যুদ্ধজয়ে পুতিনের কূটকৌশল
মস্কো, ০৪ নভেম্বর – ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন গড়িয়েছে ৯ মাসে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাপী দেখা দিয়েছে খাদ্য, জ্বালানি আর গ্যাস সংকট। বেড়েছে জীবনযাত্রার ব্যয়। এ অবস্থায় পরিস্থিতি আরও খারাপ করে বিশ্বকে নিজ নিজ সমস্যা সমাধানে ব্যস্ত রাখতে চান রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যাতে ইউক্রেন ইস্যু বিশ্বের কাছে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। তিনি এটিও প্রমাণ করতে চান, রাশিয়া-ইউক্রেন প্রসঙ্গ কেবলই আঞ্চলিক ছোট সমস্যা, বৈশ্বিক নয়। ইউক্রেন যুদ্ধকে আলাদা গুরুত্ব দেওয়ারও কিছু নেই। বৃহস্পতিবার আলজাজিরায় প্রকাশিত রাশিয়ার রাজনৈতিক বিশ্নেষক এন্টন বারবাসিনের এক নিবন্ধে এসব বিষয় উঠে এসেছে।
বারবাসিনের মতে, বিশ্বের পশ্চিম, পূর্ব ও দক্ষিণের প্রতিটি দেশকেই তাদের নিজস্ব সমস্যা এবং বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় ব্যস্ত রাখতে চায় মস্কো। বিশ্বকে, বিশেষ করে পশ্চিমাদের এটিই বোঝাতে চান পুতিন, ইউক্রেনকে সমর্থন ও সহায়তার খরচ অনেক বেশি, কিন্তু এর গুরুত্ব খুবই কম। এটি সহজভাবে ‘সমতার ভিত্তিতে সংলাপে’ সমাধান করা যেতে পারে।
ইউক্রেনকে বিশ্বের দৃষ্টি থেকে সরাতে নানামুখী সংকট যাতে বিশ্বকে আরও গ্রাস করে সেজন্য নানা কূটকৌশলের আশ্রয়ও নিয়েছেন পুতিন। এর মধ্যে রয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিরুদ্ধে গ্যাস যুদ্ধ থেকে শুরু করে জাতিসংঘের শস্য রপ্তানি চুক্তিকে দুর্বল করা ও বিশ্বে খাদ্য ঘাটতি বাড়িয়ে তোলা। ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে বিশ্বকে বিভ্রান্ত করাই পুতিনের এসব কর্মকাণ্ডের লক্ষ্য।
তবে অনেক কিছুই তাঁর প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। যেমন, কৃষ্ণসাগর দিয়ে ইউক্রেনের বন্দর থেকে খাদ্যশস্য রপ্তানির চুক্তিতে রাশিয়া ফেরার এক দিনের মাথায় ছয়টি শস্যবাহী জাহাজ বন্দর ছেড়েছে। বৃহস্পতিবার ইউক্রেন জানিয়েছে, ২ লাখ ৯০ হাজার টন খাদ্যশস্য বোঝাই জাহাজ ইউরোপীয় এবং এশিয়ার দেশগুলোর উদ্দেশে রওনা হয়েছে। এর আগে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় ওই চুক্তিতে ফেরার কথা বুধবার জানায় রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। রুশ নৌবহরে অন্তত ১৯টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জেরে চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল মস্কো।
এদিকে, খাদ্যশস্য রপ্তানি চুক্তিতে রাশিয়ার ফিরে আসাকে রুশ আগ্রাসনের ব্যর্থতা বলে উল্লেখ করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। একই সঙ্গে তিনি রাশিয়ার এই ইউটার্নকে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবেও দেখছেন। সান্ধ্যকালীন ভাষণে জেলেনস্কি বলেন, শস্য রপ্তানি অব্যাহত থাকবে। এই পিছু হটা রুশ ব্ল্যাকমেইলের ব্যর্থতার প্রমাণ। এগুলো প্রকৃত অর্থে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন। ইউক্রেনের পাশাপাশি রাশিয়ার খাদ্য রপ্তানিকেও সহজ করতে জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভসহ একাধিক শহরে বৃহস্পতিবার ব্যাপক হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ফের জাপোরিঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পাওয়ার গ্রিড থেকে মূল সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দেশটির পারমাণবিক শক্তি সংস্থা এনারগোটম জানায়, রুশ হামলায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের উচ্চমাত্রার লাইনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণেই কেন্দ্রের মূল সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। সংস্থাটি বলছে, হামলার পর শুধু জেনারেটরের সংযোগ সচল আছে। ডিজেলের মজুত আছে মাত্র ১৫ দিনের। ফলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে কেন্দ্রটির ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে। সাম্প্রতিক নৌবহরে হামলার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা জোরদার করেছে মস্কো।
ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যবহারের জন্য উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে আর্টিলারি শেল সরবরাহ করছে বলে অভিযোগ তুলেছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বুধবার বলেন, উত্তর কোরিয়ার অস্ত্রের চালানে ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। রাশিয়াকে অস্ত্র সহায়তা না দিতে আগেই চীনসহ মস্কোর মিত্রদের সতর্ক করে ওয়াশিংটন। এর মধ্যেও ওয়াশিংটন ও কিয়েভ জোরালো দাবি করেছে, মস্কোকে উন্নত প্রযুক্তির ড্রোন সরবরাহ করেছে ইরান। কামিকাজে ড্রোনের সাহায্যে ইতোমধ্যে রাজধানী কিয়েভসহ একাধিক জায়গায় হামলাও চালিয়েছে রুশ বাহিনী। তবে তা অস্বীকার করে আসছে তেহরান।
সূত্র: সমকাল
এম ইউ/০৪ নভেম্বর ২০২২