দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট, বিপাকে যাত্রীরা
ঢাকা, ২৮ নভেম্বর – দ্বিতীয় দিনের মতো চলছে নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট। দশ দফা দাবিতে নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘট গত শনিবার মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে। ধর্মঘটের কারণে সব ধরনের যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে ঢাকাসহ সারাদেশের যাত্রীরা পড়েছেন ভোগান্তিতে।
জলপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় কয়েকটি নৌবন্দরে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ রেখে শ্রমিকরা ধর্মঘটে যাওয়ায় আটকা পড়েছে লাখ লাখ টন পণ্য।
নৌযান শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ২০ হাজার টাকা ও কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ ১২ লাখ টাকা নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশসহ ১০ দফা দাবিতে এই ধর্মঘট ডেকেছে নৌযান শ্রমিক সংগ্রাম পরিষদ এবং আটটি নৌযান সংগঠনের জোট বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন।
একই দাবিতে কার্গো বাল্কহেড নৌ শ্রমিক ঐক্যজোটও গতকাল রোববার ভোর ৬টা থেকে অবিরাম কর্মবিরতি শুরু করেছে।
ধর্মঘটের কারণে যাত্রীশূন্য হয়ে পড়েছে দেশের অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচলের মূল কেন্দ্র ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল। দুই শতাধিক লঞ্চের মধ্যে ঢাকা থেকে বিভিন্ন নৌপথে প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৬৫টি লঞ্চ চলাচল করে। তবে আজ পন্টুনে কোনো লঞ্চের দেখা মেলেনি।
সদরঘাট ঘুরে দেখা যায়, নৌ শ্রমিকরা সকাল থেকেই লঞ্চগুলো মাঝ নদীতে সারি করে রেখেছেন। আকস্মিক এই ধর্মঘটের ফলে ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা।
বরিশালের যাত্রী রেজোয়ান রহমান বলেন, ‘ধর্মঘটের খবর আগে জানা ছিল না। ঘাটে এসে জানতে পারলাম। সাথে বয়স্ক মা-বাবা আছেন এখন তাদের নিয়ে কষ্ট করে বাসেই যেতে হবে।’
বরিশালের আরেক যাত্রী মৌমিতা বলেন, হাসপাতালে ১৫ দিন চিকিৎসার পর আজ মাকে নিয়ে বাড়ি ফেরার জন্য সদরঘাট এসে জানতে পারি ধর্মঘট চলছে। এখন এই অবস্থায় মাকে নিয়ে বাসে করে বাড়ি ফিরলে আবার অসুস্থ হয়ে পড়বেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ রেখেছেন লাইটার জাহাজ শ্রমিকরা। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে থাকা বড় জাহাজ থেকে পণ্য খালাস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। দেশের সব নৌঘাট মিলে কার্যক্রম বন্ধ থাকা জাহাজের সংখ্যা প্রায় আড়াই হাজার। এসব জাহাজে এখন আটকে আছে সাড়ে ৯ লাখ টন পণ্য। আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাঁদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মবিরতি চলবে।
বরিশাল ব্যুরো জানায়, নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘটে বরিশালে অভ্যন্তরীণ ১১ রুটসহ ঢাকা-বরিশাল পথে নৌযান চলাচল এবং পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। ফলে গতকাল সকাল থেকে বরিশাল নদীবন্দরসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদীবন্দর ও লঞ্চঘাট থেকে অভ্যন্তরীণ রুট ও ঢাকাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। বিপাকে পড়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের নৌপথনির্ভর যাত্রীরা। অন্যদিকে, লঞ্চ বন্ধ থাকায় সড়কপথে যাত্রীর চাপ কিছুটা বেড়েছে।
খুলনা ব্যুরো জানায়, পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি দুর্ভোগে পড়েছেন খুলনা থেকে কয়রা ও সাতক্ষীরা রুটের লঞ্চের যাত্রীরা।
সূত্র: সমকাল
এম ইউ/২৮ নভেম্বর ২০২২