মধ্যপ্রাচ্য

মা-বোন-ভাই নিহত, ধ্বংসস্তুপ ফেরত শিশু রাগাদ চাচার বাসায়

আঙ্কারা, ০৭ ফেব্রুয়ারি – ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনের নিচে চাপা পড়েও ভাগ্যক্রমে জীবিত উদ্ধার হওয়া সেই শিশুটির পরিচয় মিলেছে। তার নাম রাঘাদ ইসমাইল। বয়স ১৮ মাস। বর্তমানে শিশুটি তার চাচা আবু হুশামের আশ্রয়ে রয়েছে। ভাগ্যক্রমে শিশুটি বেঁচে ফিরলেও মারা গেছেন তার মা, ভাই ও বোন। বাবাও লড়ছেন মৃত্যুর সঙ্গে। খবর বিবিসির।

শিশু রাঘাদ ইসমাইলের চাচা আবু হুশাম বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, ‘ওর বাবার কোমর-পিঠ ভেঙে গেছে। তার অবস্থা সংকটাপন্ন। ওর মা গর্ভবতী ছিলেন। তিনি মারা গেছেন। পাঁচ বছর বয়সী বোন ও চার বছর বয়সী ভাইকেও হারিয়েছে ও (রাঘাদ)।’

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোরে তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তে আঘাত হানা ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। এতে বহু ভবন ধসে পড়েছে। আজাজ শহরে ধসে পড়া একটি ভবনের স্তূপ সরিয়ে উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছিলেন কর্মীরা। এসময় রাঘাদ ইসমাইল নামের শিশুটিকে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায়।

 

সিরিয়ার আজাজ শহরের ওই শিশুটিকে উদ্ধারের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে দেখা যাচ্ছে, ধ্বংসস্তূপের ভেতর থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় ছোট্ট শিশুটিকে কোলে নিয়ে দৌঁড়ে যাচ্ছেন এক উদ্ধারকর্মী।

এদিকে, তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা তিন হাজার ছাড়িয়েছে। পাশাপাশি অবস্থিত দুই দেশে এ পর্যন্ত তিন হাজার ৫৫ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে শুধু তুরস্কেই মারা গেছেন এক হাজার ৭৬২ জন। সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২৯৩ জনে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, তুর্কি দুর্যোগ ও জরুরি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ভূমিকম্পে এ পর্যন্ত এক হাজার ৭৬২ জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে ১২ হাজার ৬৮ জনকে। দেশটিতে অন্তত পাঁচ হাজার ৬০৬টি বহুতল ভবন ধসে পড়েছে।

অন্যদিকে সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ভূমিকম্পে অন্তত এক হাজার ২৯৩ জনের প্রাণহানির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দেশটির সরকারনিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ৫৯৩ জন এবং বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় ৭০০ জনের মৃত্যুর তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া সিরিয়ার এ দুই অঞ্চলে যথাক্রমে এক হাজার ৪১১ জন এবং দুই হাজার মানুষ আহত হয়েছেন।

এদিকে, ভূমিকম্পে হতাহতদের স্মরণে সাতদিনে জাতীয় শোক ঘোষণা করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। স্থানীয় সময় সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাতে এক টুইটবার্তায় তিনি এ ঘোষণা দেন।

টুইটবার্তায় প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান লেখেন, ‘সাতদিনের জাতীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। এসময়ে আমাদের জাতীয় পাতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন করা হবে। আগামী রোববার (১২ ফেব্রুয়ারি) সূর্যাস্ত পর্যন্ত এ শোক পালন করা হবে। দেশে ও বিদেশে তুরস্কের বিভিন্ন অফিসে হতাহতদের প্রতি শোক জানিয়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিতভাবে উত্তোলনের আহ্বান জানাচ্ছি।’

সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোররাত সোয়া ৪টার দিকে তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চল ও সিরিয়ার উত্তরাঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হানে। ৪০ সেকেন্ড ধরে চলা এ ভূমিকম্পের কম্পন পৌঁছায় লেবানন ও সাইপ্রাসেও।

ধারণা করা হচ্ছে, সোমবার ভোরে আঘাত হানা ভূমিকম্পে ধসে পড়া ভবনগুলোতে অসংখ্য মানুষ আটকা পড়েছে। কর্মীরা ধ্বসংস্তূপের মধ্য থেকে আটকে পড়াদের উদ্ধারে তৎপরতা জোরালো করেছে।

ভয়াবহ এ ভূমিকম্পে তুরস্কের অন্তত ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব শহর দেশটির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত। আল-জাজিরার সাংবাদিক সিনেম কোসেওগ্লু ইস্তাম্বুল থেকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

১৯৯৯ সালের পর এটাই তুরস্কে সবচেয়ে শক্তিশালী ভূমিকম্প। ওই বছরের আগস্টে সাত দশমিক ছয় মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প তুরস্কের দক্ষিণে ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চল মারমারায় আঘাত হানে। ১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পে দেশটিতে সাড়ে ১৭ হাজার মানুষ নিহত হয়।

সূত্র: জাগো নিউজ
আইএ/ ০৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Back to top button