নওগাঁ

কোটি টাকার কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড ‘কাজে লাগে না’

তৌহিদ ইসলাম

ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর – কৃষি আবহাওয়াবিষয়ক নির্ভরযোগ্য তথ্য কৃষকদের মধ্যে পৌঁছে দিতে দেশের বিভিন্ন স্থানের মতো নওগাঁ জেলায় বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থাপন করা হয়েছিল কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস তথ্য বোর্ড। বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়।

কিন্তু এখন বোর্ডগুলো আর কাজে লাগে না।
বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেশজুড়ে নেওয়া কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্পটি জেলায় ‘ফ্লপ’ হয়েছে বলে দাবি করছেন কৃষকরা। স্থানীয় আবহাওয়া বোর্ডে কোনোদিনই এ প্রকল্পের তথ্য হালনাগাদ না হওয়ায় এ আখ্যা দেওয়া হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, নওগাঁর কৃষি উন্নয়নের লক্ষ্যে প্রতিটি ইউনিয়নে আবহাওয়া পূর্বাভাস বোর্ড স্থাপন করা হয়। উদ্দেশ্য ছিল, বায়ু প্রবাহ, আর্দ্রতা আর বৃষ্টিপাতসহ আবহাওয়ার পূর্বাভাস বিবেচনায় কৃষি কাজ অব্যাহত রাখা। প্রান্তিক কৃষকদের ফসল কাটা-তোলার ব্যাপারেও আগাম সতর্কতা অবলম্বন করা। কিন্তু কৃষকরা অভিযোগ করছেন, সরকারি এ সুবিধার বিষয়ে তারা কিছু জানেন না। হাতে গোনা দুয়েকজন এ ব্যাপারে জানে বলে জানা গেলেও আবহাওয়া বোর্ডে কোনোদিনই এ সংক্রান্ত হালনাগাদের তথ্য পাওয়া যায়নি।

জেলার কীর্তিপুর ইউনিয়নের মিলন, আশরাফুল, আমজাদসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, ইউনিয়ন পরিষদের পূর্বাভাস বোর্ড আদৌ আছে কিনা তা অনেকেই জানেন না। এ বোর্ডের উপকার কী তাও অনেক কৃষক জানেন না। সরকার এত টাকা খরচ করে এমন একটা প্রকল্প বাস্তবায়ন করলো, যা আদৌ কৃষকের কোনো কাজে লাগে না।

জানা গেছে, জেলার কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসের বোর্ডে থাকা যন্ত্রপাতিগুলো অবহেলায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগও প্রকল্পটি নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে। এ ব্যাপারে জানান বদলগাছি উপজেলা বালুভরা ইউনিয়ন পরিষদের উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এস এম রশিদুল্লাহ।

তিনি বলেন, শুরু থেকেই কোনো কাজে লাগেনি কৃষি পূর্বাভাস বোর্ড। বোর্ড স্থাপনের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের একটি স্মার্ট ফোন (ট্যাব) ও সিম দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিন মাস পার না হতেই ফোন ও সিম নষ্ট হয়ে যায়। তা ছাড়া বোর্ডগুলো তথ্য হালনাগাদ করা যায় না। সোজা কথায় এ বোর্ড কখনও কৃষকের কাজে লাগেনি, লাগছেও না।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আবু হোসেনও এ ব্যাপারে একমত। তিনি বলেন, এনালগ পদ্ধতি হওয়ায় দৈনিক আবহাওয়ার তথ্য হালনাগাদ করা কঠিন। তা ছাড়া আবহাওয়ার পূর্বাপর অবস্থা সম্পর্কেও বিশেষ জ্ঞান থাকা জরুরি। বোর্ড স্থাপন করা হলেও এসবের অভাব থাকায় কৃষকদের জন্য তথ্য হালনাগাদ করা কঠিন ছিল-আছে। সংশ্লিষ্টদের প্রতিনিয়ত হালনাগাদ করতে বলা হয়। কিন্তু কোনো কাজ হয় না।

উল্লেখ্য, দেশের ৪ হাজার ৫৭১ ইউনিয়নে বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতায় কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস তথ্য বোর্ড স্থাপন করা হয়। এ প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ছিল ১১৯ কোটি টাকা। প্রকল্পটির প্রথম পর্যায় শেষ হয় ২০২১ সালের জুন মাসে। প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি বোর্ড স্থাপনে অন্তত ১২ হাজার টাকা করে খরচ হয়েছে। রেইন গজ মিটার, কিয়স্ক ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেলের মাধ্যমে স্থাপিত এ বোর্ডগুলো বেশিরভাগই এখন অচল বলে তথ্য পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের আবহাওয়াবিষয়ক তথ্য পাঠানোর জন্য ইন্টারনেট সংযোগসহ ৬ হাজার ৬৬৪টি ট্যাব সরবরাহ করা হয়। কিন্তু বর্তমানে স্বয়ংক্রিয় রেইন গজ মিটার ও সৌরবিদ্যুতের প্যানেল অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। আবার কোথাও কোথাও সেসব যন্ত্র খোয়া গেছে। প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে মাঠ ও জেলা পর্যায় থেকে যথাযথভাবে মনিটরিং না করাই এ সমস্যার মূল কারণ।

সূত্র: বাংলানিউজ
এম ইউ/২৩ ডিসেম্বর ২০২২

Back to top button