জাতীয়

কাল ঘুরবে মেট্রোরেলের চাকা

তাওহীদুল ইসলাম

ঢাকা, ২৭ ডিসেম্বর – ঘড়ির কাঁটা ধরে গন্তব্যে পৌঁছানো যাবে, এমন গণপরিবহন রাজধানীতে ছিল না বললেই চলে। আকাশপথের বাইরে সড়ক, রেল ও নৌপথে করে গন্তব্যে পৌঁছাতে কত সময় লাগবে, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। বিশেষ করে যানজটের কারণে অনেক সময় নষ্ট হতো পথেই। এবার সে অবস্থা থেকে মুক্তি মিলছে রাজধানীবাসীর। আগামীকাল উদ্বোধন হচ্ছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন মেট্রোরেলের এমআরটি-৬ লাইনের উত্তরা দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁও অংশ। উদ্বোধনের পরের দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকে ১১ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথে যাত্রী নিয়ে চলবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আধুনিক ট্রেন।

প্রথম দিকে সকাল ৮টা থেকে দিনে চার ঘণ্টা করে ট্রেন চলবে। আগে সিদ্ধান্ত ছিল, সকাল ও বিকালে চলবে। পথে পল্লবী স্টেশনে থামবে। এখন সিদ্ধান্ত বদল হয়েছে। উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত বিনা বিরতিতে চলবে ট্রেন। ২০ মিনিটে গন্তব্যে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। মাঝপথে কোথাও থামবে না। এ অংশে ৯টি স্টেশন

রয়েছে। আর রবিবার সাপ্তাহিক বন্ধ বিবেচনায় রাখা হয়েছে। ট্রেন পুরোদমে চললে বিরতি দেওয়া হবে সাড়ে তিন মিনিট। তবে প্রাথমিকভাবে ১০ মিনিট করে বিরতি দিতে পারে। আর ট্রেনও ছাড়তে পারে ১০ মিনিট পর পর। অবশ্য ট্রেন কতক্ষণ পর পর ছাড়বে আর কত গতিতে চলবে, তার সবই নির্ভর করছে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর। যাত্রীদের অনভ্যস্ততার কারণে যাত্রীও তোলা হবে কম। প্রথম দিকে ২০০ থেকে ৩০০। আজ মঙ্গলবার আগারগাঁও স্টেশনে সংবাদ সম্মেলনে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ও মেট্রোরেলের সময়সূচি সম্পর্কে বিস্তারিত জানাবেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামীকাল বুধবার সড়কপথে গণভবন থেকে দিয়াবাড়ী যাবেন। স্টেশনের পাশে খেলার মাঠে হবে সুধী সমাবেশ। এর আগে বেলা ১১টা ৫ মিনিটে শেখ হাসিনা মেট্রোরেলের উদ্বোধন ফলক উম্মোচন করবেন। আর্থিক কৃচ্ছ্রসাধনে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে সাদামাটা।

দিয়াবাড়ীতে সুধী সমাবেশের বক্তৃতার পর প্রধানমন্ত্রীকে স্মারকচিহ্ন দেওয়া হবে। এর পর স্মারক ডাকটিকিট ও মেট্রোরেলের প্রথম দিনের কাভার এবং স্মারক নোট উন্মোচন করবেন।

ওবায়দুল কাদেরের সভাপতিত্বে সুধী সমাবেশে মেট্রোরেল প্রকল্পে ঋণদাতা জাপানের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) প্রতিনিধি এবং ঢাকায় নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূতসহ মেট্রোরেলের সঙ্গে সম্পৃক্ত জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বক্তৃতা করবেন।

