গোটা জোশীমঠকে বসবাসের অযোগ্য বলে ঘোষণা করল উত্তরাখণ্ড সরকার
নয়াদিল্লি, ০৮ জানুয়ারি – বড়সড় ভাঙনের মুখে ভারতের উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠ শহর। সেখানে ক্রমশ দেবে যাচ্ছে মাটি। ফাটল ধরছে বাড়িঘর থেকে রাস্তাঘাটে। যে কোনও সময় ঘটে যেতে পারে বিপর্যয়। ইতিমধ্যেই সেখানে শুরু হয়েছে উদ্ধারকাজ। দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হচ্ছে ৬০০ পরিবারের। জোশীমঠ যে আর বসবাসের উপযুক্ত নয়, তা আগেই বুঝেছিলেন সেখানকার বাসিন্দারা। রোববার তাতে সরকারি সিলমোহর পড়ল মাত্র। উত্তরাখণ্ড সরকার রীতিমতো নোটিস দিয়ে জানিয়ে দিল, বসবাসের জন্য উপযুক্ত এবং নিরাপদ নয় জোশীমঠ। একই সঙ্গে ‘বিপর্যয়গ্রস্ত’ তকমাও দেয়া হয়েছে উত্তরাখণ্ডের এই শহরকে।
রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিব রঞ্জিতকুমার সিংহ জানিয়েছেন, ২০০৫ সালের বিপর্যয় মোকাবিলা আইনের ২৩ নম্বর ধারা অনুযায়ী, জোশীমঠ পৌর অঞ্চলের সব এলাকাকেই ‘বিপর্যস্ত’ তকমা দেয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে বিশেষজ্ঞদের একটি দল বিপর্যস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন। তাদের দেয়া প্রাথমিক রিপোর্টে বলা হয়েছে, আরও বড় বিপর্যয় ঘটতে পারে ওই অঞ্চলে। তাই তড়িঘড়ি ওখান থেকে সব বাসিন্দাকে সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
রাজ্যের সচিব পর্যায়ের আরও এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, গোটা এলাকাকে ২টি জোনে ভাগ করা হয়েছে। নতুন করে ওই এলাকায় কাউকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে। রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের একটি বড় বাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত রয়েছে। এই বাহিনী বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চালিয়ে যাবে।
চামোলির জেলাশাসক হিমাংশু খুরানা জানিয়েছেন, আকস্মিক বিপর্যয়ে অনেক বাসিন্দাই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাই সরকারের পক্ষ থেকে মনোবিদদের একটি দলকে পাঠানো হচ্ছে। বাসিন্দাদের অন্যত্র পুনর্বাসন দেয়ার জন্য ইতিমধ্যেই ৭টি হোটেল ভাড়া করেছে উত্তরাখণ্ড সরকার। যে সব বাসিন্দা বাড়ি ছাড়তে চাইছেন, তাদের বাড়ির কাছেই তুলনায় নিরাপদ স্থানে রাখা হচ্ছে। কিন্তু ফাটল ধরা এলাকায় কাউকেই থাকতে দেয়া হচ্ছে না।
এদিকে সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, জোশীমঠকে ‘বিপর্যয়গ্রস্ত’ এলাকা ঘোষণা করার ফলে, বাসিন্দারা বিমার টাকা বা অন্যান্য সুযোগসুবিধা পেতে পারবেন।
রোববার উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামিকে ফোন করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, জোশীমঠের কীভাবে পুনর্বাসন দেয়া হচ্ছে, তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি জোশীমঠের বাসিন্দাদের জন্য সব রকম সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত জোশীমঠ উত্তরাখণ্ডের ছোট্ট একটি শহর। তবে বিগত দুই দশক ধরে এই শহরে যেমন জনসংখ্যা বেড়েছে, তেমনই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নির্মাণকাজ। ইন্দো-চিন সীমান্তের কাছে অবস্থিত হওয়ায়, এখানে বিপুল পরিমাণ সেনাও মোতায়েন থাকে, রয়েছে সেনা ক্যাম্প। হিমালয় অভিযানে যারা যান, তাদের বেস ক্যাম্প হয় এই জোশীমঠ। কিন্তু বিগত কয়েকদিন ধরেই খবরের শিরোনামে জোশীমঠ রয়েছে তার ভাঙনের কারণে।
দীর্ঘদিন ধরেই জোশীমঠের বাসিন্দারা দাবি করছিলেন, শহরের ভিত বসে যাচ্ছে, বাড়িতে ফাটল ধরছে। সম্প্রতিই বিশেষজ্ঞের একটি দল জোশীমঠে সমীক্ষা করেন। তারা দেখতে পান, এলাকাবাসীর দাবি সম্পূর্ণ সত্য, জোশীমঠের ভিত সত্যিই মাটিতে বসে যাচ্ছে। যেকোনও মুহূর্তেই বড় কোনও বিপর্যয় ঘটতে পারে।
প্রথমবার জোশীমঠ নিয়ে সতর্ক করা হয়েছিল ১৮৮৬ সালে। এরপরে ১৯৭৬ সালে সরকারের নিয়োগ করা মিশ্র কমিশনের রিপোর্টে জানানো হয়েছিল, জোশীমঠের অবস্থান অদ্ভুত। প্রাচীন যুগে এক ভয়াবহ ভূমিধস হয়েছিল উত্তরাখণ্ডে। সেই ধ্বংসস্তূপের ঠিক উপরেই তৈরি হয় জোশীমঠ। ফলে স্বাভাবিকভাবেই জোশীমঠের ভিত দুর্বল। এছাড়াও লাগাতার নির্মাণকাজ, হাইড্রো প্রকল্প ও জাতীয় সড়ক নির্মাণের কারণে জোশীমঠের ভিত ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে।
জিওলজিস্টদের মতে, সিসমিক জোন ৫-এর উপরেও অবস্থিত জোশীমঠ। ফলে এই অঞ্চল ভূমিকম্পপ্রবণ। তাদেরদের আশঙ্কা, যেভাবে ফাটল ধরছে এবং মাটি বসে যাচ্ছে, তাতে শুধু জোশীমঠই নয়, উত্তরাখণ্ডের একাধিক শহরই টিকে থাকতে পারবে না। বড় কোনও বিপর্যয় ঘটার আগেই এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ০৮ জানুয়ারি ২০২৩