জাতীয়

বইমেলার আঙ্গিক ও বিন্যাসে এলো পরিবর্তন

ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি – ‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে আগামী বুধবার শুরু হচ্ছে বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ অমর একুশে বইমেলা-২০২৩। এবার বইমেলা অনুষ্ঠিত হবে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গায়। একাডেমি প্রাঙ্গণে ১১২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৬৫টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৮৯টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৩৬টি ইউনিট অর্থাৎ মোট ৬০১টি প্রতিষ্ঠানকে ৯০১টি ইউনিট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। মেলায় ৩৮টি প্যাভিলিয়ন থাকবে।

বই মেলার সার্বিক প্রস্তুতি জানাতে আজ সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে আয়োজক বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরুল হুদা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেলার পৃষ্ঠপোষক বিকাশ লিমিটেডের সিএমও মীর নওবত আলী।

বাংলা একাডেমির পরিচালক ও অমর একুশে বইমেলা-২০২৩ পরিচালনা কমিটির সদস্য-সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম। বাংলা একাডেমির জনসংযোগ, তথ্য প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ বিভাগের পরিচালক সমীর কুমার সরকার।

বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বড় ভালো নৈতিক মেলা করতে হলে পাইরেসি মুক্ত বইমেলা করতে হবে। পাইরেসি আবার দুই ধরনের হয়। এক ধরনের পাইরেসি লেখক নিজেই করেন। দেখা যায় একই সূত্র ধরে একজন লেখকের ১০ থেকে ১২টা বই বের হয়ে যায়।

তিনি বলেন, ভালো লেখা, ভালো প্রকাশনা ও নির্ভুল প্রকাশনা। এটি কোনোভাবেই সম্পন্ন করা এ পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। আমাদের এ বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। প্রতি বছর বইমেলায় টাস্কফোর্স থাকে এবারও তিন দিন আগে থেকে কাজ করছে।

সবার সুন্দর সকল কর্ম, উজ্জল হবে গৌরবে। সবার জীবন পুষ্পষিত হোক, সুবাসিত হোক সৌরভে। কবিতা পাঠ করে বাংলা একাডেমির সচিব এ এইচ এম লোকমান বলেন, এটা আমি বিশ্বাস করি। এ রকম একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ। বাংলা একাডেমির একের পক্ষে সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। এর জন্য সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন। এখানে যেমন রয়েছে প্রকাশক, পাঠক আয়োজকদের।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠান

১লা ফেব্রুয়ারি বুধবার বিকেল ৩টায় বইমেলা উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি প্রকাশিত সাতটি নতুন বইয়ের গ্রন্থ-উন্মোচন করবেন এবং বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২২ প্রদান করবেন।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন। মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার।

বইমেলার আঙ্গিকগত ও বিন্যাসে পরিবর্তন

এবার বইমেলার আঙ্গিকগত ও বিন্যাসে পরিবর্তন আনা হয়েছে। বিশেষ করে মেট্রো রেল স্টেশনের অবস্থানগত কারণে গতবারের মূল প্রবেশপথ এবার একটু সরিয়ে বাংলা একাডেমির মূল প্রবেশপথের উল্টো দিকে অর্থাৎ মন্দির-গেটটি মূল প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহৃত হবে। গতবারের প্রবেশপথটি বাহির-পথ হিসেবে চিহ্নিত থাকবে। এ ছাড়া টিএসসি, দোয়েল চত্বর এবং ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সটিটিউশন অংশে আরো আরো ৩টি প্রবেশ ও বাহির-পথ থাকবে।

গতবার ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশন অংশে ১৮২টি স্টল এবং ১১টি প্যাভিলিয়ন ছিল। পাঠক, দর্শক এবং প্রকাশকদের সম্মিলিত আহ্বান ছিল- এবারের মেলায় যেন তাদের দৃশ্যমান অংশে সন্নিবেশ করা হয়। আমরা আশা করি-২০২৩- এর বইমেলার বিন্যাস সবার জন্যই মনঃপুত এবং বাস্তবসম্মত হয়েছে।

তবে গতবারের ইঞ্জিনিয়ারিং ইনিস্টিটিউশনের স্থানটিকেও এবারের মেলার একটি অংশ হিসেবে বেছে নেওয়া হয়েছে। সেখানে নামাজের স্থান, ওয়াশরুমসহ অন্যান্য পরিষেবা অব্যাহত থাকবে।

শিশুচত্বরটির পরিধি কম হওয়ায় এবার এই চতুরটি মন্দির-গেটে প্রবেশের ঠিক ডান দিকে বড় পরিসরে রাখা হয়েছে। যেন শিশুরা অবাধে বিচরণ করতে পারে এবং তাদের কাঙ্ক্ষিত বই সহজে সংগ্রহ করতে পারে।

এবার লিটল ম্যাগাজিন চত্বর স্থানান্তরিত হয়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গ্রন্থ-উন্মোচন অংশের কাছাকাছি। সেখানে ১৫৩টিসহ ৫টি উন্মুক্ত স্থানে লিটলম্যাগকে স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বইমেলায় বাংলা একাডেমি এবং মেলায় অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে।

বইমেলার সময়সূচি

বইমেলা ১লা ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকবে। রাত সাড়ে ৮টার পর নতুন করে কেউ মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারবেন না। ছুটির দিন বইমেলা চলবে সকাল ১১টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। ২১শে ফেব্রুয়ারি মহান শহিদ দিবস এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে মেলা শুরু হবে সকাল ৮টা এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

প্রতিদিনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান

প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার এবং সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

বাংলা একাডেমির ৩টি প্যাভিলিয়ন এবং শিশুকিশোর উপযোগী প্রকাশনার বিপণনের জন্য ১টি স্টল থাকবে। প্রতি শুক্র ও শনিবার মেলায় সকাল ১১টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত ‘শিশুপ্রহর’ থাকবে। অমর একুশে উদযাপনের অংশ হিসেবে শিশুকিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি এবং সংগীত প্রতিযোগিতার আয়োজন থাকছে।

মেলার সার্বিক নিরাপত্তার জন্য তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা

বইমেলার প্রবেশ ও বাহিরপথে পর্যাপ্ত সংখ্যক আর্চওয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে বাংলাদেশ পুলিশ, র‍্যাব, আনসার, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থাসমূহ।

সূত্র: কালের কন্ঠ
আইএ/ ৩০ জানুয়ারি ২০২৩

 

Back to top button