এটাই কি মদরিচের শেষ ম্যাচ!
দোহা, ১৭ ডিসেম্বর – লুকা মদরিচ ক্রোয়েশিয়ার অধিনায়ক। দুর্দান্ত ফুটবল খেলে যাচ্ছেন তিনি। বিশ্বকাপের আগে ঘোষণা দিয়েছিলেন এটিই হতে যাচ্ছে তার শেষ বিশ্বকাপ। এরপর জাতীয় দলের জার্সি গায়ে আর খেলবেন না। লিগে খেলবেন তিনি। বয়স যে তার ৩৭। এই বয়সেও যে স্কিল দেখিয়েছেন তিনি এবারের বিশ্বকাপে তা সত্যি প্রশংসার দাবীদার।
শনিবার স্থান নির্ধারনী ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া মুখোমুখি হবে মরক্কোর সঙ্গে। মদরিচের কথা অনুযায়ী এটি হতে যাচ্ছে তার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তার শেষ ম্যাচ। যদিও কথাটি তার বিশ্বকাপের শুরুর আগে। তবে এখনো বলা যাচ্ছে না মদরিচ কি আর খেলবেন কিনা থেমে যাবেন। সেই ঘোষণাটা তিনি এখনো পুরোপুরিভাবে দিচ্ছেন না। ক্রোয়েশিয়ার কোচ জাটকো দালিচ চাচ্ছেন না মদরিচ অবসর নিক। তার চাওয়া আরো কয়েকটা বছর সে খেলুক।
ক্রোয়েশিয়া দলটির সাম উচ্চারিত হলেই চলে আসে মদরিচের নাম। ৩৭ বছর বয়সে তার স্কিল আর রিদম দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ মাতিয়েছেন রিয়াল মাদ্রিদে খেলা এই ক্রোয়াট মিডফিল্ডার। গেলো বিশ্বকাপে এক কথায় স্বপ্নের বিশ্বকাপ কাটিয়েছিলেন এই অধিনায়ক। দলকে নিয়ে গিয়েছিলেন ফাইনালে। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন না থাকায় রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ঠ থাকতে হয়েছিল তার দলকে। তবে দলকে শিরোপা জেতাতে না পারলেও বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড় গোল্ডেন বল পুরস্কার ঠিকই জিতে নিয়েছিলেন তিনি। জিতে নিয়েছিলেন সেবারের দর্শকদের মন। সেবার ব্যালন ডি অরের সেরা পুরস্কারের জিতেছিলেন মদরিচ। দারুন একটা বছরই পার করেছিলেন এই ক্রোয়েশিয়ান অধিনায়ক।
মদরিচের এটি চতুর্থ বিশ্বকাপ। ২০০৬ সালে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো খেলেছিলেন তিনি। জাপানের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বের ম্যাচে বদলি হিসেবে মাঠে নেমেছিলেন মদরিচ। কোয়ার্টার ফাইনালে ব্রাজিলের বিপক্ষে যে পারফরমেন্স দেখিয়েছেন মদরিচ তা সত্যি অবাক করে দিয়েছে সবাইকে। এই বয়সে ১২০ মিনিট খেলে দলকে টাইব্রেকারে নিয়ে জিতিয়েছেন এই ক্লাসি মিডফিল্ডার। আর এই ম্যাচের পরপরই রব উঠে যায় তাকে আরও কয়েক বছর দরকার জাতীয় দলের। সত্যি লুকার সার্ভিস দেওয়ার ক্ষমতা আছে। এবারের বিশ্বকাপে সাদামাটা দল নিয়ে সেমিতে উঠে চমকই জাগিয়েছে দালিচের দল।
