জাতীয়

নিষ্ক্রিয় ২০ দলের শরিকরা গড়ছে নতুন দুটি জোট

ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর – নতুন মেরূকরণ হচ্ছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ‘নিষ্ক্রিয়’ ২০ দলীয় জোটে। বহুল আলোচিত ও দীর্ঘদিনের পুরোনো জোটটি অবশেষে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘ভেঙে’ নতুন দুটি জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটাতে যাচ্ছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার ‘সমমনা ১২ দলীয় জোট’ এবং চলতি মাসেই ‘সমমনা ৭ দলীয় জোট’ আত্মপ্রকাশ করবে। তবে কোনো জোটেই থাকছে না প্রধান শরিক দল বিএনপি, অন্যতম শরিক দল জামায়াতে ইসলামী ও কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন এলডিপি। বিএনপি ঘোষিত ১০ দফা এবং রাষ্ট্র মেরামতের ২৭ দফা রূপরেখার সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করেছেন নতুন দুটি জোট গড়তে যাওয়া দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। সমমনা দল হিসেবে গণতন্ত্র মঞ্চের আদলেই চলমান যুগপৎ আন্দোলনে পৃথক মঞ্চ থেকে অংশ নেবে তারা। নতুন জোটের আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে নিষ্ফ্ক্রিয় জোটের পরিচিতি হবে ‘বিলুপ্ত ২০ দলীয় জোট’।

এ বিষয়ে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন গতকাল মঙ্গলবার বলেন, বর্তমানে ২০ দলীয় জোট নিষ্ফ্ক্রিয়। দীর্ঘদিন ধরে জোটের ব্যানারে কোনো কর্মসূচি পালন হচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে দলগুলো নতুন কোনো জোট গঠন করতেই পারে।
প্রতিটি দলের নিজস্ব রাজনৈতিক কৌশল ও স্বাধীনতা রয়েছে। তারা চলমান সরকারবিরোধী যুগপৎ আন্দোলনে একমত হয়ে কর্মসূচি পালন করলে এ উদ্যোগকে আমরা ইতিবাচক হিসেবে দেখি। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার পুনরুদ্ধার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী দেশপ্রেমিক প্রতিটি নতুন জোটের প্রতি আমাদের শুভকামনা থাকবে।

নতুন কৌশল বিএনপির :নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, ২০১৪ ও ‘১৮ সালের আন্দোলনের অভিজ্ঞতা থেকে এবার নতুন কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি। সে কৌশলের অংশ হিসেবে ২০ দলীয় জোটকে নিষ্ফ্ক্রিয় রেখেই চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে দলটি। বিএনপির ‘গ্রিন সিগন্যাল’-এর ভিত্তিতেই জোট দুটি গঠিত হচ্ছে। জামায়াতে ইসলামীকে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত থেকেই এ কৌশল নিয়েছে তারা। সে লক্ষ্যে এবার বিএনপি একক মঞ্চ থেকে আন্দোলন করছে। কোনো জোটভুক্ত আন্দোলন করছে না এবং নতুন জোটও গঠন করেনি। দলটির সে সিদ্ধান্তের ভিত্তিতেই সমমনা দলগুলোর শীর্ষ নেতারা নিজেদের পছন্দের মতো জোটবদ্ধ হচ্ছেন। তবে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে অন্য দলগুলো জোটবদ্ধ হতে রাজি নয়। অন্যদিকে শীর্ষ নেতৃত্ব এবং ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দের কারণে কর্নেল (অব.) অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) কোনো জোটেই থাকছে না।

বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, জোট দুটির শরিক দলগুলো মূলত বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ও ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসীদের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম। বড় জোটের ছোট শরিক দল হওয়ায় এখন তারা কিছুটা গুরুত্বহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কায় রয়েছে। এমনকি যুগপৎ আন্দোলনে এককভাবে পৃথক মঞ্চ থেকে আন্দোলনের কর্মসূচি পালনে জনবল প্রদর্শনও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দীর্ঘদিন তারা বিএনপির সঙ্গে কর্মসূচি পালন করায় নিজেদের কর্মী-সমর্থকের সংখ্যা দৃশ্যমান হয়নি। এখন পৃথক মঞ্চ থেকে আন্দোলন করতে প্রতিটি দলের পক্ষে সভা-সমাবেশে বড় জমায়েত করা কঠিন হয়ে যাবে। এরই মধ্যে সাতটি দলের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ। বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে লিয়াজোঁ কমিটির মাধ্যমে যুগপৎ কর্মসূচি পালন করতে পারবে তারা। এমনকি এতে আগামী নির্বাচনে আসন ভাগাভাগির দরকষাকষি করতেও সুবিধা হবে। এসব হিসাব-নিকাশ থেকেই নতুন জোট গঠন করা হচ্ছে বলে মনে করে বিএনপির হাইকমান্ড।

