জাতীয়

দুই বছরে টিকা নিয়েছে ১৫ কোটি মানুষ

ঢাকা, ২৭ জানুয়ারি – দেশে করোনার টিকা কার্যক্রমের দুই বছরে টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছে ১৫ কোটি তিন লাখ ছয় হাজার ৫৭১ জন। এর মধ্যে নিবন্ধিত টিকা গ্রহীতা ১১ কোটি ৩৯ লাখ ১৯ হাজার ৬২৫ জন। নিবন্ধন ছাড়া গণটিকা নেয় তিন কোটি ৬৩ লাখ ৮৬ হাজার ৯৪৬ জন।

গত বুধবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে দেওয়া সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে এই তথ্য জানা গেছে।

করোনার টিকার কার্যক্রমের দুই বছর পূর্ণ হলো আজ ২৭ জানুয়ারি। ২০২১ সালের এই দিনে দেশে প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়। এরপর গণটিকা দেওয়া শুরু হয় একই বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি।

গত দুই বছরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমার সঙ্গে কমেছে টিকাকেন্দ্রে আসা মানুষের ভিড়। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর কয়েকটি টিকাকেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে, টিকা নিতে আসা ও টিকা প্রদানকারী ব্যক্তিদের বেশির ভাগের মুখে মাস্ক নেই। টিকা নিতে আসা ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিদেশ যাবে। কেউ কেউ এসেছে করোনার টিকা নেওয়ার ভ্যাকসিন কার্ড হালনাগাদ করতে। বেশির ভাগই গণটিকার আওতায় ভ্যাকসিন নেওয়া ব্যক্তি। তারা এসেছে মূলত সনদ নিতে।

গতকাল সকাল ১০টার দিকে আজিমপুর মাতৃসদন ও শিশু স্বাস্থ্য প্রশিক্ষণ টিকাকেন্দ্রে ঢুকে এক ব্যক্তিকে টিকা নিতে দেখা যায়। মুখে মাস্ক নেই। টিকাগ্রহীতা সোহাগ মল্লিক বলেন, ‘আমি এসবে বিশ্বাস করি না। ভারতে যাব, ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট দরকার, তাই কিছুটা বাধ্য হয়ে টিকা নিচ্ছি।’

এই কেন্দ্রে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে আসা কামরাঙ্গীর চরের বাসিন্দা মো. মনির বলেন, ‘আমি আগেও টিকা নিয়েছি। তখন নিয়েছিলাম গণটিকা। কার্ডটি হারিয়ে ফেলায় আবার নতুন করে আবেদন করে টিকা নিতে হচ্ছে।’

এই টিকাকেন্দ্রের সিনিয়র নার্স তাহমিনা আক্তার বলেন, ‘এখন যারা টিকা নিতে আসছে, বেশির ভাগই বিদেশ যাবে। এর বাইরে খুব কম লোকজন আসছে টিকা নিতে।’ তিনি বলেন, ‘দুই ঘণ্টায় টিকা নিয়েছে মাত্র ১০ জন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ তিনজন, দ্বিতীয় ডোজ চারজন, তৃতীয় ডোজ দুজন ও চতুর্থ ডোজ একজন।’

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল টিকাকেন্দ্রে দেখা যায়, টিকা দেওয়ার দায়িত্বে থাকা সাতজনের মধ্যে দুজনের মুখে মাস্ক। আর টিকা নিতে আসা তিনজনের কারো মুখে মাস্ক নেই। টিকা নিতে আসা কেরানীগঞ্জের তারেক সরকার বলেন, ‘এখন তো আর করোনার ভয় নেই। এ জন্য মাস্ক পরা হয় না। আজকে এসেছি প্রথম ডোজের টিকা নিতে।’

সিনিয়র নার্স আমিন হোসেন বলেন, ‘এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছে ৯১ জন। এর মধ্যে ১১ জন প্রথম ডোজ, ১৫ জন দ্বিতীয়, ৫৯ জন তৃতীয় ও ভয়জন চতুর্থ ডোজ।’ তিনি বলেন, ‘প্রথম আর দ্বিতীয় ডোজের টিকাগ্রহীতাদের বেশির ভাগ বিদেশ যাবে। এর বাইরে চাকরিজীবী শিক্ষিত ব্যক্তিরা আসছেন।’

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের টিকাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, এ পর্যন্ত টিকা নিয়েছে ৮৬ জন। এর মধ্যে প্রথম ডোজ ৯ জন, দ্বিতীয় ডোজ ৯ জন, তৃতীয় ডোজ ৪৯ জন ও চতুর্থ ডোজ ১৯ জন।

কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা তিনজনের কারো মুখে মাস্ক নেই। টিকা দেওয়ার দায়িত্বে থাকা ছয়জনের মধ্যে মাত্র দুজনের মুখে মাস্ক। টিকা নিতে আসা আনোয়ারা খাতুন বলেন, ‘এসএমএস আসে না। অনেক দিন অপেক্ষা করে আজ চলে এলাম। এসে দেখি এসএমএস ছাড়াই টিকা দিচ্ছে।’

