১৯১টি নিউজ পোর্টাল বন্ধের ঘোষণায় যুক্তরাষ্ট্রে উদ্বেগ
ঢাকা, ০৫ ফেব্রুয়ারি – বাংলাদেশের প্রায় দুই শতাধিক অনলাইন নিউজ পোর্টাল ব্লক করার ঘোষণায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস। তিনি বলেন, ‘আমরা সাম্প্রতিক ঘোষণার বিষয়ে উদ্বিগ্ন যে, ১৯১টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ব্লক করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আমরা উদ্বিগ্ন যে ডেটা সুরক্ষা আইনের সর্বশেষ খসড়ায় একটি স্বাধীন ডেটা তদারকি কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়নি এবং এ আইনে ফৌজদারি শাস্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
আজ রোববার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর ইএমকে সেন্টারে ‘অনলাইন ফ্রিডম অ্যান্ড বিজনেস ইনভেস্টমেন্ট ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্যানেল ডিসকাশনে ডাটা প্রটেকশন অ্যাক্ট বা উপাত্ত সুরক্ষা আইন প্রসঙ্গে এসব উদ্বেগ জানান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত। প্যানেল আলোচনায় দেয়া লিখিত বক্তব্যে উদ্বেগের বিষয়গুলো জানান তিনি।
আলোচনায় আরো উপস্থিত ছিলেন আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পোটিআইনে, টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এবং ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রবার্ট চ্যাটারটন ডিকসন।
পিটার হাস বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন যে, উপাত্তা সুরক্ষা আইন যদি উপাত্তের স্থানীয়করণের প্রয়োজনীয়তাকে কঠোরভাবে অনুসরণ করার শর্ত দিয়ে অনুমোদন করা হয় (আইনে পরিণত করা হয়) তাহলে বর্তমানে বাংলাদেশে কাজ করছে এমন কিছু মার্কিন কোম্পানি স্থানীয় বাজার ছেড়ে যেতে বাধ্য হতে পারে। একইভাবে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম পরিচালনার ক্ষেত্রে যদি কোম্পানিগুলোকে ব্যবহারকারীদের তৈরি করা কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর কারণে অপরাধের দায় নিয়ে ফৌজদারি আইনের মুখোমুখি হতে হয়, তাহলে তারা এখানে তাদের ব্যবসায় বিনিয়োগ করা থেকে বিরত থাকবে। এর পরিণতি বাংলাদেশের জন্য খুবই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।’
ব্যবসা আকর্ষণের জন্য উদ্ভাবনের সংস্কৃতি খুবই গুরুত্বপূর্ণ আর এজন্য অনলাইন উন্মুক্ত ও স্বাধীন হওয়া প্রয়োজন উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সেই সূত্রে পরবর্তী যে বিষয়টি আলোচনায় চলে আসে সেটা হলো: মানবাধিকার। যুক্তরাষ্ট্র ব্যবহারকারী ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সুরক্ষার জন্য অনলাইন বিষয়বস্তু পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে এবং এটি কোনো সহজ কাজ নয়। তবে আমরা অনলাইন প্ল্যাটফর্মের যে খসড়া আইন দেখেছি সেখানে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এমন অনলাইন কনটেন্ট বা বিষয়বস্তুর সংজ্ঞার বিস্তৃত পরিসর নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে।’
১৯১ টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল ব্লক করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘সমালোচনা গ্রহণ করার সক্ষমতা এবং অপ্রীতিকর বক্তব্য হলেও বাকস্বাধীনতা নিশ্চিত করা শক্তিশালী গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস নাগরিক সমাজের অনেক সংস্থা এবং সাংবাদিকদের কাছ থেকে এ আইনের বিষয়ে শুনেছে। তাদের ভয় হলো এ নিয়ম ও আইন মৌলিক মানবাধিকার ও স্বাধীনতাকে সীমিত করবে। ডেটা সুরক্ষা আইনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আমরা উদ্বিগ্ন যে ডেটা সুরক্ষা আইনের সর্বশেষ খসড়ায় একটি স্বাধীন ডেটা তদারকি কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা রাখা হয়নি এবং এ আইনে ফৌজদারি শাস্তি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যদিও আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে প্রতিটি দেশ তাদের স্থানীয় প্রেক্ষাপটকে অবশ্যই বিবেচনায় রাখবে কিন্তু আমরা বাংলাদেশসহ সকল দেশকে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট আন্তর্জাতিক মানদণ্ডগুলো সমুন্নত রাখার আহ্বান জানাই। অনলাইন বক্তৃতা এবং ডেটা সুরক্ষা করা সহজ কাজ নয়। এটি অত্যন্ত জটিল বিষয়। আর সেই কারণেই আমরা এ আলোচনা করছি।’
সূত্র: বণিক বার্তা
আইএ/ ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