১২ দলীয় জোটে থাকছে যারা :সূত্র জানায়, নতুন জোট দুটির নাম এখনও চূড়ান্ত হয়নি। সম্ভাব্য নাম হিসেবে দলের সংখ্যা অনুযায়ী জোটের নাম অথবা ‘জাতীয়তাবাদী ঐক্যজোট’ নাম নিয়ে আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে ১২টি দলের শীর্ষ নেতারা নিজের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। বৈঠক করে আগামীকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে দলগুলোর সমন্বয়ে নতুন একটি জোটের আত্মপ্রকাশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। জোটের সম্ভাব্য নাম দলের সংখ্যাভিত্তিক করার বিষয়ে আলোচনা চলছে। সে ক্ষেত্রে সমমনা ১২ দলীয় জোট হতে পারে।
নতুন এই জোটের দলগুলো হচ্ছে- মোস্তফা জামাল হায়দারের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি (জাফর), মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকের নেতৃত্বে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ লেবার পার্টি, সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বে বাংলাদেশ জাতীয় দল, কে এম আবু তাহেরের নেতৃত্বে এনডিপি, শাহাদাত হোসেন সেলিমের নেতৃত্বে এলডিপি (একাংশ), অ্যাডভোকেট জুলফিকার বুলবুল চৌধুরীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরামের নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, মাওলানা আবদুর রকীবের নেতৃত্বে ইসলামী ঐক্যজোট, নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল, অ্যাডভোকেট আবুল কাসেমের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, শফিউল আলম প্রধানের মেয়ে ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা, একাংশ)।
এই জোটের নেতৃত্বে থাকবেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার। মুখপাত্র হিসেবে থাকবেন মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক। গণমাধ্যম বিষয়ে সমন্বয় করবেন শাহাদাত হোসেন সেলিম।

নতুন জোট গঠন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এলডিপির (একাংশ) মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম বলেন, রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে ২০ দলীয় জোট বর্তমানে নিষ্ফ্ক্রিয়। সে কারণে আমরা জোটের শরিকদের মধ্যে সমমনা দলগুলো এক হয়ে পথ চলতে চাচ্ছি। বিশেষ করে বর্তমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে একমত হয়েছি।

৭ দলীয় জোটে থাকছে যারা :সূত্র জানায়, ২০ দলীয় জোটের শরিক সাতটি দলের পৃথক জোট গঠনে শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। সম্ভাব্য এ জোটের শীর্ষ নেতা হচ্ছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। বৃহস্পতিবার ১২ দলীয় জোট আত্মপ্রকাশের পর এ জোটটির নাম ও আত্মপ্রকাশের তারিখ চূড়ান্ত করা হবে।

এই জোটে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ছাড়াও থাকবে অ্যাডভোকেট মাওলানা আবদুর রকীবের নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট, সাদেক শাওনের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ ন্যাপ, খন্দকার লুৎফর রহমানের নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা, একাংশ), অ্যাডভোকেট আজহারুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ ভাসানী), সাইফুদ্দীন মনির নেতৃত্বাধীন ডেমোক্রেটিক লীগ (ডিএল) ও অ্যাডভোকেট গরীবে নেওয়াজের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ পিপলস লীগ।

নতুন জোট গঠন বিষয়ে জানতে চাইলে শীর্ষ নেতা ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ জানান, বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে ২০ দলীয় জোটকে নিষ্ফ্ক্রিয় করে রেখেছে। সম্প্রতি দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আলজাজিরাকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর আর ২০ দলের কোনো অস্তিত্ব থাকে না। এ পরিস্থিতিতে আমরা নতুন একটি প্ল্যাটফর্ম গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই। বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনে আমরাও অংশ নেব।

সূত্র: সমকাল
আইএ/ ২১ ডিসেম্বর ২০২২

Back to top button