সৈয়দা হোসাইন মনি বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিয়েছি অনেক দিন হয়। কিন্তু অনলাইনে আপডেট হয় না। সামনে আমি দেশের বাইরে যাব। এসেছি কার্ড আপডেট করতে।’ তিনি বলেন, ‘এখন তো আর মানুষ টিকা নিতে আসে না। আমার মতো সমস্যা যাদের, তারাই বেশি আসছে।’

তৃতীয় ডোজ নেয়নি পৌনে ৭ কোটির বেশি : দুই বছরে এ পর্যন্ত প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছে প্রায় ১৫ কোটি তিন লাখ ছয় হাজার ৫৭১ জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে ১৩ কোটি ৪৩ লাখ ১১ হাজার ৬৬৫ জন। তৃতীয় ডোজ নিয়েছে ছয় কোটি ৬০ লাখ চার হাজার ৩২৪ জন। চতুর্থ ডোজ নিয়েছে সাত লাখ ৮৫ হাজার ৬৪২ জন।

১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছে এক কোটি ৭৪ লাখ ৯ হাজার ২৮৩ জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে এক কোটি ৬২ লাখ ৩৪ হাজার ৫০০ জন। পাঁচ থেকে ১১ বছরের শিশুদের মধ্যে প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছে এক কোটি ৮৮ লাখ ৬৯ হাজার ৯৪৮ জন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছে ৮৫ লাখ ১৪ হাজার ৯ জন।

প্রথম ডোজ টিকা নেওয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ নেয়নি এক কোটি ৫৯ লাখ ৯৪ হাজার ৯০৬ জন। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর তৃতীয় ডোজ নেয়নি ছয় কোটি ৮৩ লাখ সাত হাজার ৩৪১ জন।

গতকাল সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, ‘করোনা মহামরির আতঙ্ক কমে গেলেও সংক্রমণ থেমে নেই। আমার ধারণা, শীত কমে গেলে ইনফ্লুয়েঞ্জা যখন শুরু হবে, সে সময় আবার কভিড বাড়তে পারে। যেহেতু এখন পর্যন্ত করোনার ওমিক্রনের উপধরন চলছে, সে কারণে হয়তো হাসপাতালে যেতে হবে না। তবে যাঁদের বয়স বেশি এবং বিভিন্ন রোগ রয়েছে, তাঁদের অবশ্যই এখন টিকা নেওয়া দরকার। তাঁদের জন্য কভিড সব সময় ঝুঁকিপূর্ণ।

ডা. মোশতাক হোসেন বলেন, করোনা ভ্যাকসিনের তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ নেওয়া মানুষের সংখ্যা সন্তোষজনক নয়। কারণ এখন করোনায় মানুষের ক্ষয়ক্ষতি খুব একটা হচ্ছে না। এ কারণে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা কমে যাচ্ছে। সামনে যখন বাড়বে, তখন হয়তো আবার টিকাগ্রহীতাও বাড়বে।

২০২১ সালের ২৭ জানুয়ারি দেশে প্রথম করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়। ওই দিন প্রথম টিকা নেন কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তা।

বর্তমানে টিকার মজুদ : সম্প্রসারিত টিকা কর্মসূচির (ইপিআই) প্রগ্রাম ম্যানেজার ডা. এস এস আব্দুল্লাহ আল মুরাদ জানান, এ পর্যন্ত ৩৫ কোটি ৯৪ লাখ ৭৯ হাজার ৭৫০ ডোজ টিকা পাওয়া গেছে। এর মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনেকার পাঁচ কোটি ৬১ লাখ ৭১ হাজার ১১০ ডোজ, ফাইজার (রেডি টু ইউজ) সাত কোটি ৯১ লাখ ৪৩ হাজার ৩৯০ ডোজ। ফাইজারের (শিশুদের টিকা) বিশেষ টিকা তিন কোটি ৩০ লাখ ৫০ হাজার। মডার্নার টিকা এক কোটি ৫৭ লাখ ৯২ হাজার ৪৬০ ডোজ, সিনোফার্মের ১১ কোটি ৪১ লাখ ৭৮ হাজার ডোজ, সিনোভ্যাকের ছয় কোটি চার লাখ ৬৫ হাজার ৪০ ডোজ এবং জে অ্যান্ড জের ছয় লাখ ৭৯ হাজার ৭৫০ ডোজ।

গত ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত মজুদ আছে সিনোফার্ম, ফাইজার (রেডি টু ইউজ) ও ফাইজার (শিশুদের টিকা) মিলিয়ে ৯০ লাখ ৬২ হাজার ৩৫৯ ডোজ টিকা।

সূত্র: কালের কণ্ঠ
আইএ/ ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

Back to top button