সুধী সমাবেশের পর দিয়াবাড়ী স্টেশনে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। স্টেশনে প্রধান ফটকে তেঁতুল গাছের চারা রোপণ করবেন। এস্কেলেটর ব্যবহার করে স্টেশনের দ্বিতীয়তলা তথা কনকোর্স লেভেলে যাবেন। এর পর যাবেন তৃতীয় তলা অর্থাৎ প্ল্যাটফর্মে। সেখানে সরকারপ্রধান সবুজ পতাকা উড়িয়ে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করবেন। যাত্রাপথে সহযাত্রীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করে ট্রেনে যাবেন আগারগাঁও। সেখান থেকে গণভবনে ফিরে যাবেন। সরকারি সূচিতে জনসভার উল্লেখ না থাকলেও আওয়ামী লীগ দিয়াবাড়ীতে উদ্বোধন অনুষ্ঠানে ব্যাপক জনসমাগমের প্রস্তুতি নিয়েছে।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, ‘মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষায় দেশবাসী। গণপরিবহনে মেট্রোরেল যুক্ত হওয়া এখন স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। এই মেট্রোরেলের জন্য মানুষ দীর্ঘ প্রতীক্ষা করেছেন। উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এর অবসান হচ্ছে।’

জানা গেছে, এমআরটি-৬ লাইনের জন্য ২৪ সেট ট্রেন কেনা হচ্ছে জাপান থেকে। ১৯টি ট্রেন এসেছে। ১৯ ধরনের পরীক্ষা চলছে সেগুলোর। পারফরমেন্স টেস্ট, ট্রায়াল রান ও ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট শেষ হওয়া ১০টি ট্রেন চলবে দিয়াবাড়ী-আগারগাঁও অংশে। আর দুটি সংরক্ষিত রাখার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে শুরুতে পাঁচটি ট্রেন চলবে।

ডিএমটিসিএলের ভাষ্য, যাত্রীদের অভ্যস্ত হতে শুরুর দিকে বাড়তি সময় দেওয়া হবে। দিয়াবাড়ী থেকে আগারগাঁওয়ের ভাড়া ৬০ টাকা। প্রতিটি ট্রেনে সর্বোচ্চ ধারণক্ষমতা ২ হাজার ৩০৮ জন হলেও শুরুর দিকে ১০০ থেকে ৩৫০ জন যাত্রী নিয়ে চলবে। মেট্রোরেলের ছয় বগির ট্রেনের দুই দিকেই থাকবে ট্রেইলার কোচ। যেখান থেকে চালকরা ট্রেন পরিচালনা করবেন। প্রতিটি ট্রেইলার কোচের যাত্রী ধারণক্ষমতা ৩৭৪ জন। মাঝখানের চারটি বগির প্রতিটির যাত্রী ধারণক্ষমতা ৩৯০ জন করে।

মেট্রোরেল চলবে বিদ্যুতে। ট্রেনের প্রথম ও শেষের বগিতে থাকবে ট্রেন পরিচালনার মডিউল। ফলে না ঘুরিয়ে ট্রেন চালানো হবে। ট্রেন নিয়ন্ত্রণে চালকদের কাজ সামান্যই। ট্রেন চলবে সফটওয়্যারে। উদ্বোধনের পরের দিন থেকে যাত্রী পরিবহনে দিয়াবাড়ী ও আগারগাঁও স্টেশন প্রস্তুত করা হয়েছে। স্টেশনে মিলবে মেট্রো পাস। এই পাস দিয়ে কিংবা স্টেশন থেকে টিকিট কেটেও ভ্রমণ করা যাবে মেট্রোরেলে। পাস পেতে করতে হবে নিবন্ধন। ঢাকা যানবাহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, র‌্যাপিড পাসেও চড়া যাবে মেট্রোরেলে। বিনামূল্যে দেওয়া হবে পাস। তবে জামানত বাবদ দিতে হবে ২০০ টাকা। পাস ফেরত দিয়ে জামানতের টাকা ফেরত পাওয়া যাবে। স্টেশনের নির্দিষ্ট স্থান থেকে পাস ইস্যুর সময় ২০০ টাকা রিচার্জ করতে হবে। পাস বা টিকিট পাঞ্চ করলে স্টেশনের তৃতীয় তলার দরজা স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে।

সূত্র: আমাদের সময়
আইএ/ ২৭ ডিসেম্বর ২০২২

Back to top button