জাতীয়

হিরোকে যারা জিরো বানাতে এসেছে, তারাই এখন জিরো হয়ে গেছে

বগুড়া, ০৫ ফেব্রুয়ারি – ‘হিরো আলম জিরো হয়ে গেছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মো. আশরাফুল আলম ওরফে হিরো আলম বলেছেন, হিরোকে যারা জিরো বানাতে এসেছে, তারাই জিরো হয়েছে।

আজ শনিবার রাত ৯টায় নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে লাইভে এসে এ কথা বলেন হিরো আলম।

লাইভে হিরো আলম বলেন, ‘গত ২-৩ দিন ধরে কিছু দল আমাকে নিয়ে কিছু কথা-বার্তা বলছে। যেমন- আজকে দেখলাম আওয়ামী লীগের আমাদের নেতা ওবায়দুল কাদের স্যার আজকে হিরো আলমকে নিয়ে কিছু মন্তব্য করেছেন যে, বিএনপি নাকি আমাকে দাঁড় করিয়েছে। আমার কথা বিএনপি কেন আমাকে দাঁড় করিয়ে দেবে?’

‘ভোটের দিন বিএনপির কেউ আমার পাশে ছিল? আপনারা কেউ দেখেছেন? আমি স্বতন্ত্ৰ প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছি। আমাকে কেউ দাঁড় করিয়ে দেয়নি’, বলেন তিনি।

হিরো আলম বলেন, ‘অন্যদিকে, বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্যারও বলছেন, এই সরকার নাকি অসহায় হয়ে গেছে। এই সরকার অসহায় হয়েছে কি না জানি না। তবে আমি আলম যে অসহায় হয়ে গেছি, এই প্রশ্নের জবাব কে দেবে? আমার ভোটের ফলাফল যে কেড়ে নেওয়া হলো, এ প্রশ্নের জবাব কে দেবে? আমি কার কাছে বিচার দেব? আমি যাদের কাছে বিচার দিচ্ছি তারা তো বিচারের কোনো ফলাফল দিচ্ছে না।’

‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে বলব। সবার বিচারই তো আপনি করেন, আমাদের বাংলাদেশের পুরো বিচার। তাই আমিও আপনার কাছে বিচার দিলাম যে, আমার ভোট সুষ্ঠু মতো হলো, কিন্তু আমার ভোটের ফলাফল সুষ্ঠু মতো রায় দেওয়া হলো না কেন? আমি এর বিচার চাই’, যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আর একটা বিষয় ওবায়দুল কাদের স্যার বলেছেন, হিরো আলম এখন জিরো হয়ে গেছে। এটা ভুল বলেছেন। হিরোকে কেউ কোনোদিন জিরো বানাতে পারে না। হিরো হিরোই থাকে। কারণ আমাকে কেউ জিরো বানাতে পারেনি, পারবেও না। এটা আপনি ভুল বলেছেন। হিরো আলম হিরোই আছে। হিরোকে যারা জিরো বানাতে এসেছে, তারাই জিরো হয়েছে।’

‘হিরো আলম এখন বিএনপির কাঁধে ভর দিয়ে চলছে। ওবায়দুল কাদের স্যার এ কথাও বলেছেন। হিরো আলম কারও কাঁধের ওপর ভর করে চলে না। আজ এত দূর এসেছি কেউ সহযোগিতা করেনি। আমি নিজে পরিশ্রম-সংগ্রাম করে আজকে হিরো আলম হয়েছি’, বলেন তিনি।

হিরো আলম বলেন, ‘হিরো আলমকে একটা প্ল্যান-চক্রান্ত করে হারানো হয়েছে। তাছাড়া ভোটে আমরা যে গণজোয়ার দেখেছি, হিরো আলমের হারার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।’

‘আর একটা কথা ওবায়দুল কাদের স্যার বলেছেন যে, পার্লামেন্টকে ছোট করা হবে হিরো আলম যদি সংসদে যায়। আমার কথা- আমি যদি পার্লামেন্টে গেলে পার্লামেন্ট ছোটই হয়, তাহলে যখন আমরা নমিনেশন পেপার কিনি তখন আপনাদের কিন্তু এটা বলা উচিত ছিল যে, হিরো আলমের কাছে যেন মনোনয়নপত্র বিক্রি করা না হয়’, বলেন তিনি।

হিরো আলম বলেন, ‘আপনারা বলেছেন গণতন্ত্রের দেশ, সবাই নির্বাচন করতে পারে। সবাই যদি নির্বাচন করতেই পারে এবং আপনাদের আইনে থাকে। তাহলে আমি ভোটে গেলে আপনার সংসদ ছোট হবে কেন? সংসদের তো ছোট হওয়ার কথা নয়!’

