এশিয়া

চীনের একটি শহরেই দৈনিক করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে ১০ লাখ মানুষ

বেইজিং, ২৫ ডিসেম্বর – করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতিতে ফের বিপর্যস্ত চীন। দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ ঝেজিয়াংয়ে এখন প্রতিদিন ১০ লাখ মানুষ নতুন করে সংক্রমণিত হচ্ছে। এ সংখ্যা আগামী কিছু দিনের মধ্যে দ্বিগুণ হতে পারে বলে প্রাদেশিক সরকার আশঙ্কাও প্রকাশ করেছে। রোববার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

চীনে সংক্রমণের ভয়াবহ ঊর্ধ্বগতি সত্ত্বেও টানা ৫দিন নতুন কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। দেশটির সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল রোববার এমনটিই জানিয়েছে।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে চীনের বিভিন্ন শহরের কোটি কোটি বাসিন্দাকে মাসের পর মাস ক্লান্তিহীন লকডাউন ও কঠোর সব বিধিনিষেধের ভেতর দিয়ে যেতে হয়েছে। বিধিনিষেধে চীনা নাগরিকরা এ বছরের দ্বিতীয় ভাগে ফুঁসে উঠলে বেইজিংও তাদের ‘শূন্য কোভিড’ নীতিতে পরিবর্তন এনে বিধিনিষেধ একে একে তুলতে শুরু করে।

হুট করে এ বিধিনিষেধ তোলায় বিস্তৃত হতে শুরু করে করোনা সংক্রমণ। দেশটির নাগরিক ও বিশেষজ্ঞরা এর মধ্যেই দেশটির কর্তৃপক্ষের প্রতি সংক্রমণ পরিস্থিতির আরও নির্ভুল তথ্য প্রকাশে আহ্বান জানিয়েছেন।

চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন (এনএইচসি) কিছুদিন আগে থেকে উপসর্গহীন রোগীর তালিকা প্রকাশ বন্ধ করে দিলে দেশটিতে আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়। এনএইচসি রোববার থেকে দৈনিক শনাক্ত-মৃত্যুর তথ্য প্রকাশও বন্ধ করে দেয়। পরে সিডিসি শনিবারের শনাক্ত রোগীর তথ্য প্রকাশ করে।

রোববার দেয়া বিবৃতিতে ঝেজিয়াং সরকার বলেছে, নববর্ষের সময়ে চেচিয়াং সংক্রমণের চূড়ার পর্বে ঢুকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে, সেসময় দৈনিক সংক্রমণ ২০ লাখও হতে পারে।

প্রদেশটির হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসাধীন ১৩ হাজার ৫৮৩ রোগীর মধ্যে একজনের দেহে করোনার গুরুতর লক্ষণ পাওয়া গেছে, অন্যান্য রোগের কারণে আরও ২৪২ জনের অবস্থা গুরুতর ও আশঙ্কাজনক, বলেছে তারা।

চীন সম্প্রতি কোভিডে মৃত্যুর সংজ্ঞা বদলেছে। তাতে কেবল করোনাভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া ও শ্বাসযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যুই কোভিডে প্রাণ হারানোর তালিকায় যুক্ত হচ্ছে। বেইজিংয়ের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে বিশ্বজুড়েই স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ব্যাপক সমালোচনা করছেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, বিধিনিষেধ শিথিল করার পর কোভিড নিয়ে নতুন কতজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে চীনের কাছ থেকে সে সংক্রান্ত কোনো তথ্যই পায়নি তারা। চীন করোনা রোগীর সংখ্যা হিসাব করতে গোলমাল পাকিয়েছে বলে ধারণা করছে তারা।

ক্যাপিটাল ইকোনমিকসের এক গবেষণা বলছে, চীন এখন মহামারীর সবচেয়ে বিপজ্জনক সপ্তাহগুলোতে প্রবেশ করেছে। চীন সংক্রমণের বিস্তার ঠেকাতে কোনো চেষ্টাই করছে না। নববর্ষ উপলক্ষে দেশটির ভেতর এক স্থান থেকে আরেক স্থানে লোক যাতায়াতও ‍শুরু হয়েছে। এ কারণে যেসব এলাকায় এখনও সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে না, সেসব এলাকায়ও দ্রুততম সময়ে ঊর্ধ্বগতি দেখা যাবে।

ছিংদাও ও তংগোয়ার মতো শহরগুলোতে এখন প্রতিদিন লাখ লাখ ব্যক্তি আক্রান্ত হচ্ছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, যা চীনের দৈনিক শনাক্ত হওয়া রোগীর তুলনায় বেশি। চীনের এই তালিকায় অবশ্য উপসর্গবিহীন রোগীর সংখ্যা জানানো হচ্ছে না। পূর্বাঞ্চলীয় দুই শহর হাংচো এবং সুচৌর কর্তৃপক্ষও সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, হাসপাতালগুলোতে বাড়তে থাকা রোগীর সংখ্যা স্বাস্থ্য কাঠামোর ওপরও ব্যাপক চাপ সৃষ্টি করেছে। অনেক জায়গায় অসুস্থ কর্মীদের কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে, কোথাও কোথাও অবসর নেওয়া কর্মীদেরও ফের নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে।

সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ২৫ ডিসেম্বর ২০২২

Back to top button