নৈতিকতা পুলিশ বিলুপ্ত করার দাবি অস্বীকার বিক্ষোভকারীদের
তেহরান, ০৫ ডিসেম্বর – ইরানের কুখ্যাত নৈতিকতা পুলিশকে বিলুপ্ত করার দাবিকে সোমবার অস্বীকার দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা প্রতিবাদ আন্দোলনকে সমর্থন ও প্রচারকারীরা। তারা জোর দিয়ে বলেছে, এই ধরনের কোনও ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে না এবং সরকারের নারীদের বিধিনিষেধমূলক পোশাকের নিয়মে কোন পরিবর্তন হয়নি।
ইরানের নৈতিকতা পুলিশ হেফাজতে ২২ বছর বয়সী মাহসা আমিনি মৃত্যুর পর দেশটিতে দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে বিক্ষো আব্যহত রয়েছে। যা ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর থেকে সরকারকে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জে পরিণত করেছে।
এই পরিস্থিতিতে ইরানের অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ জাফর মনতাজেরির, শনিবার একটি ধর্মীয় সম্মেলনে নৈতিকতা পুলিশ ইউনিটগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেন। কিন্তু তার মন্তব্য সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে বিক্ষোভকারীরা।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের মতে, নৈতিকতা পুলিশকে তত্ত্বাবধান করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিচার বিভাগ নয়। তবে নৈতিকতা পুলিশ বিলুপ্ত করার বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোন নিশ্চিতকরণ পাওয়া যায়নি। তাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নিশ্চিতকরণ না হওয়ায় এটিকে সত্য বলে মনে করছেন না বিক্ষোভকারীরা।
এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমিরাবদুল্লাহিয়ান মনতাজেরির বক্তব্যের বিষয়ে স্পষ্টভাবে মন্তব্য করেননি এবং বলেছেন, নিশ্চিত হোন যে ইরানে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতার কাঠামোর মধ্যে, যা খুব স্পষ্টভাবে ইরানে বিদ্যমান, সবকিছু খুব ভালভাবে চলছে।
বিক্ষোভকারীদের দাবি, নৈতিকতা পুলিশ বিলুপ্তি সম্পর্কে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি স্পষ্ট বিবৃতি ঘোষণার প্রয়োজন ছিল। এর পরিবর্তে একটি সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেলে এই বক্তব্য, একটি প্রশ্নের তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়া বলে মনে হয়েছিল।
বিক্ষোভকারীরা আরও দাবি করে, নৈতিকতা পুলিশের বিলুপ্তি ইরানের হিজাব নীতিতে কোন পরিবর্তন চিহ্নিত করবে না বরং এটি কার্যকর করার কৌশলে একটি পরিবর্তন হবে ৷
মার্কিন-ভিত্তিক আবদোররহমান বোরোমান্ড সেন্টার রাইটস গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা রোয়া বোরোমান্দ, বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, যারা এখন সরাসরি শাসন পরিবর্তনের দাবি করছে তাদের জন্য ইউনিটগুলি বাতিল করা সম্ভবত খুব কম কার্যকর হবে।
তিনি বলেন, সরকার যদি না নারীদের পোশাকের ওপর সমস্ত আইনি বিধিনিষেধ অপসারণ না করে, নৈতিকতা পুলিশের বিলুপ্তি কেবল একটি জনসংযোগমূলক পদক্ষেপ হবে। কেননা অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো নৈতিকতা পুলিশের কাজ করতে পারে।
আরও পড়ুন, অবশেষে ‘নৈতিকতা পুলিশ’ বিলুপ্ত করল ইরান
উল্লেখ্য, নৈতিকতা পুলিশ যা আনুষ্ঠানিকভাবে গাশত-ই এরশাদ বা ‘গাইডেন্স পেট্রোল’ নামে পরিচিত। ২০০৬ সালে কট্টরপন্থী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদের শাসণামলে নারীদের ‘শালীনতা এবং হিজাবের সংস্কৃতি’ ছড়িয়ে দেয়ার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে মারা যান মাসা আমিনি। ঠিকমতো হিজাব না পরায় ১৩ সেপ্টেম্বর রাজধানী তেহরানে তাকে ইরানের ‘নৈতিকতা পুলিশ’ গ্রেপ্তার করেছিল। পুলিশের হেফাজতে অসুস্থ হয়ে যাওয়ার পর তাকে হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তিনদিন কোমায় থাকার পর মৃত্যু হয় তার। প্রথমে বিক্ষোভ ইরানের কুর্দি অধ্যুষিত উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে শুরু হলেও ক্রমে তা দেশটির ৮০টি শহর ও নগরে ছড়িয়ে পড়ে।
সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল
আইএ/ ০৫ ডিসেম্বর ২০২২