দলের সিংহভাগ সাফল্যের পেছনে মদরিচের পরিশ্রমী ফুটবল অপরিসীম। দলের রিমোট কন্ট্রোলের ভূমিকা পালন করে থাকেন তিনি। গোল করার চাইতে গোল করানোটাই তার নেশা। সেমিফাইনালে আর্জেন্টিনার কাছে হেরে টানা দ্বিতীয়বারের মতো স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে ক্রোয়েশিয়ার। সেমিতেও আর্জেন্টাইদের বিপক্ষে দারুন লড়াই করেছে মদরিচের দল।
মরক্কোর বিপক্ষে স্থান নির্ধারনী ম্যাচটাই হতে পারে লুকার জীবনে শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। আবার নাও হতে পারে। রয়েছে এটা নিয়ে ধোঁয়াশাও। বিশ্বকাপ শুরুর আগে ফিফাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে লুকা মদরিচ বলেছিলেন, ‘আমি নিজের বয়স নিয়ে সচেতন। এই বয়সে এসে বুঝতে পেরেছি ক্রোয়েশিয়ার জাতীয় দলে আমার এটাই শেষ প্রতিযোগিতা হতে চলেছে।’
বিশেষ করে লুকার মতো একজন সৃষ্টিশীল ফুটবলার যে দলে আছেন, সেই দলের সমর্থকরা ভালো কিছু আশা করতেই পারেন। বয়স ৪০ এর কাছাকাছি হলেও খেলায় তার কোন প্রভাব নেই। লুকা মদ্রিচ এখনো ২৭ বছরের যুবকের মতো মাঠে বিচরণ করেন। প্রতিপক্ষে ডিফেন্স ভেঙ্গে গোলের যোগানদাতা হিসেবে মদ্রিচের কোন জুড়ি নেই।
লুকা মদ্রিচ কেবল নিজেই সেরা পারফরমার নন। তিনি দলে থাকা তরুণদের জন্যও অনুপ্রেরণা। দলের নতুন খেলোয়াড়দের কাছে রোলমডেল হিসেবেই তিনি কাজ করছেন। তাকে নিয়ে তাই দলের প্রত্যেক খেলোয়াড়ই বাড়তি কিছু আশা করে থাকেন। ক্রোয়াটদের ভক্তক‚লরাও তাকিয়ে থাকবে তার দিকে।
শুধু জাতীয় দলেই সফল লুকা বললে ভুল হবে। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সি গায়ে দাপটের সঙ্গে খেলে যাচ্ছেন তিনি বছরের পর বছর। রিয়ালের জার্সি গায়ে জিতেছেন লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ, বিশ্বক্লাব কাপসহ অসংখ্য শিরোপা। রিয়ালের মধ্যমাঠের প্রানই ধরা হয়ে তাকে।
ক্রোয়েশিয়া প্রফেশনাল ফুটবল ক্লাব ডাইনামোর হয়ে ঘরোয়া ফুটবলে অভিষেক হয়েছিল তার ২০০৩ সালে। দীর্ঘ ১৯ বছর ধরে বিভিন্ন দেশের লিগে নিজের ক্যারিশমা দেখিয়েছেন লুকা। ক্রোয়েশিয়া ও বসনিয়ার ক্লাবে খেলে তিনি ২০০৮ সালে যোগ দিয়েছিলেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাবে টটেনহামে। সেখান থেকে ২০১২ সালে তিনি নাম লেখান স্প্যানিশ লা লিগায়। এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি।
কাতার বিশ্বকাপে মদরিচ ৩৭ বছরে যে খেলা খেলেছেন ফুটবল অনুরাগীরা তাকে ২৭ বছরের তরুনই ভাববেন। মরক্কোর বিপক্ষে আজ স্থান নির্ধারনী ম্যাচটি ক্রোয়েশিয়ার এবারের বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ। নিয়মরক্ষার এই ম্যাচে ক্রোয়েটরা মুখিয়ে আছে জেতার জন্য। মদরিচের শেষটা যাতে রাঙাতে পারে তারা। এ পর্যন্ত দেশের জার্সি গায়ে লুকা মদরিচ চারটি বিশ্বকাপসহ আন্তজার্তিক ম্যাচ খেলেছেন মোট ১৬১টি। গোল করেছেন ২৩টি।
সূত্র: আমাদের সময়
এম ইউ/১৭ ডিসেম্বর ২০২২