ব্যবসা

বারবার বাড়ছে গুঁড়া দুধের দাম

শিহাবুল ইসলাম

ঢাকা, ১৭ ডিসেম্বর – গত কয়েক মাসে গুঁড়া দুধের দাম কয়েক দফা বেড়েছে। আমদানি ও প্যাকেটজাত করা দেশীয় কম্পানিগুলো গত এক মাসে প্রতি কেজি গুঁড়া দুধের দাম ১০ থেকে ৫০ টাকা বাড়িয়েছে। ছয় মাসে দাম বেড়েছে ১৩০ থেকে ২১০ টাকা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরকারের নজরদারির অভাবে কম্পানিগুলো যেমন খুশি তেমন দাম বাড়াচ্ছে।

 

আমদানিকারকদের ভাষ্য, আন্তর্জাতিক বাজারে গুঁড়া দুধ ও ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, এলসি খুলতে না পারা এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে গুঁড়া দুধের দামে।
রাজধানীর খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ডানো প্রতি কেজিতে ১৯০ টাকা, ডিপ্লোমা ১৩০ টাকা, ফ্রেশ ২১০ টাকা ও মার্কস ১৩০ টাকা বেড়েছে। ৪০০ kalerkanthoগ্রামের গুঁড়া দুধ ‘মার্কস’ এখন ৪০০ টাকা। ফুল ক্রিম এক কেজির দাম ৮৪০ টাকা, যা এক মাস আগেও ছিল ৭৯০ টাকা। এক বছর আগে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ছিল ৬২০ টাকা। ডিপ্লোমা ৫০০ গ্রামের দাম ৪২৫ টাকা। এক কেজির দাম ৮৫০ টাকা, যা এক মাস আগে ছিল ৮৪০ টাকা। এক বছর আগে ছিল ৬৭০ টাকা কেজি। ফ্রেশ ৫০০ গ্রামের দাম ৪২৫ টাকা। এক কেজির দাম ৮৪০ টাকা, এক মাস আগে ছিল ৮১০ টাকা। এক বছর আগে একই সময়ে সর্বোচ্চ দাম ছিল ৫৯০ টাকা। ডানো দুধ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা কেজি। এক মাস আগে ছিল ৮৫০ টাকা। এক বছর আগে ছিল ৬৮০ টাকা।

একইভাবে বর্ধিত দামে বিক্রি হচ্ছে নেসলে কম্পানির নিডো, ৭০০ গ্রামের দাম ৭০০ টাকা। নান ৪০০ গ্রামের দাম ৯০০ টাকা। আড়ংয়ের ফুল ক্রিম ৪০০ গ্রাম দুধের দাম ৩১০ টাকা। ড্যানিশ কম্পানির ৪০০ গ্রামের দাম ৪০০ টাকা, এক কেজির দাম ৭৯০ টাকা। আমা (ফুল ক্রিম) ৫০০ গ্রামের দাম ৩৮৫ টাকা, এক কেজির দাম ৭৫০ টাকা। স্টারশিপ ৫০০ গ্রামের দাম ৩৭৫ টাকা। প্রাণ ফুল ক্রিম ৫০০ গ্রাম দুধের দাম ৪০০ টাকা।

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সূত্রে জানা গেছে, এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি ডানো দুধের দাম বাড়ানো হয়েছে ৩০.৩৮ শতাংশ, নিউজিল্যান্ড ডেইরির ডিপ্লোমা দুধ ২৭.৪৮ শতাংশ, ফ্রেশ দুধ ৪২.৬১ শতাংশ ও মার্কস ৩৫ শতাংশ।

চট্টগ্রামের কাস্টম হাউস সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরের ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে প্রায় ৩৮ হাজার ১০০ টন গুঁড়া দুধ আমদানি করা হয়েছে। এতে খরচ হয়েছে এক হাজার ২৩২ কোটি ১৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে গত অর্থবছরের (২০২১-২২) একই সময়ে প্রায় ৪২ হাজার ৫১৩ টন গুঁড়া দুধ আমদানিতে ব্যয় হয় এক হাজার ১৮৫ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

গুলশান-১ ডিএনসিসি মার্কেটের জিয়া জেনারেল স্টোরের মালিক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘কম্পানির বিক্রেতারা সপ্তাহ পার না হতেই বাড়তি নতুন দাম নিয়ে আসছেন। এখন যে অবস্থা, সাধারণ বা গরিব মানুষের গুঁড়া দুধ খাওয়ার মতো অবস্থা নেই। ’

একই মার্কেটে কেনাকাটা করতে এসেছিলেন বেসরকারি একটি কম্পানির কর্মকর্তা তাওহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘আগে যেখানে প্রতিদিন খেতাম, সেখানে এক দিন পর পর খাচ্ছি। এতে কিছুটা হলেও সাশ্রয় হবে। ’

আরলা ডানো দুধের বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান আরলা ফুড বাংলাদেশ লিমিটেড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পণ্যের মূল্যমান নির্ধারণ একাধিক বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ নির্দেশকের ওপর নির্ভরশীল থাকে। আন্তর্জাতিক বাজারে দুধের মূল্যসহ সামগ্রিক পরিচালন খরচ বাড়া, মার্কিন ডলারের অপ্রত্যাশিত বিনিময় হার ইত্যাদির কারণে এই মূল্যমান প্রভাবিত হতে পারে।

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর কলাবাগান ও কাঁঠালবাগান এলাকার খুচরা দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গুঁড়া দুধের দাম বাড়ায় ৫০০ গ্রাম ও এক কেজির প্যাকেট কম কিনছে ক্রেতারা। ৫০ ও ১০০ গ্রামের প্যাকেটের চাহিদা বেড়েছে।

কলাবাগানের বশির উদ্দিন রোডে মেসার্স জননী জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘এখন গুঁড়া দুধের ১০০ ও ২০০ গ্রামের প্যাকেট বেশি বিক্রি হচ্ছে। ছোট প্যাকেট প্রতিদিন ১২ থেকে ১৫ প্যাকেট বিক্রি হচ্ছে। ’

কাঁঠালবাগান কাঁচাবাজারে একটি দোকানে ২০০ গ্রামের দুধ কিনছিলেন আহমেদ মোস্তফা। তিনি বলেন, ‘যে দাম, তাতে দিন দিন গুঁড়া দুধ কেনা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বাড়াচ্ছে কম্পানিগুলো। আগে সপ্তাহে ৫০০ গ্রাম কিনতাম। আজ নিলাম ২০০ গ্রামের প্যাকেট। ’

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আমরা গুঁড়া দুধ নিয়ে অনেক অভিযান চালিয়েছি। আমদানিকারকদের জরিমানার আওতায় এনেছি। অফিসে ডেকেও তাঁদের সঙ্গে মিটিং করেছি। গুঁড়া দুধের ক্ষেত্রে সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয় না। এখানে আমদানিকারক যাঁরা পণ্য আনেন, তাঁরাই ঠিক করেন দামটা কত হবে। ’

কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন বলেন, ‘আমরা মনে করেছিলাম, রেগুলেটরি বডি হিসেবে সরকার ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে সবার স্বার্থ রক্ষা করবে। কিন্তু এখানে সরকার ব্যবসায়ীদের যুক্তি পর্যালোচনা না করেই তাঁদের পক্ষে সায় দিচ্ছে। এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। ’

সূত্র: কালের কণ্ঠ
আইএ/ ১৭ ডিসেম্বর ২০২২

Back to top button