সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী ইস্যু: এক বক্তব্যেই বিভক্তি সিলেট আ. লীগে
সিলেট, ০৮ ফেব্রুয়ারি – আসন্ন সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হতে তৎপর অনেকে। অন্তত অর্ধডজন আওয়ামী লীগ নেতা প্রার্থী হতে নীরবে নিভৃতে প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন।
তাদের মধ্যে রয়েছেন, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আসাদ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, যুগ্ম সম্পাদক এ টি এম এ হাসান জেবুল। তারা নিয়মিত কৌশলে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছেন। এ অবস্থায় হঠাৎ আলোচনায় আসেন যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
গত ২২ জানুয়ারি দেশে ফিরলে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের সহস্রাধিক নেতাকর্মী। এরপর তিনি রাজধানী ঢাকায় গিয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেন। মাঠে কাজ করার জন্য দলীয় সভানেত্রীর ‘সবুজ সংকেত’ধরে নিয়ে সিলেট ফিরেই আনোয়ারুজ্জামান নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াস চালিয়ে যান। সেই সঙ্গে মাঠে ময়দানে নিজেকে জানান দিতে শুরু করেন।
নগরবাসীর মন জয়ের চেষ্টায় নির্বিঘ্নে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী এই নেতা। এরইমধ্যে তাকে ঘিরে সিলেট আওয়ামী লীগে বড় একটি বলয়ও তৈরী হয়ে গেছে। তাতেও কোনো রাজনৈতিক অঙ্গণে কোনো বিরোধ বা বিপত্তি দেখা দেয়নি।
কিন্তু বাগড়া বাধে সোমবারের (০৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নগরের ২৪ নং ওয়ার্ডের সাদারপার এলাকায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর উদ্যোগে শীতার্থদের কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠান ঘিরে।
ওই অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ময়সনসিংহের দায়িত্বপ্রাপ্ত) শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বক্তব্যে বলেন, আমাদের নেত্রী প্রায় সময় নির্দেশ দিয়ে থাকেন মানুষের সুখে-দুঃখে পাশে থাকার। আগামী দিনে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর নেতৃত্বে সিলেট সিটি করপোরেশন ও সংগঠন যাতে গতিশীল হয়, গণমুখী হয়, জনগণের জন্য বেশি করে কাজ করতে পারেন, তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী আপনাদের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে তাকে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে মহিলাদের কাছে যান, তাদের সুখ, দুঃখ শুনেন। তাই প্রথম পর্যায়ে এসেছেন আপনাদের জন্য শীতবস্ত্র নিয়ে। তার নেতৃত্বে সিলেট সুন্দর ও স্মার্ট নগরী হবে।
সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইস্যু ধরে নিয়ে তার বক্তব্য বিভেদ তৈরী করেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগে। এ কারণে শফিউল আলম নাদেলের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগ। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন বিবৃতিতে বলেন, সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সিটি কর্পোরেশনের কোনো একটি ওয়ার্ডে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ময়মনসিংহ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক সিলেট সিটি মেয়র নির্বাচনের মনোনয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার বরাত দিয়ে যে বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন, তা মহানগর আওয়ামী লীগের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
এ বিষয়ে আমাদের সুস্পষ্ট বক্তব্য হলো- প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা মহানগর আওয়ামী লীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত হিসেবে আমরা পাইনি। তাই ঐতিহ্যবাহী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সিলেট মহানগরের শৃঙ্খলাসহ দলীয় ভাবমূর্তি যাতে বিনষ্ট না হয় এবং বিভ্রান্তি যাতে না ছড়ানো হয়, এ জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান।
সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, দফতর সম্পাদক খন্দকার মহসিন কামরান স্বাক্ষরিত বিবৃতির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, আনোয়ারুজ্জামান আওয়ামী লীগের পরিক্ষিত নেতা। বন্যা, করোনাসহ মানুষের সুখে-দুঃখে সব সময় পাশে ছিলেন। নেত্রী তাকে কাজ করে যাওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন। অথচ তারা (মহানগর আওয়ামী লীগ) কেন এমন বিবৃতি দিলেন, বুঝে উঠতে পারছি না। আমি যা বলেছি, বক্তব্যের রেকর্ডও আছে। মেয়র পদে আনোয়ারুজ্জামানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, এমন কথাতো বলিনি। এ প্রসঙ্গে কোনো বক্তব্যও রাখিনি। প্রার্থী নির্ধারণ করা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের এখতিয়ার। এখানে শিষ্টাচার লঙ্ঘনের মতো কিছুই করিনি। বরং বিবৃতিদাতা মহানগর আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি নিজেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচারণা চালানো শিষ্টাচার বহিঃর্ভূত কাজ করছেন।
২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশন প্রতিষ্ঠার পর চারবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক নির্বাচনেই মেয়র পদে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী ছিলেন বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ২০২০ সালের ১৫ জুন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান কামরান। ফলে সিসিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কে হচ্ছেন, এ নিয়ে আলোচনা চলে আসছিল। কেউ প্রকাশ্যে না আসলেও অন্তত অর্ধডজন প্রার্থী কৌশলে নিজেদের জানান দিচ্ছিলেন। চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে সিসিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। আর এই সময়ে মাঠে কাজ করতে কেন্দ্রের ‘সবুজ সংকেত’ পেয়ে যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেন আনোয়ারুজ্জামান। মাঠে তার অবস্থান জানান দিতে গেলে দলের অন্য প্রার্থীরাও নিজেদের অবস্থান জানান দিতে শুরু করেছেন।
সূত্র: বাংলানিউজ
আইএ/ ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