জাতীয়

দুর্ভিক্ষের কথা বলি মানুষকে ভয় দিতে না, সতর্ক করতে

ঢাকা, ০২ নভেম্বর – সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী একটা সংকট চলছে। এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে ঘোলাটে করা ও সেই ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চলছে। জাতীয় স্বার্থে এই প্রবণতাটা পরিহার করতে হবে। সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।

আজ বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ আহ্বান জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে সম্পূরক প্রশ্নের সুযোগ নিয়ে জাতীয় পার্টির সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু জানান, বৈশ্বিক সংকটের প্রভাব মোকাবেলায় একাত্তরের মতো রাজনৈতিক ঐক্য গড়ে তোলার সম্ভাবনা আছে?

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, যুদ্ধের ভয়াবহতা ও ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে আমি মানুষের কাছে খোলামেলা কথা বলেছি। যদিও অনেকে আমার সমালোচনাও করেছেন। এখানেও কেউ কেউ বলেছে আমি এ ধরনের কথা বললে মানুষ ভয় পেয়ে যাবে। মানুষকে ভয় পাওয়ানোর জন্য না, সতর্ক করার জন্য এবং প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য এটা বলেছি। আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর। আমরা ফসল ফলাব, খাদ্য উৎপাদন করব। আমরা যে পারি, সেটা বিশ্বকে বুঝিয়ে দিয়েছি অনেক ক্ষেত্রেই। ’

প্রশ্নকর্তাকে উদ্দেশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সব দল নিয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বললেন? আমার প্রশ্ন এখানে, দেশ যখন এমন ক্রান্তিলগ্নে পড়ে তখন আমাদের যারা বিরোধী দল আছে, আমি সবার কথা বলছি, তাদের মাঝে ওই উদ্বেগ আমরা দেখিনি। বরং দেখেছি এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অশান্ত পরিবেশ কিভাবে সৃষ্টি করা যায়, সেটাই যেন তারা চেষ্টা করে যাচ্ছে। এটা করাটা কি সমীচীন হচ্ছে? সমীচীন হচ্ছে না। তাহলে ওই অনুভূতিটা কোথায়? অনুভূতিটা থাকতে হবে দেশের পথে। দেশপ্রেমটা থাকতে হবে। আজ সারা বিশ্বব্যাপী ক্রাইসিস। এই সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক অবস্থাকে ঘোলাটে করা আর ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্ট করা, এই প্রবণতাটা পরিহার করতে হবে। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ শুধু মুখে বললে হবে না। নিজের থেকে পাশে দাঁড়াতে হবে। আমরা কিন্তু সবাইকে নিয়ে কাজ করি। আমরা যখন উন্নয়নটা করি, কোন এলাকাটা আমাদের ভোট দিল বেশি আর কোন এলাকা দিল না সে বিবেচনা করি না। জনমানুষের জন্য আমাদের উন্নয়ন। গণমানুষের কথা চিন্তা করে আমরা কাজ করি। ঠিক তেমনি দুর্যোগ মোকাবেলায় আমরা বসে থাকিনি। অনেকে তো সমালোচনা করে যাচ্ছেন। বক্তৃতা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু একমুঠো চাল দিয়ে বা পানি থেকে কাউকে উদ্ধার করতে দেখিনি। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় ঐক্যে বিশ্বাস করি। যারা আসবেন তাদের সঙ্গে আমরা কাজ করব। এতে কোনো সন্দেহ নেই। ’

একই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কেবল নয়, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কষ্টে ভুগছে। পণ্যমূল্য পরিবহনের জন্যও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেখান থেকে খাদ্য বা তেল কিনতাম, যুদ্ধের কারণে কিনতে পারছি না। বিকল্প জায়গা খুঁজে বের করছি। সেখান থেকে যাতে আমরা খাদ্য, জিজেল, তেল, সার আনতে পারি সেই ব্যবস্থা করছি। এমনকি এলএনজি আমদানির জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি এবং নিয়েছি। ’

গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, সেই সঙ্গে স্যাংকশন। এই স্যাংকশন দেওয়ার ফলে বিশ্ববাপী অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিয়েছে। সারা বিশ্বের অবস্থাই খুব টালমাটাল। শুধু বাংলাদেশ নয়। বরং বাংলাদেশ অনেক উন্নত দেশের থেকে এখন পর্যন্ত ভালো অবস্থায় আছে বলে মনে করি। ইউরোপ, আমেরিকা, গ্রেট ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের অবস্থা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় প্রতিটি জায়গায় জ্বালানি তেলের অভাব, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য ব্যবস্থা সব জায়গায় লোড শেডিং। গ্রেট ব্রিটেনে বিদ্যুতের দাম ৮০ ভাগ বেড়েছে। তারা সব কিছু রেশন করে দিচ্ছে। সেই পরিস্থিতিতে আমাদের দেশে যাতে প্রভাবটা না পড়ে তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছি। ’

বাজার থেকে পণ্য গায়েব হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু অসাধু ব্যবসায়ী তো আছেই। এই অসাধু ব্যবসায়ীরা নিজেদের আর্থিক লাভের কথা চিন্তা করে, মানুষের দুর্ভোগের কথাটা চিন্তা করে না। এ জন্য তারা অনেক সময় পণ্য লুকিয়ে রাখে এবং কৃত্রিম উপায়ে জিনিসের দাম বাড়ায়। এতে অনেকের ইন্ধনও থাকতে পারে। তবে আমাদের মনিটরিং ব্যবস্থায় তাদের সঙ্গে সঙ্গে খোঁজা হয়, ধরা হয়। ইতিমধ্যে অনেক পণ্য কিন্তু খুঁজে বের করা হয়েছে এবং তা বাজারজাত করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমাদের সব সময় সজাগ দৃষ্টি রয়েছে। ’ এভাবে কোনো না কোনোভাবে পণ্য লুকিয়ে রেখে যারা মূল্যবৃদ্ধির চেষ্টা করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ চলমান থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সূত্র: কালের কণ্ঠ
এম ইউ/০২ নভেম্বর ২০২২

Back to top button