জাতীয়

বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বাড়বে

আসাদ আল মাহমুদ

ঢাকা, ১৪ জানুয়ারি – নিত্যপণ্যেরে আকাশচুম্বী মূল্যে দিশেহারা মানুষ। এর মধ্যে গত ১২ জানুয়ারি ৫ শতাংশ বাড়ানো হলো বিদ্যুতের দাম। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সবার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে স্বল্প আয়ের মানুষ ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর আর্থিক অনটন আরো বৃদ্ধি পাবে বলে মনে করছেন বিশ্নেষকরা ।

বেসরকারি চাকরিজীবী মো. মঈন উদ্দিন বলেন, পণ্যেরে আকাশচুম্বী মূল্যে সাধারণ মানুষ কষ্ট করে দিন কাটাচ্ছে। বছরে আয় যতটা বাড়ছে, ব্যয় বাড়ছে তার কয়েক গুণ। এমন পরিস্থিতির মধ্যে মানুষ যখন আয়-ব্যয়ের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছে। এরই মধ্যে বিদ্যুতের দাম ৫ শতাংশ বাড়ানোর ফলে সরকারের ভর্তুকির চাপ কিছুটা কমলেও ব্যয় বাড়বে সাধারণ মানুষের। বিদ্যুতের দাম বাড়ায় বিভিন্ন পণ্যের উৎপাদন খরচ বাড়বে, ফলে পণ্যমূল্যও বাড়বে।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, দুর্নীতি ও লুন্ঠনমূলক ব্যয় বৃদ্ধি করার কারণে জ্বালানি খাতে ভর্তুকি দিতে হচ্ছে৷ এখাত থেকে যদি দুর্নীতি ও লুন্ঠন কমানো যায় তাহলে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবেনা৷

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ইউটিলিটি খরচ কমানোর জন্য আমরা বলেছি৷ কিন্তু সেটা তারা করছে না৷ তারা কোনো যুক্তিই মানতে চায় না৷ দাম বাড়ানোই হচ্ছে তাদের লক্ষ্য৷

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি৷ এখন দেশের অর্থনীতির যা অবস্থা তাতে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে৷ সেটা সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়বে৷ বিদ্যুতের দাম বাড়ার ফলে সব ধরনের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে৷ ফলে বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে৷ যা বহন করতে হবে ভোক্তাদের৷ একদিকে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত দাম দিতে হবে৷ আবার পণ্যের জন্য বেশি দাম দিতে হবে। বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিখাতে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম কম রাখা প্রয়োজন৷

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি সামগ্রিকভাবে দেশকে আরো সংকটের দিকে নিয়ে যাবে । ১১ বছরে সরকার বিদ্যুৎ কোম্পানিগুলোকে ক্যাপাসিটি চার্জের নামে প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। গত তিন বছরেই দেওয়া হয়েছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। এই স্বজনতোষী ব্যবস্থার বৈধতা দিতে সংসদের মাধ্যমে ইনডেমনিটি দেওয়া হয়েছে। সরকারের গত ১৪ বছরের শাসনামলে খুচরা এবং পাইকারি উভয় পর্যায়ে ১১ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এমনিতেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের অসহনীয় দামে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠছে। কিছু দিন আগে পাইকারি পর্যায়ে বাড়ানো হয়েছিল বিদ্যুতের দাম। এতে শিল্পে উৎপাদন খরচ বেড়েছিলো। এখন ভোক্তাপর্যায়ে বাড়ানোর ফলে অতিরিক্ত খরচ সমন্বয় করতে জনগণের ক্রয়ক্ষমতা কমবে।

প্রসঙ্গত, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা দাম পাঁচ শতাংশ বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। বৃহস্পতিবার (১২ জানুয়ারি) দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বিদ্যুৎ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন আইন, ২০০৩ এর ধারা ৩৪ক-তে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে ভর্তুকি সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিদ্যুতের খুচরা মূল্যহার এবং বিদ্যুৎ সম্পর্কিত বিবিধ সেবার জন্য চার্জ/ফি পুনঃনির্ধারণ করা হলো। নতুন মূল্য অনুযায়ী গ্রাহক পর্যায়ে সবচেয়ে কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারীদের জন্য আগের চেয়ে ইউনিট প্রতি ১৯ পয়সা বেড়েছে। আর সবেচেয়ে বেশি ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে বেড়েছে ৫৪ পয়সা।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, আবাসিক গ্রাহকদের ক্ষেত্রে শূন্য থেকে ৫০ ইউনিট ব্যবহারকারী গ্রাহকদের বিদ্যুতের দাম ইউনিট প্রতি ৩ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩ টাকা ৯৪ পয়সা, শূন্য থেকে ৭৫ ইউনিট ব্যবহারকারীর বিদ্যুতের দাম ৪ টাকা ১৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ৪০ পয়সা, ৭৬ থেকে ২০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৫ টাকা ৭২ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ১ পয়সা, ২০১ থেকে ৩০০ ইউনিট ব্যবহারকারীদের ৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৩০ পয়সা, ৩০১ থেকে ৪০০ ইউনিটের জন্য ৬ টাকা ৩৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬ টাকা ৬৬ পয়সা, ৪০১ থেকে ৬০০ ইউনিটের জন্য ৯ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ৬০০ ইউনিটের ওপরে বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকদের বিদ্যুৎ বিল ১১ টাকা ৪৯ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ১২ টাকা ৩ পয়সা করা হয়েছে।

এর আগে রোববার (৮ জানুয়ারি) বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে (বিইআরসি) বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ওপর গণশুনানির আয়োজন করা হয়। তাতে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব উত্থাপন করে বিদ্যুৎ বিতরণকারী ছয়টি প্রতিষ্ঠান। ওই শুনানিতে বিদ্যুতের দাম ১৫.৪৩ শতাংশ বৃদ্ধির সুপারিশ করেছিলো বিইআরসির কারিগরি কমিটি। তবে ওই সুপারিশের ভিত্তিতে নয়, সরকারের নির্বাহী আদেশে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে।

গত ৩০ নভেম্বর বিইআরসি অধ্যাদেশ ২০২২ সংশোধনের কারণে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা পায় সরকার। ওই অধ্যাদেশের আওতায় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ঘোষণা দিলো বিদ্যুৎ বিভাগ।

সূত্র: রাইজিংবিডি
এম ইউ/১৪ জানুয়ারি ২০২৩

Back to top button