সংগীত

‘বন্ধ জানালা’র ভুল ব্যাখ্যা, কঠোর ব্যবস্থা নিচ্ছে শিরোনামহীন

ঢাকা, ০৬ ফেব্রুয়ারি – দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদল শিরোনামহীন। তাদের জনপ্রিয় গানগুলোর একটি ‘বন্ধ জানালা’। সম্প্রতি এই গানটি নিয়ে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। যার শিরোনাম দেওয়া হয়, ‘শিরোনামহীন ইলুমিনাতি এজেন্ট’। ভিডিওতে দেখা যায়, একজন সবাইকে বলছেন- শিরোনামহীন বাংলাদেশের ইলুমিনাতির এজেন্ট। শিরোনামহীন তাদের গানে ইসলামবিরোধী নানা দৃশ্য ব্যবহার করেছে বলেও দাবি করেন তিনি। ভিডিওটি প্রকাশের কিছুক্ষণের মধ্যেই তা ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন জায়গায়।

যা নজরে এসেছে শিরোনামহীন ব্যান্ডের দলনেতা জিয়াউর রহমান জিয়ার। আর এমন ভুল ব্যাখ্যার কঠোর সমালোচনাও করেছেন দলনেতা। দলটির পক্ষ থেকে নেওয়া হচ্ছে আইনি পদক্ষেপও।

জিয়া বলেন, ‘শাহ জিম নামের এক ব্যক্তি প্রথমে ভিডিওটি প্রকাশ করেন। যেখানে ‘বন্ধ জানালা’ গানটি নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা দেন তিনি। বিষয়টি আমরা জানার পর সেই ভিডিওটি ডিলিট করা হয়েছে। কিন্তু এখনো অনেক ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবে সেই ভিডিওটি রয়ে গেছে। এসব ভিডিও তো আর আমাদের খুঁজে খুঁজে বের করা সম্ভব না। তাই আমরা আইনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। আজ নয়তো আগামীকালের মধ্যেই বিষয়টি সবার প্রকাশ্যে আসবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘‘আমাদের ‘বন্ধ জানালা’র মেসেজ হচ্ছে মনের বন্ধ জানালা খুলে দেওয়া। ভেতরগত অন্ধকার দূর করার। সেই রকম এক অন্ধকার হলো ইলুমিনাতি। এমন অন্ধকার আরও অনেক কিছুই হতে পারে। হিংসা, বিদ্বেষ, ক্রোধ অনেক কিছুই। গানে সেরকম দৃশ্য দেখেই কেউ যদি ধরে নেয় আমরা ইলুমিনাতি এজেন্ট- তাহলে তো এটা দুঃখের বিষয়। কেউ যদি মাদককে না বলার ক্যাম্পেইনে মাদক সেবনের চিত্র দেখায় তাহলে কি আমরা ধরে নেব সে নিজেই মাদক সেবনকারী? সে তো বরং মাদক সেবন করলে যে মানুষ ধ্বংস হয়, সেটাই বোঝাতে চেয়েছে। বন্ধ জানালা অ্যালবামের প্রচ্ছদে ছিল একটি আপেলকে চারদিক থেকে স্ক্রু মারা। তার মানে কি আমরা বলতে চেয়েছি সব কিছুর সৌন্দর্যকে ক্ষত বিক্ষত করো? আমি মনে করি, কোনো কিছু না জেনে এমন বিভ্রান্তকর অপপ্রচার চালানো ঠিক না।’’

শিরোনামহীন ব্যান্ডের এই দলনেতা মনে করেন এটি শুধু তাদের বেলাতেই নয়। অন্য ব্যান্ডদলের গানের বেলাতেও এমনটা হয়েছে। তার ভাষ্য, ‘মন গড়া, বানোয়াট কিছু কাহিনি তৈরি করে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিশেষ করে বাংলা ব্যান্ড সংগীতকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। জনপ্রিয় হওয়ার উদ্দেশ্যে এবং টাকা কামানোর জন্য শিরোনামহীন, ওয়ারফেজ, মেসিকে নিয়েও এ ধরনের কনটেন্ট তৈরি করা হয়েছে।’

এদিকে, বিষয়টি নিয়ে সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার (এডিসি) নাজমুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘শিরোনামহীন ব্যান্ডদলের পক্ষ এই বিষয়টি নিয়ে আমাকে ফোন করা হয়েছে। আমি তাদের পরামর্শ দিয়েছি অভিযোগ করার। তারা অভিযোগ করলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব ও আইনগত ব্যবস্থা নিবো।’

অন্যদিকে, ২০০৯ সালে জি-সিরিজের ব্যানারে প্রকাশ হয় শিরোনামহীন ব্যান্ডের ‘বন্ধ জানালা’ অ্যালবামটি। সেখানে থাকা শিরোনামের গানটির ভিডিও নিয়েই এখন বিভ্রান্তকর অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। গানটির অফিসিয়ার ভিডিও ইউটিউবে পাওয়া গেলেও, সেখানে পাওয়া যায়নি গানের কোনো সাউন্ড। দেখা যাচ্ছে, ৪-৫ দিন আগে সেই অডিও ডিলিট করা হয়েছে। তবে গানটি শোনা যাচ্ছে স্টেজ শো বা অন্য কোনো পোস্টারের আড়ালে।

উল্লেখ্য, ইলুমিনাতি প্রাচীনকাল থেকেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পৃথিবীবাসীর কাছে পরিচিত একটি শব্দ। সাধারণভাবে বলতে গেলে ইলুমিনাতি শব্দের অর্থ হলো ‘আলোকিত জগত’। বলা হয়ে থাকে বিগত দুইশ বছরে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া সব বড় বড় যুদ্ধ, রাজনৈতিক ও সামজিক ঘটনাবলীর পেছনে রয়েছে ইলুমিনাতির প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ প্রভাব। ইলুমিনাতির প্রধান লক্ষ্যই ছিল নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে নীরবে কাজ করে যাওয়া। যাদের মধ্যে কোনো ধর্ম ভেদাভেদ থাকবে না, সেই সঙ্গে মানুষ মুক্তভাবে চিন্তা করতে পারবে। ইলুমিনাতির প্রতীক হিসেবে শুরুতে রোমান রূপকথার জ্ঞানের দেবী মিনারভার পেঁচাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে পিরামিডের মাঝে একচোখ ইলুমিনাতির প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ধীরে ধীরে ইউরোপ জুড়েও ছড়িয়ে পড়তে লাগল ইলুমিনাতির শাখা। একটা সময় ইলুমিনাতির অভ্যন্তরে ধর্মবিদ্বেষ শুরু হয়। এটি একটি নাস্তিক সংঘ, তারা নিজেদের উদ্দেশ্য সাধনের জন্য মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে- সেটা রটে যায় ইউরোপে। তখন ধর্মহীন ইলুমিনাতির বিরুদ্ধে জোর গণমত গড়ে উঠল। একটা সময় এই সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা ও এর সদস্যদের গ্রেপ্তার করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

এম ইউ/০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Back to top button