ইসলাম

মসজিদ নির্মাণে অন্তর পরিবর্তন

মসজিদ তৈরি ও উন্নয়ন ভালো কাজ। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও তাকওয়ার ভিত্তিতে মসজিদ নির্মাণের কথা কোরআনে বলা হয়েছে। আজ আমরা মসজিদ নির্মাণ করছি কিন্তু অভাব রয়েছে তাকওয়ার। মসজিদের মাইকে মুয়াজ্জিনের সুরেলা আজান হয়। টয়লেট ও অজু করার স্থানে দামি টাইলস হয়। মাথার ওপরে ঘুরে ফ্যান। মসজিদে ঢুকলেই চোখ জুড়িয়ে যায় হরেক রকমের লাইটের আলোয়। চোখে পড়ে আলোকসজ্জা। দেয়াল বিভিন্ন কারুকাজে সজ্জিত করা। সেখানে খোদাই করা হয় কোরআনের আয়াতের কিছু অংশ। পায়ের নিচে দামি মার্বেল পাথর। নরম কার্পেট বিছানো। যা চোখ রঙিয়ে যায়। ভিতরে প্রবেশে দেহ শীতল হয়ে যাবে অতিরিক্ত এসির বাতাসে। আমাদের কাজই হলো মসজিদকে সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল, চাকচিক্য, এয়ার কন্ডিশন করে পাশের মসজিদ থেকে সুন্দর করা। মসজিদ চাকচিক্যময় ও সাজানোর ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতাও চল বহু ক্ষেত্রে। মসজিদের মিনারের উচ্চতা, মেহরাব সৌন্দর্য বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারুকাজ নিয়ে চলে পার্শ্ববর্তী মসজিদের মুসল্লিদের সঙ্গে বড়াই করা। এটি খুবই দুঃখজনক।

কোরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে জ্ঞানবিহীনরাই থাকে অনেক মসজিদ কমিটিতে। পরহেজগার ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে টাকার জন্য মসজিদ কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখা হচ্ছে এলাকার মাতবরদের। সুদের টাকা দিয়ে হজ করে এসে হচ্ছেন কমিটির সভাপতি। মতের অমিল হলেই পদবি নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ। বিভিন্ন জায়গায় মসজিদ কমিটি নিয়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।

সভাপতি হতে না পারায় হিংসা নিয়ে তৈরি করে অন্য আর একটি মসজিদ। নিজের জমানো কালো টাকা সাদা করার সুযোগ আছে মসজিদ তৈরির মাধ্যমে। তখন আগের সব অন্যায়-অপরাধ মসজিদের নিচে মাটিচাপা পড়ে। মসজিদ তৈরির নামে চলে এক রমরমা ব্যবসা। তাকওয়াবান ইমাম খতিব পর্যন্ত নিয়োগ হয় না। সুরেলা কণ্ঠধারী ইমাম খতিব নিয়োগ করে চলে মসজিদ উন্নয়নের জন্য একরকমের চাঁদা তোলা। অসৎ চিন্তা হাসিল করার জন্য মুনাফেকি করে মসজিদ নির্মাণ অন্যায়। মসজিদ নির্মাণ করার অনুমতি দিয়ে নবীজি সেই মসজিদকে পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। যা আমরা সুরা তওবার ১০৭ নম্বর আয়াতের তাফসিরে জানতে পাই। এ মসজিদটি ধ্বংস করে দাও, জ্বালিয়ে দাও এবং সেটাকে আস্তাকুঁড় বা আবর্জনা ফেলার স্থানে পরিণত কর? যা দ্রুত কার্যকর করা হয়েছিল। এ মসজিদ ইবাদতের জন্য নির্মিত হয়নি। অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। আল্লাহ এ জন্যই কথিত ওই মসজিদকে ‘মাসজিদান জিরারান’ বা ক্ষতির মসজিদ বলে উল্লেখ করেছেন।
মসজিদ নিয়ে গর্ব করাটা কেয়ামতের লক্ষণ। সহিহ বুখারির কিতাবুস সালাত অধ্যায়ে উল্লেখ আছে- ‘হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণনা, লোকেরা মসজিদ নিয়ে গর্ব করবে, কিন্তু ইবাদতের মাধ্যমে তা আবাদ করবে না মুমিন’।

মসজিদ আবাদ করতে হবে আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যের মাধ্যমে। জাঁকজমক নির্মাণ ও চাকচিক্যময় করার মাধ্যমে নয়। সাহাবি হজরত উমার (রা.) মসজিদকে জাঁকজমক করতে নিষেধ করেছেন। যা ফাতহুল বারীর প্রথম খণ্ডে উল্লেখ রয়েছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিছু করাই অপচয়। ধর্মীয় কাজে অপচয় করা মোটেও ঠিক নয়। মসজিদ সাজানোর চেয়ে বেশি প্রয়োজন নিজের মনকে সাজানো। অপরিষ্কার মনমানসিকতা নিয়ে হাজারও সিজদায় আল্লাহকে পাওয়া যাবে না।

আইএ

Back to top button