ফুটবল

বিশ্বকাপের ১০ ‘কুখ্যাত মুহূর্ত’

মোস্তফা শামীম

ঢাকা, ১৬ নভেম্বর – দোরগোড়ায় কাতার বিশ্বকাপ। আসরটি নিয়ে খেলোয়াড়, সমর্থক থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের উৎসাহের শেষ নেই। প্রতিবারই বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার আগে আলোচনা হয় আগের আসরগুলো নিয়ে। এবারও পূর্বের বিশ্বকাপ নিয়ে অনেক ঘটনা উঠে এসেছে। যেখানে কুখ্যাত অনেক মুহূর্ত আছে, যা ভক্তদের মনে আলাদাভাবে জায়গা করে নিয়েছে।

নিচে পাঠকদের জন্য আগের বিশ্বকাপগুলো থেকে ১০টি কুখ্যাত মুহূর্ত তুলে ধরা হলো। তালিকাটি ১০ থেকে ১ পর্যন্ত ক্রমভাবে সাজানো হয়েছে।

১০. ল্যাম্পার্ডের ভুতুরে গোল: ঘটনাটি ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের। শেষ ষোলোর ম্যাচে মুখোমুখি হয় জার্মানি ও ইংল্যান্ড। যেখানে ২-১ গোলে পিছিয়ে ছিল ইংলিশরা। সে সময় ইংল্যান্ড তারকা ফ্রাঙ্ক ল্যাম্পার্ডের একটি হেড জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল ন্যয়ারের মাথার ওপর দিয়ে চলে যায়। বলটি ক্রসবারে ক্লিপ করে গোললাইনের ওপর বাউন্স করে। তবে রেফারি জানান, বলটি ভেতরে যায়নি এবং গোলও দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে তখন প্রচুর বিভ্রান্তি ছড়ায়। এই ঘটনার বছর দুয়েক পরেই গোললাইন প্রযুক্তি আসে ফুটবলে।

৯. বিশ্বকাপ থেকে দেশে পাঠানো হয় রয় কিনকে: ২০০২ দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ডের অধিনায়ক রয় কিনকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল কোচ মাইক ম্যাকার্থির সঙ্গে বিবাদে জড়িয়েছেন। তিনি জাপানে দলের অনুশীল ব্যবস্থা ও প্রোগ্রাম নিয়ে সমালোচনা করেছিলেন।

৮. রিভালদোর ডাইভ: ২০০২ দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপ ঘরে তোলে ব্রাজিল। দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন রিভালদো। তবে গ্রুপ পর্বে তুরস্কের বিপক্ষে ম্যাচে বিনা কারণে মাটিতে পড়ে যাওয়ায় তাকে জরিমানা করা হয়। জাপানের হাকান উসসালের একটি শট রিভালদোর হাঁটুতে লাগে। তবে তিনি নাটকীয়ভাবে মুখে হাত দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। যদিও সে সময় উনসালকে লাল কার্ড দেখিয়ে মাঠ থেকে বের করে দেওয়া হয়। যে ম্যাচে ২-১ গোলে জয় পেয়েছিল ব্রাজিল। রিভালদো পেনাল্টি থেকে গোল করে ৮৭ মিনিটে দলের জয় নিশ্চিত করেন।

৭. সুয়ারেজের হ্যান্ডবল: বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে স্বপ্ন দেখছিল ঘানা। ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের ম্যাচে উরুগুয়ের বিপক্ষে ২-২ গোলে সমতা ছিল। ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ে দারুণ এক আক্রমণ চালায় ঘানা। তবে ঘানার ডমিনিক আদিয়াহর হেড গোললাইনে দাঁড়িয়ে থাকা লুইস সুয়ারেজ হাত দিয়ে ঠেকিয়ে দেন। সুয়ারেজকে লাল কার্ড দিয়ে মাঠ ছাড়া করান রেফারি। তবে সেখান থেকে পাওয়া পেনাল্টি থেকে গোল করতে ব্যর্থ হন আসামোয়াহ গায়ান। তার শট ক্রসবাসে বাউন্স করে চলে যায়। সুয়ারেজ টানেলে দাঁড়িয়ে দৃশ্যটি দেখেন ও আনন্দে মেতে ওঠেন। পরে টাইব্রেকারে ৪-২ গোলে হেরে যায় উরুগুয়ে।

