এশিয়া

জাপানে ১ মাসে ৩ মন্ত্রীর পদত্যাগে বিপাকে প্রধানমন্ত্রী

টোকিও, ২৩ নভেম্বর – তহবিল কেলেঙ্কারি নিয়ে বিতর্কের মুখে রবিবার জাপানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিনোরু তেরাদা পদত্যাগ করেছেন। তার পদত্যাগের ফলে এক মাসের কম সময়ের মধ্যে তৃতীয় মন্ত্রী সরকার ছাড়লেন। এই পদত্যাগ ইতোমধ্যে সমর্থন কমতে থাকা প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।

জুলাই মাসে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে আততায়ীর হাতে নিহতের পর থেকে কিশিদার প্রতি জনসমর্থন কমতে শুরু করে। ওই সময় ক্ষমতাসীন লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি)-এর নেতাদের সঙ্গে ইউনিফিকেশন চার্চ নামের ধর্মীয় গোষ্ঠীর পুরনো ও গভীর সম্পর্কের কথা প্রকাশ্যে আসে।

কিশিদা বরখাস্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমন খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের পর রবিবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মিনোরু তেরাদা পদত্যাগ করেন। সোমবার সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাকিয়াকি মাতসুমতোকে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী।

মাতসুমতোকে নিয়োগের পর সাংবাদিকদের কিশিদা বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গীকারের ভিত্তি হলো জনগণের আস্থা। একজন রাজনীতিক হিসেবে আমাকে নিজের চারপাশের পর্যালোচনা করে জনগণের আস্থা ধরে রাখতে হবে।

তেরাদার পদত্যাগের আগে চলতি সপ্তাহে পরিচালিত এক জনমত জরিপে দেখা গেছে, কিশিদার পক্ষে জনসমর্থন নেমে এসেছে ৩০ দশমিক ৫ শতাংশে। যা অক্টোবরে পরিচালিত জরিপের চেয়ে ২ দশমিক ৬ পয়েন্ট কম।

তেরাদার আগে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার মন্ত্রী দাইশিরো ইয়ামাগিয়া ও আইনমন্ত্রী ইসুহিরো হানাশির পদত্যাগে কিশিদার ভূমিকা সমর্থন করেননি জরিপে অংশ নেওয়া ৫১ শতাংশ মানুষ।

ধর্মীয় গোষ্ঠীটির সঙ্গে সম্পর্কের কারণে ২৪ অক্টোবর পদত্যাগ করেন অর্থনীতি পুনরুদ্ধার মন্ত্রী দাইশিরো ইয়ামাগিয়া। তখন পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং তার পদত্যাগে বিলম্বের জন্য কিশিদা সমালোচনায় পড়েছিলেন। সেই সমালোচনা আরও তীব্র হয় যখন আইনমন্ত্রী ইয়াসুহিরো হানাশি নভেম্বরের মাঝামাঝিতে পদত্যাগ করেন। হানাশি ও তেরাদার পদত্যাগ জাপানের প্রধানমন্ত্রীর জন্য বড় আঘাত কারণ তারা এলডিপিতে তার গোষ্ঠীর সদস্য বলে পরিচিত ছিলেন।

বেশ কয়েকটি তহবিল নিয়ে কেলেঙ্কারিতে নাম ওঠে আসা তেরাদা স্বীকার করেছেন তার একটি সমর্থক গোষ্ঠী তহবিলের জন্য মৃত ব্যক্তির স্বাক্ষরে নথি দাখিল করেছিল।

কিশিদা বলেছেন, পার্লামেন্টারি বিতর্ককে অগ্রাধিকার দিতে তিনি তেরাদার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেছেন। এই পার্লামেন্টারি বিতর্কের মধ্যে রয়েছে মার্চ শেষ হওয়া অর্থবছরের জন্য দ্বিতীয় অতিরিক্ত বাজেট নিয়ে আলোচনা।

২৪ অক্টোবর থেকে রবিবার পর্যন্ত তিন মন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রবিবার কিশিদা বলেছেন, তিনি ক্ষমা চাইতে চান। তার কথায়, ‘আমি খুব দায় অনুভব করছি’।

তেরাদার পদত্যাগ জাপানি প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানকে আরও দুর্বল করতে পারে। এমনিতেই বেশ কয়েকটি সাম্প্রতিক জনমত জরিপের তার সমর্থন ৩০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। এই মাত্রার জনসমর্থন নিয়ে তার রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন কঠিন করে তুলবে।

নির্বাচনি প্রচারণার সময় বন্দুকধারীর গুলিতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী অ্যাবে নিহতের পর এলডিপি নির্বাচনে জয়ী হয় কিশিদার নেতৃত্বে। তখন ধারণা করা হয়েছিল, ২০২৫ সালের আগ পর্যন্ত কোনও জাতীয় নির্বাচনের প্রয়োজন হবে না, তিন বছর নির্বিঘ্নে কাটাবেন কিশিদা।

অ্যাবে’র সন্দেহভাজন হত্যাকারী দাবি করেছে, তার মাকে দেউলিয়া করেছে ইউনিফিকেশন চার্চ। তার আরও দাবি, অ্যাবে এই গোষ্ঠীর পক্ষে প্রচার করেছেন। পরে এলডিপি স্বীকার করে দলের অনেক আইনপ্রণেতার সঙ্গে চার্চটির সম্পর্ক রয়েছে। তবে দলটির পক্ষ থেকে সাংগঠনিক যোগসূত্র থাকার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়েছে।

নিহত অ্যাবের জন্য রাষ্ট্রীয় শেষকৃত্য অনুষ্ঠান আয়োজনের বিষয়টিও মেনে নেননি অনেক জাপানি নাগরিক। সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে এই শেষকৃত্য আয়োজন করা হয়েছিল।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
আইএ/ ২৩ নভেম্বর ২০২২

Back to top button