‘তাহলে আপনাদের আইন করতে হবে, যার যোগ্যতা নেই সে পার্লামেন্টে যেতে পারবে না। যারা লেখাপড়া নেই, সে যেতে পারবে না। আর একটা বিষয়- আপনারা আইন করেছেন যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করবে তাদের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর লাগবে। যদি তাই হয় তাহলে যারা দলীয়ভাবে ভোট করে, তাদের ওয়ান পার্সেন্ট লাগে না কেন? আইন যদি সবার জন্য সমানই হয়, তাহলে এই আইন চেঞ্জ করতে হবে’, যোগ করেন তিনি।

হিরো আলম বলেন, ‘কোনো ইভিএমে ভোট হবে না। ইভিএম হল চোর। কেমন করে? এটা হলো- বাইরের দেশ ইভিএম ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। বাইরের দেশ এটা দিয়ে আর ভোট করে না। সেই ডাস্টবিন থেকে আমাদের সরকার কুড়িয়ে নিয়ে বাংলাদেশে এনেছে। নিয়ে এসে ভোট করছে, এখানেও চুরি শুরু হয়ে গেছে। তাই ব্যালটের মাধ্যমে আপনারা ভোট দেন। দেখি হিরো আলম নরমাল নাকি শক্তিশালী।’

হিরো আলম বলেন, ‘হিরো আলম কোনো দলের সঙ্গে জড়িত না। না বিএনপি, না আওয়ামী লীগ, না অন্য কোনো দল। তাই আমাকে নিয়ে কোনো দল বেশি মাতামাতি করবেন না। তা আমি চাই না।’

‘আমি কোনো দলে থাকলে আপনারা দেখতে পারতেন যে, আমি কোনো দলে যোগ দিয়েছি। আমি আগে থেকে কোনো দলে যোগ দেইনি। আগেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করেছি, এখনো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোট করেছি। তাই একজন আরেকজনকে দোষ দেবেন না’, যোগ করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমি আবারও বলছি, আমি কোনো দলের লোক না এবং কোনো দলের হয়ে ভোট করিনি। আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী। কোনো দলের সঙ্গে আমার কোনো লবিং নেই। তাই আপনারা কেউ কোনো দলীয় বিষয়ে আমাকে নিয়ে কথা বলবেন না। আর আপনারা আমাকে এতটা দুর্বল ও ছোট ভাববেন না। আমাকে দুর্বল ভাবলে ভুল করবেন, ছোট করলেও ভুল করবেন।’

হিরো আলম বলেন, ‘আমাকে জনগণ কতটা ভালোবাসে, আমার ভোটের ফলাফল কেড়ে নেওয়াতেই আপনারা বুঝতে পেরেছেন। সারা বাংলাদেশ জেগে উঠেছে এটা নিয়ে, কথাবার্তা বলছে। আমি ছোট হলে আমাকে নিয়ে কেউ কথা বলতো না। আজকে প্রতিটা টকশো, খবর, দেশ-বিদেশে হিরো আলমের ফলাফল কেড়ে নেওয়া নিয়ে এত মানুষ কথা বলছে। তাই বলছি, আমি যেন আমার ভোটের ফলাফল নিয়ে সুষ্ঠু বিচার পাই এবং এই বিচার নিয়ে আমি আবারও যারা আমাকে ছোট করে ভাবছেন, আমি সংসদে গিয়ে দেখিয়ে দিতে চাই, যে সংসদে কথা বলতে পারি কি না, জনগণের জন্য কাজ করতে পারি কি না। সংসদে যাওয়ার সুযোগ দিয়ে তারপর কথা বলবেন।’

তিনি বলেন, ‘আইন যেন সবার জন্য সমান হয়, সবার যেন ভোটে দাঁড়ানোর অধিকার থাকে। তাহলে ভবিষ্যতে এ ধরনের কথা আপনারা বলবেন না যে, হিরো আলম সংসদে গেলে অপমান করা হবে। না হলে আইন সব বাতিল করুন। আপনাদের নিজের মত আইন তৈরি করুন। যারা নির্বাচন করতে পারবে তাদের লিস্ট করুন, পদবী দেন যে এই ধরনের পদবী থাকলে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে। তাহলে আমি আর দাঁড়াব না।’

সূত্র: ডেইলি স্টার
এম ইউ/০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

Back to top button