৬. রাইকার্ডের থুথু: ১৯৯০ বিশ্বকাপের শেষ ষোলোর ম্যাচে মুখোমুখি পশ্চিম জার্মানি ও নেদারল্যান্ডস। তবে এই ম্যাচটি ডাচ তারকা ফ্রাঙ্ক রাইকার্ডের থুথু নিক্ষেপের জন্য কুখ্যাত হয়ে আছে। তিনি জার্মানির রুডি ভোলারকে থুথু নিক্ষেপ করেন। পরে দুজনকেই লাল কার্ড দেখানো হয়। পশ্চিম জার্মানি ম্যাচটি ২-১ ব্যবধানে জেতে ও বিশ্বকাপ শিরোপাও ঘরে তোলে।

৫. সুয়ারেজের কামড়: ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে এক বাজে কাণ্ডই ঘটিয়ে ফেলেন লুইস সুয়ারেজ। ইতালির বিপক্ষে ম্যাচে প্রতিপক্ষের জর্জিনো চিয়েলিনিকে কামড় মেরে বসেন উরুগুয়ের তারকা। তবে কামড় মেরে তিনি নিজেই দাঁতে ব্যথা পেয়েছেন এমন ভান করেন। তবে সে ম্যাচে তাকে লাল কার্ড দেখানো হয়নি। উরুগুয়ে ম্যাচটি ১-০ গোলে জিতে নেয়। তবে পরে প্রমাণ হওয়ায় সব ধরনের ফুটবল থেকে ৪ মাস নিষিদ্ধ হন সুয়ারেজ।

৪. ম্যারাডোনার মাদক কাণ্ড: ১৯৯৪ বিশ্বকাপে নিষিদ্ধ মাদক ইফেডরিনে পজিটিভ হন দিয়েগো ম্যারাডোনা। যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত আসরটি থেকে পরে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়।

৩. ম্যারাডোনার ‘হ্যান্ড অব গড’: ১৯৮৬ মেক্সিকো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছিল আর্জেন্টিনা ও ইংল্যান্ড। তবে ম্যাচে জোড়া গোল করে আর্জেন্টিনাকে ২-১ ব্যবধানে জেতান ম্যারাডোনা। তার দ্বিতীয় গোলটি শতকের সেরা গোল হিসেবে ধরা হয়। তবে প্রথম গোলটি যেমনি কুখ্যাত তেমনি বিস্ময়জাগানিয়া। ইতিহাসে এই গোলটিকে ‘হ্যান্ড অব গড’ হিসেবে বলা হয়। ইংলিশ গোলরক্ষক পিটাল শিলটন বল ধরার জন্য এগিয়ে এসেছিলেন। তবে ম্যারাডোনা ওপরে লাফ দিয়ে হাত দিয়ে গোলটি দেন। কিন্তু রেফারির নজরে তা আসেনি। ইংল্যান্ড বিদায় নেয়, আর আর্জেন্টিনা শেষ পর্যন্ত শিরোপা ঘরে তোলে।

২. জিদানের গুঁতা: আগেই ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন ২০০৬ জার্মানি বিশ্বকাপ শেষে অবসরে যাবেন। তবে আসরটি ফাইনালে ঘটিয়ে বসেন এক অদ্ভুত কাণ্ড। যদিও ইতালির বিপক্ষে ম্যাচের শুরুতে তার পেনাল্টি গোল থেকে এগিয়ে ছিল ফ্রান্স। কিন্তু মার্কো মাতেরাজ্জি গোল করে ইতালিকে সমতায় ফেরান। তবে মাতেরাজ্জি অতিরিক্ত সময়ে অপমানজন কথা বলে জিদানকে খেপিয়ে দেন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জিদান মাতেরাজ্জির বুকে মাথা দিয়ে গুঁতা মেরে বসেন। এই ঘটনায় জিদানকে লাল কার্ড দেখানো হয়। টাইব্রেকারে ইতালি ৫-৩ গোলে জিতে শিরোপা ঘরে তোলে।

১. দলের বাইরে রোনালদো: ১৯৯৮ বিশ্বকাপে তারকা ফুটবলার ছিলেন ব্রাজিলের রোনালদো। তবে পুরো টুর্নামেন্ট খেললেও ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালের কয়েক ঘণ্টা আগে অজানা কারণে তার ম্যাচে না থাকার বিষয়টি জানানো হয়। যদিও পরে বলা হয়েছে তিনি সুস্থ ছিলেন না। তাকে হাসপাতালেও নেওয়া হয়। পরে ম্যাচের শেষ মিনিটে তাকে মাঠে নামানো হয়। তবে ম্যাচটি ৩-০ গোলে জিতে প্রথমবার শিরোপা জেতে ফ্রান্স।

সূত্র: আমাদের সময়
আইএ/ ১৬ নভেম্বর ২০২২

Back to top button