ফারইস্টের খালেকের ১৫০ কোটি টাকার বাড়ি এখন সিআইডির তত্ত্বাবধানে
ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি – অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনের এক মামলায় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফারইস্টের সাবেক চেয়ারম্যান কারাবন্দী এম এ খালেকের ঢাকার বারিধারার সেই ১৫০ কোটি টাকার বাড়িতে আদালতের জব্দ আদেশ ঝুলছে। বাড়িটির প্রবেশমুখের পাশে দেয়ালে আদালতের আদেশটি আজ সোমবার টাঙিয়ে দেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) কর্মকর্তারা। সিআইডি বলছে, আদালতের নির্দেশনাটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাড়িটি জব্দ করা হলো।
এম এ খালেকের বিরুদ্ধে ৫১৬ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে সিআইডি। এ অনুসন্ধান চলাকালে ৯ জানুয়ারি বারিধারায় আলোচিত এই উদ্যোক্তার ১৫০ কোটি টাকার বাড়ি জব্দ করার নির্দেশ দেন ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ আদালত।
তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মো. মনিরুজ্জামান আজ বলেন, বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য সিআইডির অতিরিক্ত মহাপরিদর্শককে তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগ দিয়েছেন আদালত। তাই সিআইডির পক্ষ থেকে আদালতের আদেশটি বাড়িটিতে টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে।
বাড়ির দেয়ালে টাঙানো আদালতের আদেশে বলা হয়েছে, ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেডের চেয়ারম্যান পদে থেকে এম এ খালেক প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে ১৩৫ কোটি টাকা আয় করেছেন, যা তিনি (খালেক) কানাডায় পাচার করে বাড়ি কেনাসহ সম্পদ করেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া কানাডায় পাচার করা অর্থে বাড়ি ও সম্পদ রয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। এ ছাড়া দেশে নামে-বেনামে সম্পদ গড়েছেন তিনি।
বাড়ি কেনার আর্থিক লেনদেনের তথ্য বিশ্লেষণ করে সিআইডি বলছে, এম এ খালেক তাঁর বিভিন্ন কোম্পানি থেকে টাকা সরিয়ে এটি কিনেছিলেন, যা টাকা হস্তান্তর-স্থানান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে সম্পাদিত অর্থ পাচার প্রতিরোধ আইনে অপরাধ। খালেকের স্ত্রী ও সন্তান কানাডায় বসবাস করছেন। বাড়িটি বিক্রি করে যেন কোনো টাকা বিদেশে পাচার করা না যায়, সে জন্য আদালতের মাধ্যমে বাড়িটি জব্দ করা হয়েছে।
এম এ খালেক ছিলেন উদ্যোক্তা। তিনি গড়ে তুলেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক, বিমা, সিকিউরিটিজ কোম্পানিসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন পদে ছিলেন তিনি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।
২০১৯ সালের ২১ ডিসেম্বর প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, এম এ খালেক বিভিন্নভাবে আনুষ্ঠানিক পদে ছিলেন, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইম ব্যাংক, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেড, পিএফআই সিকিউরিটিজ, প্রাইম ইনস্যুরেন্স কোম্পানি, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স, প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজ, ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স কোম্পানি ও ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডস লিমিটেড।
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে এম এ খালেকের টাকা সরিয়ে নেওয়ার সত্যতা বেরিয়ে এসেছে নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনেও। কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১০ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা বের করে নেওয়া শুরু করেন। এরপর ৮ বছরে হাতিয়ে নেন ১ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, এম এ খালেক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রাইম ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ থেকে ৩০৫ কোটি ও ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্স থেকে ৩৭৬ কোটি টাকা বের করে নেন। এ ছাড়া প্রাইম ইসলামী সিকিউরিটিজের ২০ কোটি, প্রাইম ইসলামী লাইফ ইনস্যুরেন্সের ২০০ কোটি, পিএফআই প্রপার্টিজের ১৫০ কোটি, প্রাইম এশিয়া ইউনিভার্সিটির ১৬৭ কোটি, ফারইস্ট স্টকস অ্যান্ড বন্ডের ৫০ কোটি ও পিএফআই ক্যাপিটালের ১৫ কোটি টাকা তাঁর পকেটে গেছে। তাঁর কাছে ঢাকার প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাস্ট পাবে ১৬৭ কোটি টাকা।
বেসরকারি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান হুদাভাসির তদন্তে এসেছে, এম এ খালেক প্রাইম এশিয়া ফাউন্ডেশনের হিসাব থেকে ৯০ কোটি টাকা প্রাইম ব্যাংকের মতিঝিল ও বনানী শাখার হিসাবে স্থানান্তর করেছেন, যা সুদে-আসলে এখন ১৬৭ কোটি টাকা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, অনেক সময় শেয়ার ব্যবসার নামে এম এ খালেক ওই সব প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা সরিয়েছেন। পরিবারের সদস্য ও কর্মচারীদের নামেও নিয়েছেন টাকা। এর বাইরে ম্যাকসন্স বাংলাদেশ, ম্যাকসন্স বে লিমিটেড, গ্যাটকো, গ্যাটকো অ্যাগ্রো ভিশন, গ্যাটকো টেলিকমিউনিকেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে তিনি ঋণ নিয়েছেন প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে নেওয়া এসব ঋণ ইতিমধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে।
সূত্র: প্রথম আলো
আইএ/ ৩০ জানুয়ারি ২০২৩