ঢালিউড

বাবা জীবন্ত মানুষ থেকে ডেথ সার্টিফিকেট হয়ে গেল

ঢাকা, ৩১ ডিসেম্বর – ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত মঙ্গলবার মারা যান জনপ্রিয় অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীর বাবা রাধোগোবিন্দ চৌধুরী। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। পরদিন বুধবার পাবনার সুজানগর উপজেলার কামারহাটে নিজ গ্রামে তার শেষকৃত্য হয়। আজ শনিবার বাবার হাসপাতালের দিনগুলোকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বর্ণনা করেছেন চঞ্চল চৌধুরী।

তিনি লিখেছেন, বাবাকে নিয়ে আমরা হাসপাতালের এই কেবিনেই ভর্তি করেছিলাম। যদিও বাবার আর কেবিনে থাকা হয়নি, কারণ শুরু থেকেই বাবাকে আইসিইউ-তে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। ভর্তির দিনই ডাক্তার বলে দিয়েছিলেন, এখান থেকে বাবার ফিরে আসার আর কোন সম্ভাবনা নেই,যদি না সৃষ্টিকর্তা অবাক কিছু ঘটান।

তারপর থেকে আমরা শুধু অপেক্ষা আর চেষ্টা করেছি বাবাকে ফিরিয়ে আনতে। বাবা প্রায় ১৫ দিন মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করে হেরে গেলেন। ডাক্তারদের হিসেব মত যে কোন সময় চলে যাওয়ার কথা বললেও, বাবা ১৫ দিন লাইফ সাপোর্টে বেঁচে ছিলেন। সন্তান বা আত্মীয় পরিজন হিসেবে চোখের সামনে এই কষ্ট দেখা যায়না।

ঢালিউডের এই অভিনেতা আরও লিখেন, একটা সময় প্রার্থনা করেছি বাবার জ্ঞান ফিরে আসুক,সুস্থ্য হয়ে যাক,বিনিময়ে আমরা সব কিছু করতে প্রস্তুত। ঠিক সেই আমরাই শেষের দিকে এসে,বাবার কষ্ট সহ্য করতে না পেরে প্রার্থনা করেছি,বিশ্বাস করেছি,একমাত্র মৃত্যুই বাবাকে এই অসহ্য যন্ত্রনা থেকে মুক্তি দিতে পারে।

ভাবনা আর বিশ্বাসের এই বৈপরীত্য আমি এখনো মানতে পারিনি। আমরা সহ বাবার ভালোবাসার মানুষগুলো প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ৯০২ নং কেবিনে বসে থাকতাম বাবার জন্য। এত ভীড়…বসার জায়গা হতো না…. তারপরেও কেউ সেখান থেকে আসতে চাইতো না।
বাবার কারণেই কেবিনটা মিলন মেলায় পরিনত হয়েছিল। আমরা আট ভাইবোনসহ পরিবারের সবাই কখনও এতদিন একসাথে থাকিনি। কত আত্মীয় পরিজনের সঙ্গে যে দেখা হয়েছে কতদিন পরে,শুধু মাত্র বাবার কারণেই।

২৭ ডিসেম্বর সকাল থেকেই আমরা বুঝতে পারছিলাম,বাবাকে আর ধরে রাখতে পারবো না। ঠিক রাত ৮ টার দিকে ডিউটি ডক্টর কেবিনে ফোন করে জানালেন,বাবার হার্ট বিট একদম নেমে যাচ্ছে…. সাথে সাথে আমরা দৌড়ে গেলাম আই সিইউতে।
সত্যিই…… বাবার শরীরটা স্তব্ধ হয়ে গেছে। না ফেরার দেশে চলে গেল আমাদের বাবা।

এ ছাড়া চঞ্চল চৌধুরী স্মৃতিচারণে লিখেন, ১২ ডিসেম্বর অচেতন অবস্থায় ভর্তি হয়ে,২৭ ডিসেম্বর ঐ অবস্থাতেই বাবা চির বিদায় নিলেন। এই কয়দিন অন্তত: আই সি ইউ তে বাবার বেডের সামনে দাড়িয়ে বাবার শ্বাস প্রশ্বাস চলছে কিনা দেখতাম,প্রাণটা আছে এই শান্ত্বনা নিয়ে ভেজা চোখে ফিরে আসতাম। মনিটরে তাকিয়ে যখন দেখলাম বাবার জীবনটা থেমে গেছে, কিছু সময়ের জন্য আমি কিছুই শুনতে পাচ্ছিলাম না,দেখতে পাচ্ছিলাম না।

তারপর সকল আয়োজন সম্পন্ন করার পালা…..একাউন্টস,বিল,ডেড বডি,ফ্রিজার ভ্যান……ডেথ সার্টিফিকেট…… আমার বাবা জীবন্ত মানুষ থেকে ডেথ সার্টিফিকেট হয়ে গেল। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছিল বার বার….বার বার মন খুলে কাঁদতে চেষ্টা করছিলাম….পারছিলাম না,যদি কেউ দেখে ফেলে,ছবি তোলে।

বাবার ডেথ বডিটা যখন হাসপাতালের লিফ্ট দিয়ে নামানো হচ্ছিল….ফ্রিজার ভ্যানে তোলা হচ্ছিল সাদা কাপড়ে মোড়ানো বাবার নিথর শরীর,তখন খুব করে মনে করার চেষ্টা করছিলাম,বাবার সাথে আমার শেষ কি কথা হয়েছিল!!

ভাবতেই তো পারিনি বাবা চলে যাবে,
তাই বাবার সাথে আমার কোন শেষ কথা হয়নি॥

আইএ/ ৩১ ডিসেম্বর ২০২২

Back to top button