জাতীয়

হানিফ ফ্লাইওভারে পদ্মা সেতুর বাস উঠতে মানা

তাওহীদুল ইসলাম

ঢাকা, ২৮ জানুয়ারি – গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে পদ্মা সেতুতে যাওয়ার পথ নেই। কারণ শহরের ভেতর দিয়ে দূরপাল্লার বাস চলার সুযোগ আইনে নেই। এ কারণে পদ্মা সেতু পাড়ি দেওয়া বেশির ভাগ বাস আসে সায়েদাবাদ টার্মিনাল থেকে। এসব বাস হানিফ ফ্লাইওভার পার হয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠে। আবার গুলিস্তান ও চট্টগ্রাম থেকে আসা দূরপাল্লার যানবাহনও হানিফ ফ্লাইওভার পার হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিচ্ছে। এতে করে ফ্লাইওভারসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এমন প্রেক্ষাপটে পদ্মা সেতুর গাড়ি হানিফ ফ্লাইওভারে ওঠা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ পথে চলাচলের জন্য রুট পারমিট পাবে না কোনো বাস-মিনিবাস। ফ্লাইওভারকে কেন্দ্র করে যেসব বাসে অস্থায়ী রুট পারমিট দেওয়া হয়েছিল, তাও বাতিল করা হয়েছে।

এক্ষেত্রে এসব যানবাহনকে পদ্মা সেতুতে পৌঁছাতে বিকল্প পথ ব্যবহার করতে হবে। যদিও বিকল্প পথ খুব একটা নেই। ফ্লাইওভারের নিচে সড়ক থাকলেও সংকুচিত। ফলে সেখান দিয়ে যাওয়ার সুযোগও কম। এ সংকট কাটাতে বৃত্তাকার সড়কপথ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা কথা বলছেন। কিন্তু গুরুত্ব পায়নি। বৃত্তাকার সড়কপথ হলে পদ্মা সেতুর গাড়ি অনায়াসে রাজধানী অতিক্রম করতে পারত। তৈরি হতো না যানজট।

দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলায় চলাচলকারী বাসের ক্ষেত্রে বড় মাধ্যম হানিফ ফ্লাইওভার। পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর এ রুটে গাড়ি চলাচলের আবেদন বাড়তে থাকে। বেড়ে যায় বাসের সংখ্যা। নতুন করে চালু হওয়া অনেক বাসের অনুমোদন নেই। কিছু বাস অনুমোদন পেলেও এখন আর চলতে পারবে না।

সায়েদাবাদ থেকে দক্ষিণাঞ্চলগামী ১২টি রুটে আনুমানিক ১ হাজার বাস চলাচল করে। এ ছাড়া কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে আসা তিনটি রুটের গাড়ি ফ্লাইওভার দিয়ে পদ্মা সেতু পার হতে পারছে। এসব বাস আগে যেত ফেরি দিয়ে। পদ্মা সেতু চালুর পর ছয় শতাধিক বাস নতুন করে আবেদন করেছে। ইতোমধ্যে এসব চলাচলের অস্থায়ী অনুমোদন (সিøপ) দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সরকারের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পদ্মা সেতুমুখী বাস হানিফ ফ্লাইওভারে উঠতে পারবে না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী সালেহ আহম্মেদ সই করা চিঠিতে যাত্রাবাড়ী-পোস্তগলা রুটে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহার না করে রুট পারমিট প্রদানের বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এরপর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে বাস রুট রেশনালাইজেশনের বিষয়টি উত্থাপন করতে বলা হয়। মন্ত্রণালয় থেকে এ-ও জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার দিয়ে চলাচল করবে না- এ শর্তে রুট পারমিট দেওয়া হবে।’

জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালুর পর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার সংলগ্ন এলাকা ও আশপাশে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে দুই দফা বৈঠক হয়েছে। সেখানে বিআরটিএ, ডিএমপি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি), সেতু বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে একটি বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহারকারী আন্তঃজেলা গাড়ির কোনো বাসকে অস্থায়ী রুট পারমিট দেওয়া হবে না। বৈঠকে আরও সিদ্ধান্ত হয়, রায়েরবাজার সøুইসগেট থেকে বেড়িবাঁধ লোহারপুল ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের ছয় লেনে প্রশস্তকরণ কাজের নকশা, ডিজাইন ও ডিপিপি কাজ করবে ডিএসসিসি। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের অটোমেশনসহ আধুনিকায়নের কাজ আগামী মার্চের মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে। ডিএসসিসির বহিঃপ্রান্ত এলাকায় নতুন চিহ্নিত দুটি স্থানে (কাঁচপুর ও কেরানীগঞ্জের বাঘৈর) দুটি নতুন আন্তঃজেলা বাস টার্মিনালে ডিজাইন ড্রয়িংয়ের কাজ করবে সওজ এবং ডিএসসিসি।

বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদার বলেন, হানিফ ফ্লাইওভারের কারণে আশপাশের এলাকায় যানজট হচ্ছে। এ কারণে রুট পারিমট না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যানজট নিরসনের অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। গাবতলী, মহাখালী, টঙ্গী বা উত্তরার গাড়ি পদ্মা সেতুতে সহজে যেতে পারছে না। কেবল সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ী এলাকা দিয়ে চলাচলের কারণে ওই অঞ্চলে তীব্র যানজট তৈরি হয়। এর জেরে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারেও গাড়ি আটকে থাকে। অথচ বৃত্তাকার সড়কপথটি চালু হলে অনায়াসে পদ্মা পাড়ি দেওয়া সম্ভব হতো।

রাজধানী ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার পথ চালুর চিন্তা দীর্ঘদিনের। এর ফলে সড়কপথে শহরের একপ্রান্ত থেকে আরেকপ্রান্তে যাওয়ার গাড়ি নগরীতে প্রবেশ করতে হবে না। এতে কমে যাবে রাজধানীর যানজট। আরেকটি যুক্তি হচ্ছে- প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে পদ্মা সেতুতে যাওয়ার গাড়ি শহরের ভেতর দিয়ে ঢুকতে হবে না। গাবতলী কিংবা টঙ্গী থেকে আসা গাড়িও ঢাকা শহর এড়িয়ে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণাঞ্চলে যেতে পারবে। কিন্তু সময়মতো কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পের কার্যক্রম আটকে আছে। তা ছাড়া বৃত্তাকার সড়কপথ ঘিরে রেললাইন নির্মাণে সমীক্ষা হলেও দাতা সংস্থার সাড়া নেই। ফলে সমীক্ষার টাকাই এক রকম জলে গেছে। হানিফ ফ্লাইওভারকে কেন্দ্র করে এখন যে সংকট তৈরি হয়েছে, তা থাকত না বৃত্তাকার সড়কপথ চালু হলে।

ঢাকা শহর ঘিরে ৮৮ দশমিক ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ইনার সার্কুলার রুট দুটি ভাগে বাস্তবায়নের কথা। ইনার সার্কুলার রুট ফেজ ১-এর আওতায় আবদুল্লাহপুর রেলগেট থেকে তেরমুখ, পূর্বাচল, বেরাইদ, ডেমরা পর্যন্ত ২৫ দশমিক ৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে নতুন করে এই অংশে সড়ক নির্মাণ করতে হবে, যা সময়সাপেক্ষ।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) জানায়, আবদুল্লাহপুর রেলগেট থেকে ধউর, বিরুলিয়া, গাবতলী, বছিলা, হাজারীবাগ, সোয়ারীঘাট, কদমতলী, তেঘরিয়া, পোস্তগোলা, ফতুল্লা, চাষাঢ়া, শিমরাইল হয়ে ডেমরা পর্যন্ত ৬৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হবে ইনার সার্কুলার রুট ফেজ ২-এর আওতায়। এখানে আগে থেকেই সড়ক আছে, যা প্রশস্ত করতে হবে। সব মিলিয়ে সড়ক নির্মাণ করতে হবে ৪৭ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। কারণ তেঘরিয়া থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত সাড়ে ৮ কিলোমিটার পথ ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের অংশ। আবদুল্লাহপুর রেলগেট থেকে ধউর পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার পথ সেতু কর্র্তৃপক্ষ নির্মাণ করছে ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের আওতায়। অবশিষ্ট ৪৭ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা দরকার। এ জন্য ১২ হাজার ১২৫ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল। কিন্তু বেশি দূর এগোয়নি। এ অংশটি দুই ধাপে বাস্তবায়ন করতে চায় সওজ। এর মধ্যে জিওবি অর্থায়নে ২৫ কিলোমিটার এবং বাকি ২১ কিলোমিটারের কিছু বেশি অংশ নির্মাণ করা হতে পারে এআইআইবির (এশিয়া অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক) আওতায়। তবে নতুন সংকট হলো- ডিএসসিসির জায়গায় সওজের প্রকল্প নেওয়ায় আপত্তি এসেছে। এখন কিভাবে এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে, তার সদুত্তর নেই কারও কাছেই।

সূত্র: আমাদের সময়
আইএ/ ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

Back to top button