জাতীয়

স্লোগানহীন পদযাত্রায়ও চ্যালেঞ্জ বিএনপির

নজরুল ইসলাম

ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি – রাজধানীতে আজ শনিবার থেকে শুরু হচ্ছে বিএনপির চার দিনের কর্মসূচি। নীরব এই পদযাত্রা কর্মসূচি সফল করাকেও দলের ঢাকা মহানগর কমিটির জন্য চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে দলটির নেতারা। এই অবস্থার মধ্যেই গত বুধবার রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি ২৬টি থানা কমিটি ঘোষণা করে। নতুন থানা কমিটিগুলোর জন্য এই পদযাত্রা কর্মসূচিই প্রথম কর্মসূচি। ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক বলেন, এই কর্মসূচিতে কোনো স্লোগান হবে না। শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা বলেন, গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর ১৬টি স্থানে সমাবেশ কর্মসূচি গ্রহণ করেছিল বিএনপি। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি, লোডশেডিং, গণপরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি, পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার প্রতিবাদে সমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ওই সমাবেশগুলোকে ঘিরে রাজধানীতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। যার কারণে ১৮ দিনের কর্মসূচি করতে এক মাস লেগে যায় বিএনপির।

এরপর ঢাকাসহ ১০ বিভাগীয় গণসমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করে বিএনপি। এই সমাবেশ করতেও নানা বাধার সম্মুখীন হয় বিএনপি। বিশেষ করে ঢাকার গণসমাবেশকে সামনে রেখে ৭ ডিসেম্বর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এই ঘটনায় দলের মূল নেতা মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কয়েকশ নেতাকর্মী আহত হন।

 

দলীয় সূত্রে জানা যায়, এই অবস্থায় ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় গণসমাবেশ হলেও সিনিয়র নেতাদের গ্রেপ্তারে দলীয় নেতাকর্মীরা হতাশ হয়ে পড়েন। এই সমাবেশে ঢাকার নেতাদের উপস্থিতি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে চিন্তায় ফেলে দেয়। এ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির নেতাদের নিয়ে কয়েক দফা ভার্চুয়াল বৈঠক করেন তিনি। পাশাপাশি ৪ জানুয়ারি থেকে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত সারাদেশের জেলা ও মহানগর পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। পরবর্তী করণীয় বিষয়ে তাদের মতামত জানতে চান। আন্দোলনকে সফল হতে গেলে সবার আগে ঢাকাকে উজ্জীবিত করার ব্যাপারে সবাই এক বাক্যে মতামত দেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘আমরা আগে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিসহ ইস্যুভিত্তিক আন্দোলন করেছি। কিন্তু ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে কর্মসূচি করছি। ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচিতে যেভাবে বাধা দিয়েছে সরকার, সেখানে সরকারের পতন দাবিতে চলমান আন্দোলনে বাধা আরও বাড়বে বলে ধারণা করছি। এই অবস্থায় ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে সরকারের পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবিতে আজ শনিবার থেকে আগামী বুধবার পর্যন্ত চারদিনের পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।’

আজ শনিবার প্রথম দিন রাজধানীর বাড্ডার হোসেন মার্কেটের সামনে থেকে মালিবাগ আবুল হোটেল পর্যন্ত এই পদযাত্রা কর্মসূচি করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর উত্তরের সদস্য সচিব আমনুল হক বলেন, পদযাত্রা কর্মসূচি সফল করতে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে এই পদযাত্রা হবে। কোনো স্লোগান হবে না, নীরবে বেলা ২টায় হোসেন মার্কেটের সামনে থেকে শুরু হবে। মালিবাগ আবুল হোটেলের সামনে গিয়ে শেষ হবে। তিনি আরও জানান, পদযাত্রা শুরুর পূর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেবেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এতে ঢাকা মহানগর উত্তরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অংশ নেবেন।

বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ বলেন, এ কর্মসূচির বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশকে অবগত করা হয়েছে। এ ছাড়াও ৩১ জানুয়ারি গাবতলী টার্মিনাল থেকে শুরু করে মিরপুর-১ হয়ে মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত পদযাত্রা করবে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপি। একইভাবে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি ৩০ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীর আইডিয়াল স্কুল থেকে জুরাইন রেলগেট পর্যন্ত এবং ১ ফেব্রুয়ারি মুগদা থেকে মালিবাগ পর্যন্ত পদযাত্রা করবে। প্রতিটি পদযাত্রা দুপুর ২টায় শুরু হবে।

পদযাত্রা কর্মসূচি সফল করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন মহানগর নেতারা। গত বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মহানগর ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সঙ্গে যৌথ সভা হয়। সূত্র জানায়, সভায় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, ছাত্রদলসহ মহানগরের অঙ্গ-সংগঠনের নেতারা পদযাত্রা কর্মসূচিতে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেবে বলে জানান। মহানগর বিএনপি নেতারাও অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি নেতাকর্মী থাকবে বলে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।

ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ বিএনপির একাধিক যুগ্ম আহ্বায়ক জানান, মহানগরের সব ওয়ার্ড কমিটি ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার রাতে উত্তরের ২৬ থানার কমিটিও ঘোষণা করা হয়। দক্ষিণেরও ২৪ থানার কমিটি যে কোনো সময় দেওয়া হবে। এসব কমিটি গঠন নিয়ে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব থাকলেও পদযাত্রা কর্মসূচিতে ঐক্যবদ্ধভাবে সবাই অংশ নেবেন। বিএনপি হাইকমান্ডের নির্দেশনা হচ্ছে, যেসব নেতা কর্মসূচিতে অংশ নেবেন না, তাদের তালিকা করা হবে। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

‘আওয়ামী সন্ত্রাস, সরকারের দমন-পীড়ন ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে, বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য কমানোসহ ১০ দফা দাবি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে’ ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকাসহ সব বিভাগীয় সদরে সমাবেশ কর্মসূচি রয়েছে। এর আগেই ঢাকা মহানগর বিএনপি চার দিনের পদযাত্রা কর্মসূচি দিল।

বিএনপি নেতারা বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঢাকা মহানগরকে আরও শক্তিশালী দেখতে চান। সম্প্রতি মহানগরের এক শীর্ষ নেতা লন্ডনে গিয়েছিলেন। তাকে নানা দিকনির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মূলত জেলার নেতারা মনে করেন, বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে অতীতে যে আন্দোলন হয়েছে, সেখানে তৃণমূলের কোনো ব্যর্থতা ছিল না। শুধু ঢাকা মহানগরের কারণে আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলেও সফলতা ঘরে আসেনি।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আব্দুস সালাম বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণভাবে ফুটপাত দিয়ে পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করব। আশা করছি, দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারণ জনগণও এতে অংশ নেবেন।’

সূত্র: আমাদের সময়
আইএ/ ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

Back to top button