জাতীয়

শেখ হাসিনার টেবিলে ৬ নাম

পাভেল হায়দার চৌধুরী

ঢাকা, ৯ ফেব্রুয়ারি – দেশের ২২তম রাষ্ট্রপতি কে হতে যাচ্ছেন সে ব্যাপারে ‘টপ সিক্রেট’ নীতি অনুসরণ করছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। রাজনীতিক, বিচারপতি না আমলা কাকে বেছে নেবেন তা নিয়েও দোটানায় রয়েছেন সরকারপ্রধান। গত মঙ্গলবার সংসদীয় সভার পর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক সূত্র দাবি করেছে, রাজনীতিক ব্যক্তির ওপরই ভরসা রাখতে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

টপ সিক্রেট নীতি প্রসঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলেন, রাষ্ট্রপতি পদটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মর্যাদাপূর্ণ এ চেয়ারের ব্যক্তিটি কে হচ্ছেন তা প্রকাশ পেয়ে গেলে কারণে, অকারণে সমালোচনামুখর হয়ে উঠবে বিভিন্ন দল ও গোষ্ঠী। রাষ্ট্রপতি মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়ে যাওয়ার পর সমালোচনা তেমন হবে না। যিনিই রাষ্ট্রপতি হন তাকে কম বিব্রত করতেই ‘টপ সিক্রেট’ নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নীতিনির্ধায়ক নেতা বলেন, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সত্যিই ভাবিয়ে তুলেছে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনাকে। এখনো মনস্থির করে উঠতে পারেননি তিনি। তাই ঘনিষ্ঠজনদের কাছে এ ব্যাপারে কোনো ক্লু দেননি সভাপতি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ এক আত্মীয় বলেন, শেষ বেলায় ছয়জনকে গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে। তাদের মধ্যে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সংসদ উপনেতা মতিয়া চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রীর অর্থ উপদেষ্টা মসিউর রহমান, প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন, বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাতবারের সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার রয়েছেন। ফিজার প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। তিনি বলেন, পারিবারিক সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাসই আমি পেয়েছি।

ওই আত্মীয় আরও বলেন, এবারের রাষ্ট্রপতিকে দেশের ও জনগণের স্বার্থে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনৈতিক অস্থির অবস্থা, দেশি-বিদেশি শক্তির বিভিন্ন ধরনের তৎপরতার ভেতর দিয়ে সময় অতিবাহিত হবে এ বছর। পরিস্থিতি বিচক্ষণতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। সেইজনকেই বেছে নিতে অনেক ভাবতে হচ্ছে সংসদ নেতা শেখ হাসিনাকে।

তিনি বলেন, রাজনৈতিক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে, আদর্শে অবিচল ও দলের প্রতি অনুগত এমন একজন রাজনীতিবিদকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে বেছে নিতে চেষ্টা করছেন সংসদ নেতা।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্র জানায়, গতকাল সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে এক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন নিয়ে ঘনিষ্ঠ কয়েকজনের মধ্যে আলোচনায় মোস্তাফিজুর রহমান ফিজারের নাম আসে। ওই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, গত মঙ্গলবার সংসদীয় দলের সভায় সংসদ নেতা রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে নানা ধরনের ষড়যন্ত্র হয়েছে, বিভিন্ন মহল আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে রাষ্ট্রপতিকে ব্যবহার করার চেষ্টা করেছে। রাষ্ট্রপতি বুদ্ধিমত্তা, সাহস ও মনোবলের সঙ্গে তা মোকাবিলা করেছেন।

ওই বৈঠকে দেওয়া বক্তব্যে দলীয় সভাপতি বলেন, রাষ্ট্রপতি এমন একজনকে হতে হবে যিনি রাজনৈতিক সংকট দেখা দিলে রাজনৈতিকভাবেই সমাধান করতে পারবেন। অন্য কোনো শক্তির প্ররোচনায় অরাজনৈতিক হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দেবেন না তেমন একজনকেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে চান সংসদ নেতা, যিনি দলের ভেতরে জনপ্রিয় এবং সাহস-শক্তি ও মনোবলসম্পন্ন।

আওয়ামী লীগের সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ও মন্ত্রিসভায় থাকা একজন বলেন, যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে রাজনীতিকে গুরুত্ব দেবেন তেমন ব্যক্তিকে দেশের সর্বোচ্চ চেয়ারে বসাতে চান শেখ হাসিনা। এ বিবেচনা থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরীকে রাষ্ট্রপতি পদে এগিয়ে রাখছেন ওই মন্ত্রী।

তিনি বলেন, সংসদীয় দলে সংসদ নেতার বক্তব্যের শানেনজুল হলো, রাজনৈতিক ব্যক্তিকেই রাষ্ট্রপতির চেয়ারে বসাতে চান বঙ্গবন্ধুকন্যা। সততা ও বিশ্বস্ততার প্রশ্নে মতিয়া চৌধুরী আপসহীন ভূমিকায় থাকবেন সবসময়।

বাম রাজনীতিকে আদর্শ ধরে উঠে আসা মতিয়ার ওপর আওয়ামী লীগ সভাপতির বিশ্বাস তৈরি হয়েছে বহু আগে। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সাহসিকতার পরিচয় দেবেন তিনি। তাছাড়া নারী রাষ্ট্রপতি বানানোর শেখ হাসিনার আগ্রহও পূর্ণ হবে।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা দুই নেতা বলেন, সংসদ সদস্য কাউকে রাষ্ট্রপতি না বানানোর ভাবনা থাকলেও রাজনৈতিক নেতারই রাষ্ট্রপতি হওয়া প্রয়োজন, শেখ হাসিনা এমন বিবেচনাই করছেন এখন

সূত্র: দেশ রূপান্তর
আইএ/ ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Back to top button