সিলেট

সিলেটে মেয়র প্রার্থী নিয়ে আ.লীগের রাজনীতি ঘোলাটে

পাভেল হায়দার চৌধুরী

সিলেট, ২৮ জানুয়ারি – সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনের প্রায় ছয় মাস বাকি থাকলেও মেয়র পদ নিশ্চিত করতে এখন থেকেই মাঠে নেমে পড়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। যুক্তরাজ্য শাখা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে সিসিক মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন নিশ্চিত করেছে ক্ষমতাসীনরা। এ খবরে সিলেট শহর আওয়ামী লীগের রাজনীতি ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।

সিসিক মেয়র হিসেবে মনোনয়ন প্রত্যাশা করে দীর্ঘদিন যারা কাজ করছেন সিলেট শহরে মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রত্যাশা করে কাজ করছিলেন সেসব প্রার্থীদের মনে দারুণ চোট লেগেছে।

সিলেট শহর আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, মেয়র পদে মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামী লীগের অনেক নেতা রয়েছেন। সবাই যার যার সাধ্যমত রাজনীতি ও সামাজিক কমর্কাণ্ডে যুক্ত আছেন। কিন্তু হঠাৎ করে একজন এসে দলের মনোনয়ন তাকেই দিয়েছে দাবি করে যা করছেন তাতে শেখ হাসিনার ঐক্যের আহ্বান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মেয়র প্রার্থী নিয়ে সিলেট শহরের রাজনীতির এই উত্তাপ ঐক্যের উদ্যোগ নষ্ট করবে।

আনোয়ারুজ্জান চৌধুরীর অনুসারী সিলেট শহর আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, দল যাকে মনোনয়ন দেবে সবাই তার জয়ের জন্য কাজ করবে। কিন্তু ৬ মাস আগেই যদি কেউ মনোনয়ন নিশ্চিত দাবি করে অন্য মনোনয়ন প্রত্যাশীদের রাজনৈতিক কাজে বাধাগ্রস্ত করে তাহলে অনৈক্য দেখা দেবে। এ ধরনের অনৈক্য দূর করতে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের পদক্ষেপ নিতে হবে।

সিলেট শহরের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্য থেকে ডেকে পাঠিয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে। আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। তিনি ও তার অনুসারীরা দাবি করেছেন মেয়র পদে দলীয় মনোনয়নের নিশ্চয়তা পেয়েছেন আনোয়ারুজ্জামান। তাই যুক্তরাজ্য থেকে দেশে চলে এসেছেন তিনি। তিনি মনোনয়ন পাবেন কি পাবেন না, সেটা পরে দেখা যাবে কিন্তু এই নিয়ে সিলেট শহরের উদ্ভূত পরিস্থিতি অনাকাঙ্ক্ষিত।

তারা দাবি করেন, দল যাকে মনেনয়ন দেবে তিনিই নির্বাচন করবেন। তাতে কারোরই সমস্যা থাকবে না। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সবাই নেমে পড়বে।

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নির্বাচনের অন্তত ছয় মাস আগে আনোয়ারুজ্জামান মনোনয়ন পেয়ে গেছেন দাবি করে তিনি ও তার অনুসারীরা সিলেট শহরে যে পরিবেশ/পরিস্থিতি সৃষ্টি করছেন তাতে দলের নেতাকর্মীদের ভেতরে এক ধরনের ক্ষোভ-অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে।

ওই নেতা আরও বলেন, সিলেট আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল অনেক নেতাই অপমানিতবোধ করছেন। যা দলের অভ্যন্তরীণ ঐক্য নষ্ট করবে। যা শহর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক রাজনীতিকে দুর্বল করবে।

তবে যুক্তরাজ্য শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানান।

যুক্তরাজ্য শাখা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান ও তার রাজনৈতিক সহকর্মীরা আরও জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মেয়র প্রার্থী হিসেবে আনোয়ারুজ্জামানকে সবুজ সংকেত দিয়ে দিয়েছেন।

তারা বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার সৌজন্য সাক্ষাতের ছবি দেখা গেছে। টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিসৌধেও শ্রদ্ধা নিবেদন করতেও দেখা গেছে আনোয়ারুজ্জামানকে। এসব বিষয়ে চোখ রাখলেই সহজ হয়ে যায় সিসিকে নৌকার প্রার্থী তিনিই।

সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এ টি এম হাসান জেবুল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পুত্র ডা. আরমান আহমদ শিপলু

বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে মিলিত হয়েছিলেন। তখন নানা বিষয়ে আলোচনা হয়। তারই এক পর্যায়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের নির্বাচন প্রসঙ্গও ওঠে। সৌজন্য সাক্ষাত শেষে বেরিয়ে গণমাধ্যমের সাথে আলাপকালে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী নিজেই বিষয়টি পরিস্কার করেছেন।

জানিয়েছেন, আগামী সিসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাকেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে এখনই কাজ শুরু করার নির্দেশনাও পেয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন দলীয় সাধারণ সম্পাদক সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সাথে।

এক সময়ের ছাত্র রাজনীতি করা আনোয়ারুজ্জামান শহরে নিজের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলেছেন। ছাত্র রাজনীতি করার কারণে রাজনৈতিক সব মহলেই পরিচিত আনোয়ারুজ্জামান। রাজনীতির আঁকাবাঁকা পথগুলো তার চেনা।

সিলেট-২ (ওসমানীনগর-বিশ্বনাথ) আসনের সর্বস্তরের জনগণের কাছে সুপরিচিত আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী সিলেটের সাবেক মেয়র, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা বদরউদ্দীন আহমদ কামরানের শূণ্যতা পূরণ করবেন বলে মনে করে আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা।

সূত্র: দেশ রূপান্তর
আইএ/ ২৮ জানুয়ারি ২০২৩

Back to top button