জাতীয়

তারেকের এপিএস অপুর ৮ কোটি টাকার উৎস সন্ধানে মিললো ৫৬৯ ব্যাংক হিসাব

সুজন কৈরী

ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি – বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের এপিএস মিয়া নূরুদ্দীন আহম্মেদ অপুর ৮ কোটি টাকার উৎস খুঁজতে গিয়ে ৫৬৯টি ব্যাংক একাউন্টের তথ্য পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এসব একাউন্টে বিদেশ থেকে টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।

এ ঘটনায় গত ২৪ জানুয়ারি সিআইডির পরিদর্শক সাদেক আলী রাজধানীর মতিঝিল থানায় মানি লন্ডারিং আইনে একটি মামলা করেছেন। মামলা নম্বর-২৪। মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী এবং গুলশানের আমেনা এন্টারপ্রাইজের মালিক ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মিয়া নূরুদ্দীন আহম্মেদ অপু, গুলশানের ইউনাইটেড কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার মাহমুদুল হাসান, ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা এ এম আলী হায়দার ওরফে নাফিজকে আসামি করা হয়েছে।

মতিঝিল থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, চার বছর আগে মতিঝিল সিটি সেন্টারের ২৭ তলা থেকে ৮ কোটি ১২ লাখ টাকা উদ্ধারের ঘটনার তদন্ত শেষে সিআইডির একজন পরিদর্শক বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। মামলাটি তদন্ত করছে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট।

মিয়া নূরুদ্দীন আহম্মেদ অপুর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি চার বছর ধরে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিট তদন্ত করে। এর আগে ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর মতিঝিল সিটি সেন্টারের ২৭ তলার ইউনাইটেড করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৮ কোটি টাকা উদ্ধার করে র‌্যাব। ওই ঘটনায় মতিঝিল থানায় একটি মানি লন্ডারিং মামলাও করে সংস্থাটি। ওই মামলার চার নম্বর আসামি ছিলেন তারেকের এপিএস মিয়া নূরুদ্দীন আহম্মেদ অপু। এরপর ২০১৯ সালের ৪ জানুয়ারি রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে অপু গ্রেপ্তার হন। পরে মামলাটি তদন্তভার সিআইডিতে চলে যায়।

মামলা তদন্ত শেষে সিআইডি তিন জনের বিরুদ্ধে ৮ কোটি ১২ লাখ ৪১ হাজার ৪২৯ টাকা অবৈধ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পায়। এরপরই সিআইডি গত ২৪ জানুয়ারি মতিঝিল থানায় একটি মামলা করে।

সিআইডির পরির্শক সাদেক আলীর দায়ের করা মামলায় বলা হয়েছে ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর মতিঝিল সিটি সেন্টারের ২৭ তলায় ইউনাইটেড কর্পোরেশনের অফিসে অভিযান চালিয়ে নগদ ৮ কোটি টাকা ১৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ও ১০ কোটি টাকার চেকসহ আলী হায়দার (৪২) নামে একজন ঠিকাদারকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ওই অফিস থেকে ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শরীয়তপুর-৩ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মিয়া নূরুদ্দীন আহম্মেদ অপুর নির্বাচনী পোস্টার উদ্ধার করা হয়। পরে আলী হায়দারের দেয়া তথ্য নিয়ে গুলশানে অপুর কোম্পানি আমেনা এন্টারপ্রাইজে অভিযান চালিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জয়নাল আবেদীন ও অফিস সহকারী আলমগীর হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় র‌্যাব বাদী হয়ে মতিঝিল থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে। ওই মামলাটি সিআইডি তদন্ত করে।

সিআইডি টাকা উদ্ধারের সময় জব্দ হওয়া বিভিন্ন কাগজপত্র ও ইলেক্ট্রনিক ডিভাইসের সূত্র ধরে প্রায় ৪ বছরের অনুসন্ধানে ৫৬৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সন্ধান মেলে। ওইসব অ্যাকাউন্টে ২৭৬টি জমা স্লিপে ৮ কোটি ১২ লাখ ৪১ হাজার ৪২৯ টাকা জমা হয়েছে। মামলাটি তদন্তকালে বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে আসামিদের হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে ৫৬৯টি ব্যাংক হিসাবে হুন্ডির টাকা লেনদেন এবং অর্থ পাচারের তথ্য পায় সিআইডি। এছাড়া অভিযুক্তদের মোবাইল ফোন ও কম্পিউটারের ফরেনসিক রিপোর্ট এবং ব্যাংকের হিসাবের জমা স্লিপ পর্যালোচনা করে হন্ডিতে টাকা পাচারের তথ্য নিশ্চিত হওয়া যায়। ২০১৭ সাল থেকে ২০১৮ সালের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত ওইসব টাকা লেনদেন হয়। আসামীদের গড়া চক্রই সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, মালয়েশিয়া, ফিলিপাইনসহ বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে। মাহমুদুল হাসানের ভাগিনা নাফিজ হুন্ডিতে ওইসব টাকার বড় একটি অংশ লেনদেন করেছেন। টাকা লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন নাফিজ। কোন ব্যাংকে কত টাকা জমা দিতে হবে তা মাহমুদুল হাসান হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানিয়ে দিতেন। সেই মেসেজ অনুযায়ি নাফিজ ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে দিতেন।

অপু, মাহমুদুল হাসান ও নাফিজ শতাধিকবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই ও সৌদি আরবে ভ্রমন করেছেন। কোন ব্যাংকে কত টাকা জমা দিতে হবে তা মাহমুদুল হাসান হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে জানিয়ে দিতেন। সেই মেসেজ অনুযায়ী নাফিজ ব্যাংকে টাকা জমা দিয়ে দিতেন।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

Back to top button