জাতীয়

পোষা কুকুরসহ তিন প্রাণীর ওপর কর আরোপ

ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর – ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) পোষা প্রাণীর জন্য কর আরোপ করলেও কিভাবে এ কর আদায় হবে সে বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ কোনো পরিকল্পনা বা নিয়মের কথা জানাতে পারেনি। ডিএসসিসি’র পক্ষ থেকে বলা হয়, দক্ষিণ সিটির আওতায় কেউ কুকুর পুষলে প্রতি কুকুর বাবদ ৫০০ টাকা এবং কেউ ঘোড়া বা হরিণ পালন করলে প্রতিটির জন্য বছরে ১০০০ টাকা করে কর দিতে হবে।

অন্যদিকে কারও যদি এসব প্রাণীর শেল্টার হোম বা ফসটার কেয়ার থাকে তাহলে তাদের ক্ষেত্রেও প্রতি প্রাণী বাবদ এ কর প্রযোজ্য হবে বলে জানান ডিএসসিসির উপপ্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজাহান আলী।

‘সিটি করপোরেশন আদর্শ কর তফসিল ২০১৬’-এর গণবিজ্ঞপ্তি অনুসারে, কুকুর, হরিণ, ঘোড়া- এই তিনটি পোষা প্রাণীর জন্য বার্ষিক কর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। এতদিন তা কার্যকর ছিল না। এর বাইরে অন্য কোনো পোষা প্রাণী যেমন বেড়াল, খরগোশ, মাছ, পাখি, গরু, মুরগি ইত্যাদি পোষার ক্ষেত্রে কর আরোপের কথা বলা নেই। তবে কেউ যদি অ্যাকুরিয়ামের মাছ/পশু (বন্যপ্রাণী ব্যতীত) বিক্রির উদ্দেশ্যে ব্যবসা করেন তাহলে তাদের বড় মাছ/পশু বাবদ ১০০০ টাকা এবং ছোট মাছ/পশু বাবদ ৫০০ টাকা কর দেওয়ার কথা বলা আছে।

বিজ্ঞপ্তিতে এসব পোষা প্রাণীর মালিকদের স্ব স্ব অঞ্চলের রাজস্ব বিভাগের বিবিধ আদায় শাখায় উল্লিখিত হারে কর ও এর ওপর ১৫% ভ্যাট দিতেও অনুরোধ করা হয়েছে।

নিবন্ধনের নিয়ম ও সুবিধা
নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক করা হলেও লাইসেন্সের আবেদন করার নিয়ম, কেউ নিবন্ধন না করলে কোনো শাস্তির বিধান আছে কি-না এমন তথ্য জানাতে পারেনি ডিএসসিসি। নিবন্ধনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন বলে জানানো হয়। তবে প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছে, কেউ যদি এখন নিবন্ধন করতে চান তাহলে তাকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভেটেরিনারি শাখা থেকে সশরীরে গিয়ে ফরম সংগ্রহ করতে হবে। সেখানে পশুর নাম, জাত, লিঙ্গ, বয়স, রঙ, শনাক্তকারী চিহ্ন, টিকা দেয়ার তারিখ, মালিকের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর, ঠিকানা, মোবাইল নম্বর ইত্যাদি তথ্য দিতে হবে। সেটি পূরণ করে প্রধান ভেটেরিনারি কর্মকর্তার থেকে অনুমোদনের সিল নিতে হবে। এরপর রাজস্ব বিভাগে সেই অনুমোদিত ফরমের সাথে প্রয়োজনীয় ফি জমা দিলেই নিবন্ধন সম্পন্ন হবে বলে জানানো হয়েছে। তবে এই নিয়ম পরে পরিবর্তিত হতে পারে।

শাহজাহান আলী জানান, সামনের বছর থেকে নিবন্ধনপ্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যকর হতে পারে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তথ্যানুযায়ী, ডিএসসিসির আওতায় ১২৮টি পোষা কুকুর, ১৪৫টি হরিণ ও ৪৬টি ঘোড়া আছে। এর মধ্যে এসব পোষা প্রাণীর মালিকদের চিঠি দিয়ে করের বিষয়টি জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে ২৭টি পোষা প্রাণীর মালিক কর জমা দিয়েছেন। যদিও এই ডাটাবেস অনেক পুরনো। এসব প্রাণীর অনেকগুলোই ইতিমধ্যে মারা গিয়েছে বলা জানা যায়।

করের সুবিধা অসুবিধা
কর বাবদ পাওয়া অর্থ ওই পোষা প্রাণীদের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যয় করা হবে বলে জানান ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজল শামসুল কবির। ঢাকা দক্ষিণের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা এ কে এম সালেহ রহমান জানান, কুকুর, হরিণ ও ঘোড়ার লাইসেন্স নিলে এর মালিকরা সিটি ভেটেরিনারি উপশাখা থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। এর মধ্যে রয়েছে রুটিন চেকআপ, কি খাবার খাবে, গর্ভবতী থাকাকালীন সেবা ইত্যাদি।

আবার কারও পোষা প্রাণীটি হারানো গেলে সেটি খুঁজে পেতেও এ নিবন্ধন কাজে আসবে। তবে এর আওতায় বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া বা গুরুতর রোগ/ দুর্ঘটনার চিকিৎসা আওতাভুক্ত হবে না। সালেহ রহমান জানান, ভ্যাকসিন শুধুমাত্র পথ কুকুরদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। তবে সরকার যদি টিকার যোগান দেন করে তাহলে অবশ্যই নিবন্ধিত কুকুরদের বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে।

সিটি করপোরেশনের এই করারোপের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে প্রাণী অধিকার সংগঠনগুলো। তাদের মতে, এই কর আরোপের ফলে যারা একসময় স্বেচ্ছায় রাস্তার কুকুর লালন-পালনের দায়িত্ব নিত তারা পিছিয়ে পড়বে। তাদের এমন বক্তব্যের জবাবে ডিএসসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ফজল শামসুল কবির বলেন, ‘একটি কুকুর, হরিণ বা ঘোড়া পালতে বছরে যে পরিমাণ খরচ হয়, সে হিসেবে বছরে ৫০০ টাকা বা ১০০০ টাকা কর কিছুই না। এতে বরং তারা সিটি করপোরেশনের পশু চিকিৎসা সুবিধা নিতে পারবে। তাদের পোষা প্রাণীটি নিবন্ধিত থাকায় আইনগত কাঠামোর আওতায় চলে আসবে। একে নেতিবাচকভাবে দেখার কিছু নেই। উন্নত বিশ্বে এমনটাই হয়ে থাকে।’

সূত্র: দেশ রূপান্তর
এম ইউ/২৩ ডিসেম্বর ২০২২

Back to top button