রেন্টাল-কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের সুপারিশ
ঢাকা, ২২ ডিসেম্বর – ভর্তুকি কমাতে রেন্টাল-কুইকরেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের সুপারিশ করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)।
তারা বলছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে তেলভিত্তিক এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বহুল। পাশাপাশি বছর শেষে এই সব কেন্দ্রকে বিপুল পরিমাণ ক্যাপাসিটি চার্জ দিতে হয়। সবদিক বিবেচনায় সংস্থাটি সরকারকে পরামর্শ দিচ্ছে ‘নো ইকেলট্রিসিটি, নো পেমেন্ট’ নীতিতে যাওয়ার।
পাশাপাশি, তারা বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ আইন বাতিলের দাবি করছে।
বৃহস্পতিবার (২২ ডিসেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডিতে সিপিডির কার্যালয়ে ‘খসড়া সমন্বিত জ্বালানি ও বিদ্যুৎ মহাপরিকল্পনা (আইইপিএমপি): পরিচ্ছন্ন জ্বালানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে কি?’ শীর্ষক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে এসব পরামর্শ ও দাবি তুলে ধরেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
ব্রিফিংয়ে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।
তিনি বলেন, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর তুলনায় জ্বালানি খাতে আমরা পিছিয়ে আছি। আইইপিএমপি-এ নবায়নযোগ্য জ্বালানির বিষয়টি উপেক্ষিত হয়নি, তবে অবহেলিত হয়েছে। প্রযুক্তিগত পরিবর্তন যেভাবে চিন্তা করা দরকার সেটা পর্যাপ্ত হয়নি। ডকুমেন্টটি এখনও পর্যন্ত যেভাবে রয়েছে, প্রকারান্তরে তা এলএনজিকে উৎসাহিত করছে।’
তিনি আরও বলেন, ধীরে ধীরে আমাদের কয়লা ও জ্বালানি তেল ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সরে আসতে হবে। নতুন করে আর যেন কোনো কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এর সঙ্গে কোনোভাবেই যেন এই খাতে আর ভর্তুকি না বাড়ে সে দিকে নজর দিতে হবে। কারণ ভর্তুকি বাড়লে তা সামাজিক নিরাপত্তার অন্যান্য খাতগুলোকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে।
গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সরকার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) নখদন্তহীন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। তাদের ক্ষমতাকে খর্ব করে সরকার অযাচিতভাবে বিদ্যুৎ এর দাম বাড়াচ্ছে। তাছাড়া বিদ্যুৎ ও জ্বালানির সরবরাহ আইনের কারণে বিদ্যুৎ বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা নিশ্চিত হচ্ছে না। এর ফলে গোষ্ঠী বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে।
ব্রিফিংয়ে সিপিডি নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেছেন, সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে দেশের মোট জ্বালানির ৪০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে তা অত্যন্ত উচ্চাকাঙ্ক্ষী। এই লক্ষ্যমাত্রাটা একটা শ্লোগানের মতো। কপ-২৬ এর আগে বিভিন্ন দেশ ঘোষণা করেছিল নবায়নযোগ্য জ্বালানির লক্ষ্যমাত্রা। সেই তালেই কি আমরা বলেছি, নাকি বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বলেছি? আমাদের এখনও পর্যন্ত যে অর্জন, ২০৪০ সালে সেই লক্ষ্যমাত্রায় আমরা যেতে পারবো কী?
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তনকে মাথায় রেখে নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে যাচ্ছি। সেখানে যে ধরনের প্রযুক্তির কথা বলা হচ্ছে, অনেক দেশ এগুলো বাদ দিয়ে যাচ্ছে। কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ, অনেকে এটা এখন আর ব্যবহার করছে না। এটা বর্জন করছে। এটা ব্যবহারে প্রচুর অর্থের ও জায়গার প্রয়োজন পড়ে। সেখানে যে বিনিয়োগ হয় সেটা কস্ট ইফেকটিভ হয় না। আমরা যেটা উৎপাদন করবো সেটা কস্ট ইফেকটিভ না হলে, আমরা সেটা করবো না। যেটা বর্জন হয়ে আছে উন্নত দেশে, সেগুলো আমরা কেন করবো।’
এ সময় আইইপিএমপি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘জ্বালানি ও বিদ্যুৎ এমন একটা খাত, এখানে অনেকেরই স্বার্থ রয়েছে। এই স্বার্থ দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরেও। তবে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য কৌশলগত উপাদান, বাইরের স্বার্থকে পেছনে ফেলে দেশের স্বার্থটা কী হবে, সেটাই গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত।’
সুশাসনের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করেও অনেকে জাতীয় গ্রিডে দিতে পারছে না উল্লেখ করে ফাহমিদা বলেন, আমরা মানুষের কাছে সুলভমূল্যে পৌঁছে দিতে পারছি না।
অন্যদিকে, ক্রমান্বয়ে বিরাট অঙ্কের ভর্তুকি দিচ্ছি। যাদের ভর্তুকির দরকার নেই, কিন্তু সাধারণ মানুষের ওপর মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যেও বিদ্যুৎ-জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে। এমন একটা ক্রিটিক্যাল সময়ে যখন মানুষের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে, যখন মূল্য যৌক্তিকিকরণের কথা বলি, তখন সেটা সাধারণ মানুষের ওপর এসে পৌঁছায়। যেখানে সুশাসন দিয়ে বড় রকমের সাশ্রয় করতে পারি, আধুনিক টেকসই জ্বালানি খাত তৈরি করতে পারি, সেটার দিকে নজর দেওয়া উচিত।
সূত্র: দেশ রূপান্তর
আইএ/ ২২ ডিসেম্বর ২০২২