শরীর চর্চা

৫ টি উপায়ে আপনার সকালকে করুন আরও কর্মমূখী

আফসানা সুমী

আমরা প্রত্যেকেই কাজ করার জন্য ২৪ ঘন্টা পাই এক দিনে আর ১ সপ্তাহে পাই ১৬৮ ঘন্টা। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, কিছু মানুষের কাজের পরিমাণ দেখলে মনে হয় তারা আমাদের চেয়ে যেন দ্বিগুণ সময় পেয়েছেন। গবেষকরা বলেন এর রহস্য লুকিয়ে আছে দিনের প্রথমভাগ মানে সকালে। সকাল থেকেই যারা নিজের সময়কে ঠিক মত ব্যবহার করেন তারা অন্যদের তুলনায় অধিক সফল হন।

‘What the Most Successful People Do Before Breakfast’ বইয়ের লেখিকা লরা ভ্যান্ডারক্যাম ১০০০ মানুষের উপর একটি স্টাডি করেন। তিনি দেখেন যে, সেইসব মানুষই বেশী সফল যারা সারাদিন কি করবেন তার প্রস্তুতি নেওয়ার বদলে সকালটাকে আরও কার্যকরিভাবে ব্যবহার করেন।

এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলেন, যেহেতু সকালে আমাদের মস্তিষ্ক অনেক ফ্রেশ থাকে সেহেতু আমরা তখন বেশী ভালভাবে চিন্তা করতে পারি এবং যেই কাজেই হাত দিই না কেন সেটা অন্য যে কোন সময়ের চেয়ে সুচারু রূপে সম্পন্ন করতে পারি।

কিন্তু সে যাই হোক, ভয় পাবার কোন কারণ নেই। সকালকে কাজে লাগাতে ভোর বেলাই ঘুম থেকে উঠে যেতে হবে না আপনাকে। জেনে নিন সাধারণ কয়েকটি টিপস যা আপনার সকালকে ধীরে ধীরে আরও কর্মমূখী করে তুলবে।

আপনার সময়কে ট্র্যাক করুন
প্রতিদিন লিখে রাখুন আজ আপনার সময়কে কিভাবে কাজে লাগালেন। খুটিনাটি সব কিছু লিখুন। কোন কাজে কত সময় ব্যয় করেছেন, কি করেছেন লিখুন। ভ্যান্ডারক্যামের মতে প্রতিদিন একটি এক্সেল শীট ব্যবহার করা উচিৎ আমাদের। অন্তত কাগজে লিখে রাখা উচিৎ। আপনি যখন ডায়েট করতে চান, তখন যেমন দৈনিক কী কী খেলেন তার লিস্ট দেখে দিন শেষে বুঝতে পারেন কতটা ভুল হল, এটাও ঠিক তেমনি। সকাল থেকে আপনার কাজের লিস্ট করতে থাকুন। দিন শেষে বুঝতে পারবেন, কতটা সময় নষ্ট হল। আপনি হয়ত ঘুমের আগে জোর করে কিছু কাজ শেষ করার চেষ্টা করেন। সেই কাজগুলোকে সকালে নিয়ে আসুন। সময়টাকে শিফট করবেন মাত্র। দেখুন, কাজের দক্ষতা কতটা বেড়ে যাবে আপনার!

কেমন সকাল চান আপনি?
আপনার সকালটা কেমন হলে তা অনেক দারুণ বলে বোধ হবে আপনার? চোখ বন্ধ করে চিন্তা করুন তো! কি করছেন আপনি? ব্যায়াম? নাকি বাগানে কাজ করছেন? নাকি হাটতে বেরিয়েছেন? অথবা নতুন কোন রেসিপি নিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করছেন? যুক্তি দিয়ে চিন্তা করার প্রয়োজন নেই। শুধু ভাবুন আপনি কি হলে আনন্দ পেতেন! ভ্যান্ডারক্যাম বলেন তার স্বপ্নে তিনি দেখেছিলেন, তিনি বাইরে দৌড়াচ্ছেন এবং এরপর পরিবারের সাথে সকালের নাস্তা করছেন।

এবার ভাবুন যুক্তি দিয়ে
যখন আমাদের সামনে কোন কাজ আসে, সেটি আমরা কত সময়ের মধ্যে করব এই পরিকল্পনাটা প্রায়ই করি না। ভ্যান্ডারক্যাম বলেন, সত্যিই যদি কাজটি জরুরী হয় তাহলে অবশ্যই সময়টা ভেবে নেওয়া উচিৎ। নাহলে ছোট কাজটিও আমারা ভেবে বসি যেন অনেক সময় লাগবে করতে। যেমন, আপনি হয়ত ভাবলেন রোজ ৯০ মিনিট এক্সারসাইজ করবেন? তার চেয়ে বরং এক্সারসাইজই করবেন না। অথচ ২০ মিনিটেও আপনার যথেষ্ট ওয়ার্কাউট হতে পারে। সকালেই ঠিক করে ফেলুন কি কি কাজ করবেন এবং কোন কাজে কত সময় নেবেন। অবশ্যই বাড়িয়ে ভাববেন না। নিজেকে বরং কম সময় দিন।

অভ্যাস করুন
আমাদের প্রতিদিনকার অভ্যাসের জন্য নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বলতে হয় না যে আমাকে এটা করতেই হবে। যেমন দাঁত ব্রাশ করার জন্য আলাদা প্রেরণা দানের দরকার হয় না। কিন্তু যেটা আমাদের অভ্যাস নয় সেটা পেতে হলে এক্টু কষ্ট তো করতেই হবে। একটা নতুন রুটিনের জন্য প্রয়োজন ৩টি বিষয়ের- একটি লক্ষ্য, সেই অনুযায়ী অভ্যাস এবং মূল্যায়ণ। কিছু দরকারি কাজকে লক্ষ্য হিসেবে নিন। সকালে ওঠাকে অভ্যাসে পরিণত করুন। আলসেমী করা, এদিক-ওদিক উদ্দেশ্যহীন সময় ব্যয় করা ছেড়ে কাজে নেমে পড়ুন। দিনশেষে নিজের সঠিক মূল্যায়ণ করুন। দিনে দিনে কাজের উন্নতিই আপনাকে উৎসাহিত করবে।

প্রয়োজনীয় করে তুলুন
শুধু শখের বশে সকালে উঠতে চাইলে কয়দিন পরই আর ভাল লাগবে না। তাই প্রয়োজনীয়তাটা বুঝুন। আর সবচেয়ে বড় কথা, হতাশ হবেন না। বার বার চেষ্টা করুন। নিজের রুটিন বদলানো খুবই কঠিন কাজ। সবার জন্যেই কঠিন। কিন্তু চেষ্টা করলে সবই সম্ভব। তাই ধীরে নিজের রুটিন বদলান আর দেখুন কিভাবে জাদুর মত বদলে গেছে আপনার জীবনও।

আডি/ ২৯ নভেম্বর

Back to top button