে।’

ফুলগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল আলীম এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত ১০-১২ জন কৃষক সোমবার (৩০ নভেম্বর) সকালে আমার কাছে এসেছিল। তারা অভিযোগ করেন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাদের স্বাক্ষর জাল করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তারা এর প্রতিকার চেয়েছেন। তাদের অভিযোগ তাক্ষণিক ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মহোদয়কে মুঠো ফোনে জানিয়েছি। তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।’

এ প্রসঙ্গে ফেনী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক তোফায়েল আহম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘এসব অভিযোগ এর আগে কখনও আমার নজরে আসেনি। এখন অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করা হবে। তদন্তে প্রমাণিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

আর/০৮:১৪/৩০ নভেম্বর

Back to top button